শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বজনপ্রীতি-হাইব্রীডদের নিয়ে সোনারগাঁ আ.লীগের প্রস্তাবিত কমিটি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৩  


# ৭১ সদস্যের কমিটির ৬ জনই সাধারণ সম্পাদকের আত্মীয়


সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে ৭১ সদস্যের প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ।

 

 

গত ৫ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভুইয়া, সাধারন সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার এবং সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের যৌথ স্বাক্ষরিত সোনারগাঁ উপজেলার ৭১ সদস্যের একটি পূনাঙ্গ প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদনের জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত মো: শহীদ বাদলের হাতে পৌছে দেন। 

 

 

প্রস্তাবিত কমিটিতে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তারা হলেন, সভাপতি শামসুল ইসলাম ভুইয়া, ৯ জন সহ সভাপতির মধ্যে সিনিয়র সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, জহিরুল হক, আরিফ মাসুদ বাবু, ইসহাক মিয়া, আব্দুল মতিন দুলাল, শহীদুল্লাহ সরকার, ওবায়দুল হক মাষ্টার, অধ্যক্ষ গোলাম মর্তুজা ও আলী আকবর। 

 

 

সাধারন সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার, তিনজন যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম নান্নু, মো: আলী হায়দার। আইন বিষয়ক সম্পাদক ফজলে রাব্বী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বাবুল ওমর বাবু, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক খন্দকার আমিনুল হক, ত্রান ও সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান মোল্লা, দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ দেওয়ান, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক মোস্তফা কামাল নিলু। 

 

 

বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বাবুল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ছগির আহাম্মেদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক কোহিনুর ইসলাম রুমা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ওসমান গনি, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক নেকবর হোসেন নাহিদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মাহাবুব খান, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজিজুল ইসলাম মুকুল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, জাকির হোসেন ও নাসরিন সুলতানা ঝরা, সহ দপ্তর সম্পাদক রফিকুল হায়দার বাবু, সহ প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান আক্তার ও কোষাধ্যক্ষ ফারুক হোসেন ভুইয়া।

 

 

কমিটির সদস্যরা হলেন, আবু জাফর চৌধূরী বিরু, মনির হোসেন, মাহফুজুর রহমান কালাম, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুর রশিদ মোল্লা, হুমায়ূন কবির ভুইয়া, জাহিদ হাসান জিন্নাহ, মাহবুবুর রহমান বাবুল, আল আমিন সরকার, শামসুল আলম শামসু, হা-মীম শিকদার শিপলু, মাহাবুব হোসেন সরকার, শাহাবুদ্দিন শাবু, মারুফ ইসলাম ঝলক, গাজী মজিবুর রহমান, সানজিত হাসনাত, এডভোকেট নুর জাহান, মাহামুদা আক্তার ফেন্সি, মাহাবুবুর রহমান লিটন, আহসান হাবিব টিপু, তাজুল ইসলাম, নুরে আলম খান, মোশারফ হোসেন মেম্বার, মোহাম্মদ হোসাইন, লিটন খান, আব্দুল হালিম, রাশেদ উদ্দিন মঞ্জু, মাহাবুব পারভেজ, সোহাগ রনি, শামসুল আলম, কবির হোসেন, এডভোকেট আমির হোসেন, রাসেল উদ্দিন রাসেল, আতাউর রহমান হৃদয়, ও খাইরুল আলম।

 

 

এদিকে ৭১ সদস্যের কমিটিতে ২২ জন একেবারে নতুন মুখ। আওয়ামী লীগ ও অংগসংগঠনের কোনো পদপদবীতে তারা কখনও ছিলনা। 

 

 

প্রস্তাবিত কমিটিতে স্বজনপ্রীতি করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের পরিবারের ৮ জনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তারা হলেন, তার ছোট ভাই ব্যবসায়ী সানজিত হাসনাত, চাচা মনির হোসেন, আরেক চাচা গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আরিফ মাসুদ বাবু, চাচা মোস্তফা কামাল নিলু, নিকট আত্মীয় আশরাফুজ্জামান, রফিকুল হায়দার বাবু, ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা আবুল মতিন দুলাল।

 

 

সভাপতি শামসুল ইসলাম ভূইয়ার ছেলে মারুফ ইসলাম ঝলক, গত দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির ঘনিষ্ঠ ইউসুফ দেওয়ান। 

 

 

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ কমিটিতে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের কাউকে রাখা হয়নি। উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের ত্যাগী ও প্রবীন কোনো নেতাকে রাখা হয়নি। পুরো ইউনিয়নে মাত্র একজন যুবককে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে ওই যুবক জীবনে কোনো দিন দলের কোনো অংগসংগঠনে ছিলেন না। আওয়ামী লীগ ও অংগসংগঠনের কোনো কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন না করলেও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী সানজিত হাসনাত ও সভাপতি শামসুল ইসলাম ভুইয়ার ছেলে ব্যবসায়ী মারুফ ইসলাম ঝলককে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

 

 

সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা না হয়েও আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের আত্মীয় ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা আব্দুল মতিন দুলালকে সহ সভাপতি করা হয়েছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউপি নির্বাচন করার পরও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবুকে সহ সভাপতি করা হয়েছে।

 

 

এছাড়া গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইউসুফ দেওয়ানকে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। অপর দুই ইউনিয়ন বৈদ্যেরবাজার ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মাহাবুব হোসেন সরকার ও শামসুল আলম শামসুকে সদস্য করা হয়েছে। 

 

 

উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীন নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক মোল্লা জানান, প্রস্তাবিত এ কমিটিতে স্বজন প্রীতি ও অর্থের বানিজ্য হয়েছে। দলের ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। জীবনে কোনো দিন দল না করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে শুধু অর্থের বিনিময়ে শিল্পপতি ফারুক হোসেন ভুইয়াকে কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে। খুনের মামলার আসামী, মাদকের সঙ্গে জড়িত ও বিএনপি ঘরনার ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে। আমরা দলের হাই কমান্ডকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবগত করব।

 

 

তিনি আরও বলেন, আমরা এই প্রস্তাবিত কমিটি বাতিলের দাবিতে তৃনমুল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে তীব্র আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।  

 

 

কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের ইপ-কমিটির তথ্য ও গবেষণা সদস্য এ এইচ এম মাসুদ দুলাল বলেন, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। উপজেলার ত্যাগীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। 

 

 

শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের শামসুল ইসলাম ভুইয়া জানান, নবীন প্রবীনের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে জমা দেওয়া হয়েছে। শিল্পপতি ফারুক ভ্ইুয়া ও আমার ছেলের নাম হাই কমান্ডের নির্দেশে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। ফরিদপুরের বাসিন্দা সহ সভাপতি করা হয়েছে সাধারন সম্পাদকের ইচ্ছা অনুযায়ী কারন ওই ব্যক্তি সাধারন সম্পাদকের আত্মীয়। অর্থের বিনিময়ে কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি।  

 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ভুইয়া জানান, আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের একটি প্রস্তাবিত কমিটি হাতে পেয়েছি। চুড়ান্ত অনুমোদনের আগে অবশ্যই কমিটির সদস্যদের ব্যাপারে খোজঁখবর নেওয়া হবে। বিতর্কিত কেউ কমিটিতে থাকতে পারবেনা।  

 

 

সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছি। গত বছর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সম্মেলনে শুধুমাত্র সভাপতি, সহ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষনা করা হয়েছিল।  এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর