শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে তৎপর প্রশাসন

নীরব প্রকাশ

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২২  

# নির্বাচনের দিন প্রত্যেককেই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বের হতে হবে
# সার্কিট হাউজ ও ডাকবাংলোতে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে স্থান দেওয়া হয়নি : ডিসি
# আমরা সবগুলো কেন্দ্রকেই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি : রিটার্নিং অফিসার
# বিশ্ববাসী দেখবে, ঐতিহ্যবাহী না’গঞ্জের ভোট কতটা সুষ্ঠু হয় : এসপি

 
আজ রোববার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) এর নির্বাচন। আজকের এই নির্বচনের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যাবে অনেক প্রশ্নের উত্তর, অনেক হিসেব নিকেশের ফলাফল। আজকের এই নির্বাচনে সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস। মেয়র হিসেবে ডা. সেলিনা হায়াত আইভী নির্বাচিত হলে এই চেয়ারটিতে আইভীর টানা চারবারসহ মেয়র পদে হ্যাট্রিক জয় হবে। অন্যদিকে এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৮ বছরের কর্তৃত্ব সমাপ্তিসহ নাসিকে নতুন মেয়রের আভির্ভাব ঘটবে। নারায়ণগঞ্জের এই নির্বাচনের এতটাই গুরুত্ব যে শুধু নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি নয়, সারা বাংলাদেশের রাজনীতির চোখই এই নির্বচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর সেই জন্যই এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খেলা হবে বলে অনেক আগে থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে নানা নাটকীয় ঘটনার। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরও এখন পর্যন্ত শান্ত আছে নির্বাচনী পরিবেশ। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার অঙ্গীকার করছেন প্রশাসন। তবে এইবারের নির্বাচনের আরেকটি ব্যতিক্রম হলো এই নির্বাচনের কোন ব্যালট পেপারের প্রয়োজন হবে না। ভোট গ্রহণ করা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে, ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে। এই নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদের জন্য আছেন আওয়ামী লীগের তিনবারের নির্বাচিত ডা. সেলিনা হায়াত আইভী (নৌকা) ও বিএনপি থেকে সদ্য বহিস্কৃত এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি)। এছাড়াও মেয়র পদে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ (হাত পাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (বট গাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবু (ঘোড়া) সহ মেয়র পদের জন্য মোট ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
 
এছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের জন্য ৩৪ জনসহ মোট ১৮২ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে সব মিলিয়ে সর্বমোট ১৮৯ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে ১ জন মেয়র, ২৭জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৯জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরকে বেছে নিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের ১৩৩৩টি বুথে এই ভোট গ্রহণ করা হবে। নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন থেকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য থাকবেন। থাকবেন এছাড়াও আটজন পুরুষ ও চারজন নারী আনসার সদস্য। ২৭টি ওয়ার্ডে পুলিশের ২৭টি ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন। নাসিক নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবেন ৩টি, থাকবে ৬টি চেকপোস্ট, ৭টি টহল টিম ও ২টি স্ট্যাটিক টিম। থাকবেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ১৪ প্লাটুন সদস্য। যার প্রতিটি টিমে পাঁচজন করে সদস্য থাকবেন। নির্বাচনের দিন চলাচলের জন্য প্রত্যেককে তার জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে বের হতে হবে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।
 
নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেন, কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজারেরও বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এই নির্বাচনে আলাদাভাবে কোন কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবগুলো কেন্দ্রকেই বিশেষ বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬জন করে সদস্য ছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবেন।
 
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ এর পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে এখানে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই পরিবেশ কেউ ভঙ্গ করার চেষ্টা করবেন না। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন, তাহলে তাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোট দিতে আসবেন, কোনও বাধা সৃষ্টি হবে না। সারা বিশ্ববাসী দেখবে, ঐতিহ্যবাহী এই নারায়ণগঞ্জের ভোট কতটা সুষ্ঠু হয়। তিনি বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনে কোন কেন্দ্র দখল বা প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। ভোট কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকবে উল্লেখ করে তিনি জানান, নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবিসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবেন।
 
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, এই নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ ভোটাররা এসে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। আমরা প্রত্যেকটি কেন্দ্রকেই গুরুত্ব দিয়েছি এবং চারটি বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করেছি। এখানে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন বিভাগ কাজ করছে, গোয়েন্দা নজরদারি আছে। যারা নির্বাচনকে কলুষিত করতে পারে, তাদের ব্যাপারেও আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোন কেন্দ্রে আগে থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো থাকলে সরকারের পক্ষ হতে তা খুলে ফেলার কোন নির্দেশনা নাই জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানে আছে তা অব্যাহতভাবেই আছে। মেয়র প্রার্থীসহ সকল প্রার্থীদের তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, এক্্িরকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আমাদের পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ও বিডিপি কাজ করছে। আমরা গোয়েন্দা নজরদারিও রেখেছি। সুতরাং সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন নিয়ে আমাদের পক্ষ হতে কোন শঙ্কা নেই। এ সময় তিনি সার্কিট হাউজ কিংবা ডাকবাংলোতে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে স্থান দেওয়া হয়নি বলে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রার্থীদের আশ্বস্ত করেন।

এই বিভাগের আরো খবর