শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা থেকে বঞ্চিত জনসাধারণ

সাদ্দাম হোসেন শুভ

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩  

 

# হাসপাতালের প্রধান ফটকে বানানো হয়েছে ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ
# তালাবদ্ধ রয়েছে হাসপাতালের অপারেশন কক্ষ
# শীঘ্রই সমস্যা গুলো সমাধান করা হবে: স্বপন কুমার শর্মা

 

জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে রোগীরা পাচ্ছেন না তাদের কাঙ্খিত সেবা। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নেই। লোকবল অথবা চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। কবে পরিপূর্ণ জনবল মিলবে তা-ও সঠিকভাবে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।  

 

 


হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব ও সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকায় চিকিৎসা ও সেবা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ছে। অ্যানেস্থাসিয়া চিকিৎসক, সহকারী নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট,সহ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ শূন্য রয়েছে। শিশুদের চিকিৎসায় ডপলার স্ক্যান জরূরী হলেও জোড়াতালি দিয়েই চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম।

 

 


স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সিজার ও নরমাল প্রসব করানোর কথা থাকলেও এখন সেটা করা হয় না। প্রতিদিন প্রায় অর্ধ শতাধিক রোগীকে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হতো। কিন্তু জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকার কারণে পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

 

 


সরেজমিনে গিয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখা যায়, বানানো হয়েছে জরার্জীণ একটি ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ অচল হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ। হাসপাতাল ভবনের রোগী দেখা চললেও নামমাত্র ঠান্ডা জ্বরের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তাদেরকে । তালাবদ্ধ রয়েছে হাসপাতালের অপারেশন কক্ষ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগী দেখা হলেও দুপুরের পর জনশূণ্য হয়ে পড়ে হাসপাতালটি। দুই-একজন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ছাড়া আর কারো দেখা মিলেনা।

 

 


হাসপাতালে আগত গর্ভবতী নারী খাদিজা তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই হাসপাতালে ফ্রি তে চিকিৎসা দেয়। আমরা গরীবরা এই কারণেই এখানে আসি। কিন্তু কয়েকমাস ধরে সিজার হয়না। অন্যান্য চিকিৎসাও ঠিক মতো দেওয়া হয় না আর সিজার করতে অন্য হাসপাতালে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়।

 

 

আর প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে যাওয়ার জন্য তারাই আমাদেরকে বলে দেয়। সরকারিতে ব্যবস্থা করতে না পাইরা, আমার প্রাইভেটে সিজার হইছে। কিন্তু বিনা পয়সা চিকিৎসা পাইলে আমাগো মতো মানুষের উপকার হয়। অথচ আমরা এই হাসপাতালে কোন সেবায় পাচ্ছি না।

 

 


হাসপাতালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, গর্ভবতী নারীরা যেকোন সময়ে এখানে সেবা গ্রহণ করতে আসে। যে পরিমাণ রোগী আসে তাদের সেবা দেওয়ার জন্য যে সংখ্যক কর্মচারী প্রয়োজন, সেটা এখানে নেই। সন্তান প্রসব করা হয়, এমন একটা হাসপাতালে পরিচ্ছন্নকর্মী আর আয়া ছাড়া কাজ করাটা সহজ না।

 

 


এছাড়া হাসপাতালে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকের সংখ্যা আরো বাড়ানো দরকার। জরুরী অবস্থায় এইখানের রোগীর অ্যাম্বুলেন্স সেবার প্রয়োজন হলে, প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় থাকতে হয়।

 

 


হাসপাতালের পরিদর্শিকা লাভলী সুলতানা এই বিষয়ে বলেন, আমি অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি ৬ মাসের ছুটিতে আছি তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা সায়রা আক্তার বলেন আমাদের রোগী দেখা সহ অন্যান্য কার্যক্রম চলছে কিন্তু অ্যানেস্থাসিয়া চিকিৎসক না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। তবে মাসে একবার পরিদর্শনে আসেন কর্তৃপক্ষ।

 

 


জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার শর্মা এ বিষয়ে বলেন, আমি এখানে নতুন দায়িত্ব পেয়ে এসেছি। সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রয়োজনীয় জনবলের চাহিদা দেয়া আছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, হয়তো শীঘ্রই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সমস্যা গুলো সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।

এই বিভাগের আরো খবর