বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

হত্যা মামলার আসামী হাটের ইজারাদার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২২  

 

# রুবেলের জামিন নিতে এক জনপ্রতিনিধির দৌড়ঝাঁপ


একদিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ আর উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির কোন দেখা মিলছে না। তার মাঝে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। অন্যদিকে এমন অবস্থায় দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের বড় এ ধর্মীয় উৎসব ঘিরে তাই কোরবানির পশুর হাট সাজাতে ব্যস্ত সময় কাটছে ইজারাদারদের। অথচ এখনো পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে কোন হাট ইজারা দেয়া হয় নাই। কিন্তু সদর উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে বাঁশ গেড়ে হাটের প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যে বাঁশ গাড়া হয়ে গেছে। এখন শুধু হাসলি উঠানোর স্টেজ এবং পশু উঠানো বাকি আছে।

 

এদিকে সদর উপজেলার গোগনগরের এলাকাগুলোতে ঘুরে দেখা যায় কয়েকটি হাটের ইজারা হওয়ার আগেই বাঁশ গেড়ে রেখেছে। তার মাঝে গোগনগর ইউনিয়নের ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু সংলগ্ন পশুর হাট, আল সাবাহ হাট, বাড়ীরটেক হাটের বাঁশ গেড়ে রেখেছে। সেই সাথে পাঠান নগর হাট পিছিয়ে নেই।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোগনগরের বিভিন্ন হাটের ইজারাদাররা ব্যানার-ফেস্টুন করে তাদের হাটের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সেই সাথে পোষ্টারিং করেছে। গোগনগর ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকায় ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু সংলগ্ন বালুর মাঠে হাট গরু ছাগলের বিরাট হাট লিখে ব্যানার করা হয়েছে। এই ব্যনারে লেখা হাটের ইজারাদার রুবেল আহম্মেদ। ব্যনারে আরও লেখা আছে, হাটে বেপারী ভাইদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গরু ছাগলের চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক ডাক্তার রয়েছে। জাল টাকা সনাক্তকরণ মেশিন ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। মাস্ক ও সামজিক দূরত্ব মেনে বেচা কেনা হয়।  


অন্যদিকে ইতোমধ্যে রুবেলকে প্রধান আসামী করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ২৭ জুন হত্যা মামলা হয়েছে। যার মামলা নম্বর ৩০। গোগনগর ইউপির সাবেক মেম্বার দৌলত সিকদারকে ২৬ জুন রাতে ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যার প্রধান আসামী করা হয় রুবেল মেম্বারকে। মামলার এজহারে উল্ল্যেখ্য করা হয় রুবেল রাম দা দিয়ে দৌলত মেম্বারকে কুপিয়ে আহত করে। তার সাথে ২২ থেকে ৪০ জন লোক মিলে দৌলত মেম্বারের উপর হামলা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রুবেল মেম্বার প্রতি বছর কয়লা ঘাট হাটের ইজারা নিয়ে থাকেন। হাটের ইজারা হওয়ার আগে ব্যানার নিয়ে ব্যপক সমালোচনা করেন সচেতন মহল।    


গত রোজার ঈদের পর থেকে গরুর মাংসের দাম, পশুখাদ্যের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সবমিলিয়ে এবারও শেষপর্যায়ে পশুর হাট জমার আশা করছেন বিক্রেতা ও ইজারাদাররা। ঈদের বাকি এখনো দুই সপ্তাহের বেশি। হাটে কোরবানির পশু না এলেও সাজগোজের প্রস্তুতি চলছে। বুধবার (২৯ জুন) গোগনগরে গিয়ে দেখা যায়, হাটের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলছে হাটের বর্ধিতাংশে প্যান্ডেলের বাঁশ লাগানোর কাজ চলছে। কোথাও কোথাও লাইট লাগানোর কাজ চলছে।


নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। বাঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে গরু রাখার শেড। তবে শেডের ওপরে এখনো ত্রিপল বসানোর কাজ শুরু হয়নি। অনেক জায়গা থেকে অপ্রয়োজনীয় কাঁদামাটি অপসারণ করা হচ্ছে। চলছে ওয়াচটাওয়ার, মোবাইল ব্যাংকিং বুথ নির্মাণের কাজও। 


তবে হাটের ভেতরে বাইরে ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে বৃষ্টি হলে এবারও হাঁটু কাদায় নেমে কেনাকাটা করতে হবে ক্রেতাদের। করোনার সংক্রমণ বাড়লেও জ্বর মাপা, সাবান কিংবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা দায়সারা উত্তর দিয়েছেন। ঈদের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে থেকে অস্থায়ী পশুর হাট সাজানোর প্রস্তুতি নেন ইজারাদাররা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, গোগনগর ইউনিয়নের ৮ন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রুবেলের ভাই রবিন ফজর আলী চেয়ারম্যানের সেকেন্ড ইন কমান্ড। রবিন এবং সাইজুদ্দিনের সাথে ওয়েষ্টেজ মাল বিক্রি নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায় উভয় পক্ষের ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে রবিন থাইল্যন্ডে চিকিৎসাধীন আছে।

 

এই ঘটনার জের ধরে ২৭ জুন রাতে দৌলত মেম্বারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত পরিবারের দাবী দৌলত মেম্বার তাদেরকে আপোষ মিমাংসা করার জন্য চেষ্টা করে। তিনি এই ঘটনায় আগে পরে কোন ভাবেই জড়িত নন। অথচ তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে কঠোর শাস্তির দাবী তুলেন। রুবেল মেম্বারের জামিনের জন্য তার এলাকার এক উকিল এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রভাবশালী মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাই প্রশাসন যেন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসমীদের গ্রেপ্তার করে।


এক হাটের ইজারাদার জানান, জাল টাকা শনাক্তের যন্ত্র বসানো হবে। পশু চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীদের দেখতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও রাখা হবে। হাটের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে গাফিলতির সুযোগ নেই। এবারও ঈদের আগে পরের পাঁচদিন পাঁচ শতাংশ হারে হাসিল আদায় করা হবে।শেষ সময়ে জমবে হাট, চাহিদা থাকবে মাঝারি গরুর। সবমিলিয়ে এবারও শেষপর্যায়ে পশুর হাট জমার আশা করছেন বিক্রেতা ও ইজারাদাররা।


এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার রিফাত ফেরদৌসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।এন.এইচ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর