শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হেডক্লার্কের দাবীকৃত টাকা না দেয়ায় ছাত্রীরা উপবৃত্তির টাকা পায়নি

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২১  

বিকাশে ছাত্রীদের উপবৃত্তি পাঠানো বাবদ টাকা দাবী করেছিলেন স্কুলের হেডক্লার্ক। বেশিরভাগ অভিভাবক টাকা দিলেও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন চল্লিশ-পঞ্চাশজন অভিভাবক। তাই এসব অভিভাবকদের মেয়েদের উপবৃত্তির টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া স্কুল থেকে সম্পন্ন করা হয়নি। অন্যরা উপবৃত্তির টাকা পেলেও পাননি প্রতিবাদ জানানো এসব অভিভাবকরা।

 

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হলেও তিনি এর প্রতিকার করেননি। ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। নগরীর মাসদাইরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর চার ছাত্রীর অভিভাবকরা জানান, তাদের মেয়েরা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তী হলেও গত তিন বছর উপবৃত্তি দেয়া হয়নি। গত বছরের শেষ দিকে উপবৃত্তির টাকা বিক্যাশে পাঠানো হবে জানিয়ে তাদের একটি ফরম ফিলাপ করতে বলা হয়। তারা ফরম ফিলাপ করলে স্কুলের হেডক্লার্ক কাম একাউনটেন্ট এনাম আহমেদ সবাইকে জানান বিক্যাশ একাউন্ট খুলতে ত্রিশ টাকা করে লাগবে। তিনি অভিভাবকদের ত্রিশ টাকা করে তার কাছে দিতে বলেন। কিন্তু উল্লেখিত চার অভিভাবকসহ চল্লিশ-পঞ্চাশজন অভিভাবক টাকা নেয়ার প্রতিবাদ জানান।

 

তারা বলেন, বিক্যাশ একাউন্ট খুলতে কোনো টাকা লাগেনা। আমাদের পুরনো বিক্যাশ একাউন্ট আছে। সেটাতে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মে মাসের শুরু থেকে ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা আসা শুরু করে। দুই দফায় ছয় হাজার দুইশত টাকা আসে। কিন্তু যেসব অভিভাবকরা হেডক্লার্ককে একাউন্ট খুলতে টাকা দেননি তাদের টাকা আসেনি। তারা স্কুলে যোগাযোগ করলে হেডক্লার্ক তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। সপ্তম শ্রেণীর দুই ছাত্রীর মা জানান, আমরা যদিও বিক্যাশ একাউন্ট খোলার জন্য ত্রিশ টাকা দিয়েছিলাম। তারপরেও আমাদের টাকা আসেনি। না আসায় আমরা হেডক্লার্কের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের জানান, ‘ঐটা বিক্যাশ একাউন্ট খোলার খরচ। চা-পানের খরচ না দিলে টাকা কিভাবে আসবে।’

 

পরে দু’জনে আরো একশ টাকা করে দেয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের টাকা চলে আসে। অভিযোগের ব্যাপারে হেডক্লার্ক এনাম আহমেদ এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিক্যাশ একাউন্ট আমরা খুলিনি। এটা বিক্যাশ এর লোকজন খুলে। এখানে আমাদের কোনো ভ‚মিকা নেই। ‘ছাত্রীদের তালিকা তো স্কুল থেকে নেয়। টাকা না দিলে আপনি সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর তালিকা বিক্যাশ কোম্পানীকে দিচ্ছেন না -এমন অভিযোগ রয়েছে’ এর উত্তরে তিনি জেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করতে বলে ফোন রেখে দেন।  

 

অভিভাবকরা উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করলেও আপনি ব্যবস্থা নেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা বেগম বলেন, একজন মাত্র অভিভাবক অভিযোগ করেছেন। আগামী ৫ জুন আমি স্কুলে আসবো। তখন ব্যবস্থা নেবো। তিনি বলেন, হেডক্লার্ক এনাম আহমেদ ভালো মানুষ। তিনি এমন কোনো কিছু করেছেন কিনা তা খোঁজ নিয়ে বলতে হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আবু তালেব এ ব্যাপারে জানান, অভিভাবকরা আমার কাছে অভিযোগ করার পর আমি হেডক্লার্কের সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন চল্লিশ-পঞ্চাশজন ছাত্রী বিকাশের সমস্যার কারণে উপবৃত্তির টাকা পায়নি।

 

তবে অভিভাবকরা আমাকে জানিয়েছে, টাকা না দেয়ায় হেডক্লার্ক তাদের হয়রানী করছেন। বিক্যাশের বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রনে না। তারপরেও আমি চেষ্টা করছি সমস্যার সমাধান করতে। নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার ছাত্রী পড়াশোনা করে। জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করলে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, তিনি অভিযোগটি খোঁজ নিয়ে ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। এখানে কেউ কোনো অনৈতিক কাজ করে থাকলে তার বিরুদ্ধেও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর