বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

স্বামী হারিয়ে কান্না থামছেনা মমতাজের

অর্ণব হাসান

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২  

 

# ১৫ দিন আগে থেকে হত্যার পরিকল্পনা
# ফজর আলীর মত জনপ্রতনিধি এলাকার অভিশাপ


সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার দৌলত শিকদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি জেলা কৃষকলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। তবে নিহত দৌলত শিকাদারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে গোগনগরের চেয়ারম্যান ফজর আলীর বিচ্ছু বাহিনীর অন্যতম লিডার ও ওই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রুবেল বাহিনী তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় তার স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। যার মামলা নম্বর ৩০।


এদিকে এই ঘটনায় নিহত দৌলত মেম্বারের স্ত্রী মমতাজ বেগম স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তার কান্না যেন থামছে না। স্বামী হত্যার ঘটনা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না।  বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত দৌলত মেম্বারের প্রাণপ্রিয় স্ত্রী মমতাজ বেগম। শোকে বাকরূদ্ধ হয়ে মেয়ে নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। তাদের আহাজারিতে আরও ভারী হয়েছে গোগনগরের আকাশ। সেও যেন কাঁদছে, অনবরত বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায়। দৌলত মেম্বারের স্ত্রীর কান্না কিছুতেই থামছে না। স্বামীর স্মৃতি বার বার স্মরণ করছেন, আর কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।


কান্নার এক পর্যায় তিনি বলেন, আমার স্বামী ঔষধ কেনার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে যাচ্ছিলেন। তখন ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর সামনে গেলে রুবেলের বাহিনী পথ আটকে মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে সিএনজি থেকে জোর করে বের করে মাথায়, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তাকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে আমরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক সক মৃত ঘোষনা করেন। এই বলে আবারো কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কিছুক্ষণ আহাজারির পর মমতাজ বেগম বলেন, 'আমি এ ঘটনার বিচার চাই। সরকারের কাছে বিচার চাই।

 

এসময় তার পাশে নিহত দৌলত মেম্বারের মেয়ে কান্নারত অবস্থায় বলেন, আমার পিতাকে মেরে আমাদের যারা এতি করেছে আমরা তাদের কঠিন বিচার চাই।

 

অন্যদিকে নিহেত দৌলত মেম্বারের স্ত্রী মমতাজ বেগম ২৭ জুন ২১ জনের নাম উল্লেখ্য করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় ১৪৩/৩৪১/৩০২/১৪৯ ধারায় পেনাল কোডে মামলা হয়। এই ঘটনায় ৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার আসামীরা হলেন,  মৃত কাদির মিয়ার ছেলে গোগনগর ইউনিয়নের মেম্বার ১.রুবেল আহম্মেদ,২. ইমরান (৩৪), ৩.রানা (৩০), উভয় পিতা কাশেম, ৪. ডহমু, ৫.শাওন উভয় পিতা  সাইজ উদ্দিন, ৬. মাইন উদ্দিনের ছেলে ফাহাদ, তাওলাদ হোসেন, পিতা: জুলহাস মেম্বার, ৮.নুর হোসেনেরে ছেলে আমির হোসেন, ৯. আহসান উল্লাহর ছেলে রিহান, ১০. এৃত মনিরের ছেলে হাবিব, ১১. ওয়াহাব আলীর ছেলে সাদ্দাম, ১২. দাদনের ছেলে শুভ, ১৩.আশেক আলীর ছেলে আবু কাশেম, ১৪. আলী হোসেনের ছেলে মাসুদ, ১৫.লুৎফর, ১৬.নাজির উভয় পিতা মুল্লুক চান, ১৭. নুর হোসেনের ছেলে রাসেল, ১৮. ওহাব আলীর ছেলে সেলিম, ১৯. সামাদ মিয়ার ছেলে হোসেন, ২০.মোহাম্মদ আলীর ছেলে মাসুদ রানা, ২১.তয়ন, ২২. আনসার। মামলার এজহারে উল্লেখ্য করা হয় ২২ নম্বর আসামী আনাসরের পরিকল্পনা মত দৌলত মেম্বারকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে রুবেল মেম্বারের ভাই রবিনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকায় ধুম্রজাল তৈরী হয়েছে। গতকাল সকালে বাড়িতে তার লাশ আসার কথা ছিল। কিন্তু বিকেলেও লাশ এসে পৌঁছায়নি। তার আগে এলাকায় মাইকিং করা হয় রবিন থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। কিন্তু গত দুই দিন পার হয়ে গেলেও তার লাশ না আসায় এলাকায় ধুম্রজাল তৈরী হয়েছে। তাই পুলিশ প্রশাসনের প্রতি সঠিক তদন্তের দাবী তুলেন স্থানীয় লোকজন।


নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি জানান, দৌলত মেম্বারকে হত্যা করার জন্য ১৫ দিন আগে থেকে রুবেল বাহিনী পরিকল্পনা করেন। তারা বিভিন্নভাবে সুযোগও খুজেন। ওই দিন সুযোগ পাওয়ায় তারা হাত ছাড়া করেন নাই। অন্যদিকে ফজর আলী চেয়ারম্যান চাইলে এই ঘটনা সমাধান করতে পারতেন  কিন্তু তা করতে না পারায় তিনি তার ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তার মত জনপ্রতিনিধি এলাকার জন্য অভিশাপ।


নারায়ণগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আনিচুর রহমান মোল্লা জানান, ঘটনার পরই আমরা মামলা নিয়েছি। সেই সাথে ৩ আসামীকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অভ্যাহত আছে। তবে অপরাধীরা ছাড় পাবে না। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন আছে।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর