বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সেলিম ওসমানের ফাঁকা বুলি!

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২১  

নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টি বলতে নাসিম ওসনমানকেই বুঝায়। নাসিম ওসমান আজ বেচে নেই। তবে তাঁর আসনে একই দল থেকে প্রার্থী হয়ে তাঁরই ছোট ভাই সেলিম ওসমান বর্তমান সাংসদ হয়েছেন। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে দুই বার নির্বাচিত হয়েছেন। জেলা জাতীয় পার্টির কান্ডারী বলতে সেলিম ওসমানকে বুঝালেও জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীদের জেলায় কোনো নেতা নেই বল্লেই চলে।

 

নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানের সাথে জাতীয় পার্টির বেশ কিছু নেতাদের যোগাযোগ থাকলেও তেমনভাবে নয়। পাছে সেলিম ওসমানের বিরাগ ভাজন হতে হয় এই ভয়ে অনেক নেতা পারভীন ওসমানের সাথে তেমন যোগাযোগ রাখেন না। অপরদিকে পারভীন ওসমান সংসদ সদস্য না হওয়ার কারনে তেমনভাবে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতেও পারেন না। অপরদিকে দিনের পর দিন সেলিম ওসমান জেলা জাতীয় পার্টির অফিস নির্মাণ করার প্রতিশ্রæতি দিলেও,বিগত প্রায় ১০ বছরেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সেই সাথে জেলায় জাতীয় পার্টির চেইন অব কমান্ড নেই বল্লেই চলে। হতাশায় অনেক নেতাকর্মী শুধু মুখে মুখে জাতীয় পার্টির কর্মী বলে নিজেকে পরিচয় দিলেও প্রকৃত পক্ষে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

   
আলহাজ্ব নাসিম ওসমানের মাধ্যমেই নারায়ণগঞ্জে এরশাদের লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টি নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর সময়কালে জেলায় জাতীয় পার্টির প্রভাব ছিলো। তিনি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। জাতীয় পার্টিতে যোগদানের আগে নাসিম ওসমান জড়িত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে  জাতীয় পার্টির হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে  চারদলীয় জোট সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করার লোক ছিল না বল্লেই চলে।  নাসিম ওসমান রাজনৈতিক কারনে ঐ সময়  আত্মগোপনে ছিলেন।

 

এসময় নাসিম ওসমানের কার্যালয়ে তৎকালীন জোট সরকারের লোকজন হামলা চালিয়ে জাতীয় পার্টির অফিসের নাম মুছে সেখানে জিয়া পরিষদ সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেয়। ২০০৩ সালে নাসিম ওসমান পুনারায় নারায়ণগঞ্জে এসে নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টিতে গুছিয়ে নেন। ২০০৮ সালে নাসিম ওসমান মহাজোট সরকারের হয়ে পুনরায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন।  ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য নাসিম ওসমানকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দিল্লিতে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি দেরাদুন যান তিনি। সেখানে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ৩০ এপ্রিল মৃত্যু বরণ করেন। 

 


নাসিম ওসমান তাঁর জীবদ্দশায় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের নিজস্ব ভবনে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। এই অফিস থেকেই জাতীয় পার্টি নেতা বর্তমান নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকর সৃষ্টি। এখান থেকে জাতীয় পার্টির নেতা আকরাম আলী শাহিনের মতো অনেক নেতার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে জেলা জাতীয় পার্টি। এমন মন্তব্য নেতাকর্মীদের। সেলিম ওসমান তাঁর প্রয়াত ভাই নাসিম ওসমানের আসন থেকে উপ-নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তবে জাতীয় পার্টির নেতারা জেলায় তাদের কোনো নেতা পাননি।

 

এর কারন হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, সেলিম ওসমান এক প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসা খুব ভালো বুঝেন। তবে রাজনীতি তিনি তেমন বোঝেন না । জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে গুটি কয়েক লোক নিয়ে বর্তমানে কাজ করছেন তিনি। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের তিনি তেমন কোনো খোঁজও নেন না। জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, সেলিম ওসমান একাধিকবার নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির অফিস করবেন বলে নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই আশ্বাস শুধু আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তিনি তাঁর ব্যাক্তিগত ফান্ড থেকে বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়ণমূলক কার্যক্রম করলেও দলের একটি অফিস করার ব্যাপারে তিনি উদাসীন। নাসিম ওসমান এমনই এক নেতা ছিলেন যিনি কর্মীদের ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু প্রয়াত এই নেতার ভাই সেলিম ওসমান সম্পূর্ন ভিন্ন প্রকৃতির।  

 


নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির একজন নেতা জানান, নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর ভেবেছিলাম তাঁর স্ত্রী পারভীন ওসমান বা  ছেলে আজমেরী ওসমান জাতীয় পার্টির হাল ধরবেন। তবে তা না হয়ে সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির হাল ধরলেন। এতে অনেকে খুশিও হয়েছিলেন। তবে সেই খুশি যে সারা জীবনের অখুশি হয়ে থাকতে হবে তা জেলা জাতীয় পার্টি নেতাদের কেউ কোনদিন ভাবেনি। সেলিম ওসমান কবে জাতীয় পার্টির অফিস করবেন আর কবে আবার নারায়ণগঞ্জে দলটি জেগে উঠবে তা নিয়েও দ্বিধা দ্বন্ধে রয়েছে কর্মীরা। বলা চলে নারায়ণগঞ্জে নামে আছে জাতীয় পার্টি কিন্তু কাজের বেলায় কিছু নেই। নাসিম ওসমানের মতো জাতীয় পার্টির এমন নেতা নারায়ণগঞ্জে আর কখনো হবেনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 
 

এই বিভাগের আরো খবর