বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাটে দুই ফেরীতে ডাবল ভোগান্তি

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২১  

বন্দরবাসীর ভোগান্তি দুর করার যেন কোন অভিভাবকই নেই। আর এই ভোগান্তির কথা মনে করেই যেন কবি দাউদ হায়দার লিখেছিলেন ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’। বন্দরবাসি মনে করেন, বন্দরে জন্ম নেয়াটাই যেন বন্দর বাসির জন্য সবচেয়ে বড় পাপ। আর সেই পাপের শাস্তি হিসেবেই যেন তারা জনপ্রতিনিধিসহ শহরের প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ে নির্যাতিত হচ্ছে চিরকাল। তেমনি এক ভোগান্তির নাম শীতলক্ষ্যা নদীর হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরীঘাট। যেখানে এক কথার মানুষ হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানও পারেন না তার কথা রাখতে।

 

বন্দরবাসির উপর প্রতিশোধ নিতেই যেন গতকাল থেকে চালু হয়েছে দুইটি ফেরী, আর এতে বন্দরবাসির ভোগান্তি কমার বদলে উল্টো বেড়েছে দ্বিগুণ। শীতলক্ষ্যা নদীর প্রবাহ বন্দর উপজেলাকে নারায়ণগঞ্জ সদরের কাছ থেকে আলাদা করে রেখেছে। আর এর কারণে শহরের সাথে বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় নৌকা। যুগ যুগ ধরে এই নৌকার উপর ভরসা করেই চলাচল করায় জরুরী সবধরণে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বন্দরবাসি। মিল কারখানা, অফিস আদালত থেকে শুরু করে প্রযুক্তির বিভিন্ন সেবা থেকে শহরবাসির তুলনায় হাজার গুণ পিছিয়ে আছে বন্দর। তাদের এমনই দুর্ভাগ্য যে, কাঁচপুর সেতুর উত্তর দিকে একে একে তিনটি সেতু হলেও দক্ষিণে যেখানে মূল শহর সেখানে হয়নি একটিও।

 

বর্তমানে মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর এলাকার যে সেতুটি হচ্ছে, তাও শহরের সাথে বন্দরবাসির যোগাযোগের কোন প্রকার ভূমিকাই রাখতে পারবে না। আর এজন্যই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এর উদ্যোগে প্রায় তিন বছর আগে এই ফেরী চলাচল শুরু হয়। প্রায় এক বছর আগে ফেরী ঘাটটি সেলিম ওসমানের স্নেহভাজন মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনুর মালিকানাধীন আতিফ এন্টারপ্রাইজ ইজারা নেয়। আর তখন থেকেই তাদের আধিপত্য ও স্বেচ্ছাচারিতায় নিষ্পেষিত হচ্ছে বন্দরবাসিসহ ফেরী দিয়ে চলাচল করা যাত্রী সাধারণ। এখান দিয়ে ঘড়ির সময় অনুযায়ী কেউ নদী পাড় হতে পারছেন না।

 

যত জরুরীই হোক না কেন এম্বুলেন্স, ফায়ারের গাড়ি, জরুরী খাদ্য ও ঔষধসহ সবধরণের যানবাহনকে এখানে অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। এখানে কোন প্রয়োজন চলে না। একটি রিকশা রাখার জায়গাও যদি খালি থাকে তবুও ফেরীর ইঞ্জিন চালু হয় না। এখানে যতদিন পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার, শাসন ও শোষনসহ দাদাগিরি না কমবে ততদিন একটি কেন দশটি ফেরী দিলেও কোন লাভ হবে না বলে জানান বিভিন্ন যানবাহনের চালকগণ। এর আগে গত ১৯ মার্চ শুক্রবার বন্দরের মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদ আয়োজিত এক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ সেলিম ওসমান বলেছিলেন, বর্তমানে হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ফেরী ঘাটে একটি ফেরী চলমান রয়েছে, যতদিন পর্যন্ত না ব্রিজ (কদমরসুল ব্রিজ) হবে ততদিন এই ফেরী সার্ভিস চলবে। সেখানে তিনটা চলার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে মানুষের কোন রকম অসুবিধা না হয়।

 

এ সময় তিনি আরো বলেছিলেন, নবীগঞ্জ কদমরসুল ব্রিজ সরকার থেকে সেনশন হয়ে গেছে, এখন শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার। আমরা আশা করি, এই বছরের মধ্যে এর কাজ শুরু হবে। যত করোনাই হোক না কেন, এটার কাজ শুরু করতে হবে। এখানে কোন রাজনৈতিক ফয়দা নেয়া যাবে না। তিনি আশ্বস্ত করে ছিলেন এই বলে যে, সেলিম ওসমান যা বলে, তা করে, যা বলে না, তা করে না। সেলিম ওসমান হারাম খায় না; হারাম খেতেও দেয় না। তিনি বলেন জনপ্রতিনিধিরা ভাল কাজ করে গেলে সবার আগে জান্নাতে পাবেন। এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা কাজ করি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দেখা যায়, ঘাটে ফেরী চলছে দুইটি, কিন্তু যানবাহনে ফেরী পরিপূর্ণ না হলে ছাড়ছেনা ফেরী।

 

পিকআপ চালক আলম জানান, তিনি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার পরিবহন করেন। এখান দিয়ে নদী পার হতে অনেক দেরী হয় বলে তিনি কাঁচপুর ঘুরে যান। আজ থেকে দুইটি ফেরী চালু হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন, আর তাই এখান দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে সেই আগের বিপদে পড়েছেন তিনি। একটি ফেরী ছাড়ার সাথে সাথে তিনি আরেকটি ফেরী পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ফেরী তখন অর্ধেকও লোড হয়নি। প্রায় পৌনে এক ঘন্টা অপেক্ষা করে ফেরী পূর্ণ লোড করে তবেই ইঞ্জিন চালু করেছে। একটি রিকশা রাখার জায়গাও খালি নেয়নি তারা। এমনকি ফেরীর কিছু কিছু স্টাফ বলেছে, আগে একটি ফেরী চলছে, তখন হৈচৈ করেছেন। এখন দুইটি ফেরী চলছে, যানবাহন কম এখন আধা ঘন্টার জায়গায় এক ঘন্টা ফেরীতে বসে আছেন, মজাটা বুজেন।

 

মোটর সাইকেল আরোহী আসলাম জানান, তিনি সোনারগাঁয়ের কাইকারটেক এলাকা থেকে আসেন। এতদিন একবার ফেরী মিস করলে এক ঘন্টার ফের ছিল। এখন আর ফেরী মিস করলে ফেরীর জন্য একঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় না। এখন ফেরীর ওপর এক ঘন্টা বসে থাকতে হয়। যত জরুরীই থাকুক না কেন তাদের কিছু বলা যায় না। এখানকার স্টাফ সব শহরের খানপুর এলাকার, আবার ঘাট নিয়েছে সেলিম ওসমানের কাছের লোক। তারা মানুষের সাথে যে ধরণের খারাপ ব্যবহার করে, তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। যার বলবে তারাই তাদের হাতে লাঞ্ছিত হবে না হয় মার খাবে। তাই বাধ্য হয়েই সহ্য করে নেই, কিংবা বেশী জরুরী হলে কাঁচপুর ঘুরে যাই। আমরা কার কাছে অভিযোগ করবো ? আমরাতো আর এমপি’র কাছে যেতে পারবো না।

 

এ বিষয়ে ফেরী ঘাটের ইজারাদার আতিফ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু বলেন, আমি একটি বিশেষ মিটিংয়ে আছি পরে কথা বলবো।

এই বিভাগের আরো খবর