শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হেফাজত নেতা মামুনুল হকের নারীকান্ড আ`লীগ ও জাপা মুখোমুখি

মো: আল আমিন, সোনারগাঁ

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২১  

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মামুনুল হকের নারীকা-ের ঘটনার পর মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। দু’দলই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে ও দোষারপ করছে। আওয়ামী লীগ বলছে হেফাজত ইসলামের কর্মীদের কাঁধে বন্দুক রেখে বিএনপি জামায়াত ও জাতীয় পার্টি সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে পার্টি অফিস ভাঙচুর চালিয়েছে। অন্যদিকে, এর প্রতিবাদ করে জাতীয় পার্টির নেতার বলেছেন, নিজেদের দোষ ঢাকতে আরওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির ঘাড়ে চাপাচ্ছে।  জানা গেছে, রয়েল রির্সোটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস ভাঙচুরের প্রতিবাদে গত রবিবার সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা পার্টি অফিসের সামনে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি কায়সার বলেন,  হেফাজত ইসলামের কর্মীদের কাঁধে বন্দুক রেখে বিএনপি জামায়াত ও জাতীয় পার্টি সোনারগায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে পার্টি অফিস ভাঙচুর চালিয়েছে। তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম। তারা বলেন, রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে কেন্দ্র করে সংগঠিত ঘটনার পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভায় নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ হাসনাত সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় পার্টি সম্পর্কে যে বক্তব্য  দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট, কল্পনা প্রসুত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের এই বক্তব্যের মধ্যে সামান্যতম সত্যতা নেই।  হেফাজতের মহাসচিব মামুনুল হককে সোনারগাঁ রয়েল রির্সোটে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা পরিদর্শন করতে গত শনিবার সোনারগাঁয়ে আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, দপ্তর সম্পাদক বিল্পব বড়ুয়া, একে এম শামীম ওসমান এমপি, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, মৃনাল কান্তি এমপি, সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, সদস্য আনোয়ার হোসেন সোনারগাঁয়ে এসে প্রথমে উপজেলা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে তারা হেফাজতের হামলায় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর ভাঙচুর করা বাড়িঘর পরিদর্শন করে সোহাগ রনির বাড়িতে যান।  ভাঙচুর করা বাড়িঘর ও পার্টি অফিস পরিদর্শন শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, সোনারগাঁয়ে ওইদিন যা ঘটেছিল তা একটি নেক্কার জনক ঘঁটনা। সেই ঘঁটনার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা পাকিস্থানের পেতাত্তা হয়ে এখনো বাংলাদেশে বসে ইসলামের নাম বিক্রি করে রাজনীতি করে তারা ইসলামের হেফাজত করতে পারে না।  পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও রয়েল রিসোর্টে ভাঙচুরের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এছাড়া মামলায় ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে তিনটি মামলা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। আর স্থানীয় সাংবাদিক বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলা দায়েরের পর সংগঠনটির সাতকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সহিংসতা ও নাশকতা সৃষ্টির ঘটনায় দায়ের করা মামলার বেশ কয়েকজন আসামি বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনারগাঁয়ে একটি মাদ্রাসায় গোপন বৈঠক করছিল। এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার বৈঠক থেকে রায়হান, হাসান মাহমুদ, ইউনুছ, শরীফ, আবু নাঈম, হাসান মাহমুদ ও রেদওয়ান নামে হেফাজতের সাত সক্রিয় কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সূত্র জানায়, মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়ার সময় হেফাজতের উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকরা লাঠিসোটা হাতে রিসোর্টে ভাঙচুরের পর ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। মুগড়াপাড়ায় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নু ও ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রনির বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর। এসময় হেফাজত কর্মীরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে সড়কে অবস্থান নেন এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।  এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হেফাজত নেতা মামুনুল হকের নারীঘটিত কা-ে ও হেফাজত নেতাদের তান্ডবের ঘটনায়  তিনটি মামলা হয়েছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল বিকালে সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে অবকাশযাপনের জন্য রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে ওঠেন। এ খবরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামুনুল হককে আটক করে অবরুদ্ধ করে রাখে। সন্ধ্যায় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা রয়েল রিসোর্টে হামলা ও ভাঙচুর করে মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। এ সময় হেফাজত নেতাকর্মীরা রিসোটের্রর নিচতলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ভাঙচুর করে এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায় ও পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর করে।
 

এই বিভাগের আরো খবর