শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হত্যার দায় কার?

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২১  

# ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মেয়রের উপর হামলা, মামলার অগ্রগতি নেই


# ৯ই মার্চ হকারদের তাণ্ডব, শাস্তির আওতায় আসেনি জড়িতরা


# নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতা ও তার অনুসারীরা হকারদের প্রশ্রয় দিচ্ছে


# পরিশেষে হকার নেতা আসাদের শ্যালকের হাতেই হকার খুন  

 

 

একেরপর এক লঙ্কাকাণ্ডের পরও হকারমুক্ত ফুটপাত নিশ্চিত করতে পারছে না প্রশাসন। তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে নগরীর সচেতন মহল। সম্প্রতি শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে জোবায়ের নামে এক হকারকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর নগরবাসীর উদ্বেগ আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। ফুটপাত হকারমুক্ত করতে থানা পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও তা জোরালো হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর ঢিলেমি রয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকেই।

 


সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ৯ই মার্চ বঙ্গবন্ধু সড়কে বসা নিয়ে ব্যপক তাণ্ডব চালায় হকাররা। যাত্রীবাহি গাড়িতে হামলা, বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর এবং সড়কের বিভিন্ন স্থানে অগ্নি সংযোগের মাধ্যমে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হকাররা। ওই ঘটনায় পথচারিসহ পুলিশ সদস্যরাও আহত হয়। এর নেতৃত্ব দেয় হকার নেতা আসাদ। ঘটনাস্থল থেকে আসাদকে আটকের পর ১০ই মার্চ পুলিশের দায়েরকৃত একটি মামলায় আসাদকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সদর মডেল থানা পুলিশের এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে হকার নেতা আসাদসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ এবং ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মোট ২৮০ জনের নামে মামলা করেন।  

 


পরবর্তীতে ওই মামলায় মাত্র চার জন গ্রেফতার হলেও বাকি ২৭৬ জন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এরপরও শহরের ফুটপাতে হকাররা বসতে শুরু করলেও ওই মামলার অজ্ঞাত বা সন্দেহভাজন আসামীদের গ্রেফতারের কোন অভিযান চালাতে দেখা যায়নি থানা পুলিশকে। একটি সূত্রের দাবি, ৯ই মার্চ ওই হামলার ঘটনায় হকার নেতা আসাদের শ্যালক ইকবালও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো। তবে, ইকবালকে ওই মামলায় আইনের আওতায় আনা হয়নি। এরই মধ্যে হকার নেতা আসাদের শ্যালক ইকবালের ছুরিকাঘাতে খুন হলো হকার জোবায়ের।

 


সচেতন মহল বলছে, ১০ই মার্চের ওই মামলায় ইকবালকে আইনের আওতায় আনা হলে হয়তো এই হত্যাকাণ্ডের দুঃসাহস দেখাতে পারতো না ইকবাল। কেবল ইকবালই নয়, ওই মামলার অনেকেই আবারও বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসিয়ে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল। এদিকে, কেবল ৯ই মার্চের হামলার ঘটনাই নয়, এর আগেই বঙ্গবন্ধু সড়কে আস্ফালন দেখিয়েছে হকাররা। বিশেষ করে ২০১৮ সালের ১৬ই জানুয়ারি শহরে হকারদের সাথে যোগসাজসে একটি মহল মেয়র আইভীর উপর হামলা চালায়। মেয়র আইভী সচেতন নগরবাসীকে সাথে নিয়ে হকারমুক্ত ফুটপাত নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেদিনের হামলায় মানবঢালের কারণে মেয়র প্রাণে রক্ষা পেলেও গুরুতর আহত হন। একই সাথে সাংবাদিকসহ মেয়রের সাথে থাকা বহু মানুষও আহত হয়েছিলেন সেদিন। ঐ ঘটনার এখনো কোন অগ্রগতি নেই।

 


এদিকে, ওই ঘটনার নেপথ্যে নারায়ণগঞ্জের এক প্রভাবশালী সাংসদ ও তার অনুসারীরা কলকাঠি নেড়েছেন বলে শহরে কান পাতলেই শোনা যায়। তারা প্রায় সময়ই হকারদের উস্কে দিচ্ছেন বলেও মেয়র সমর্থকরা জানিয়েছেন। তবে, এমন সব ঘটনার পরও বঙ্গবন্ধু সড়ক হকারমুক্ত করা যায়নি। ওই মহলটি সর্বদা হকারদের ছায়া হয়ে আছেন। সেই ছায়া পেয়েই হকাররা নানা সময়ে প্রশাসনের উপরেও আস্ফালন দেখিয়েছে বলে চাউর হচ্ছে। থানা ঘেরাও করাসহ শহরে একেরপর এক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এসব হয়েছে হকার নেতা আসাদের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে। এবার সেই হকার নেতার শ্যালকের ছুরিকাঘাতেই বঙ্গবন্ধু সড়কে বসা হকার জোবায়ের প্রাণ হারিয়েছে।

 


সতেচন মহল মনে করছেন, পূর্বের ঘটনাগুলোর পর পুলিশ হার্ডলাইনে থাকলে অন্তত ফুটপাতে বসা নিয়ে হকার জোবায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকতো না। এক্ষেত্রে আগামীতে যদি পুলিশ প্রশাসন কঠোরতা বৃদ্ধি না করে, তাহলে আরো বড় কোন লঙ্কাকাণ্ড ঘটাতে পারে এই হকাররাই। এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ-জামানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এই বিভাগের আরো খবর