শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

হেফাজতে দেখা দিয়েছে কোন্দল 

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২১  

নারায়ণগঞ্জে হেফাজত ইসলামের নেতাদের মধ্যে কোন্দল দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বসহ নানা বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে মত পার্থক্যের দরুণ হেফাজতের নেতাদের মধ্যে এই কোন্দল ফুটে উঠেছে। জানা গেছে, একই দলের হলেও হেফাজত নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান এখন মুখোমুখি অবস্থানে আছেন।

এরই মধ্যে গত ২৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে হরতালে নামা-না নামা নিয়ে হেফাজতের আলোচিত এই দুই নেতার মধ্যে সৃষ্ট কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। এক পর্যায়ে গত ২৯ মার্চ শবে বরাতের রাতে ডিআইটি মসজিদে এক বয়ানে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির ও জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল ঘোষণা দিয়ে তার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। যদিও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় আবারও স্বপদে ফিরে যান মাওলানা আব্দুল আওয়াল।


সূত্র জানায়, গত ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতাল কর্মসূচিতে প্রশাসনের ব্যাপক বাধার মুখে মাঠে নামতে পারেনি মাওলানা আব্দুল আউয়াল। একপর্যায়ে তিনি কর্মীদের শান্ত থাকতে বলে সেখানেই হরতালের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। কিন্তু তা নিয়ে বিরোধীতা করেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানসহ তার অনুসারীরা। একপর্যায়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের স্মরণে দেওভোগে দোয়ার আয়োজন করা হয়। এতে মাউলানা আব্দুল আউয়ালকে ব্যতিরেখেই কেন্দ্র ঘোষিত ওই কর্মসূচি পালন করে ফেরদাউসুর রহমান ও তার অনুসারীরা।


একপর্যায়ে ২৯ মার্চ শবে বরাতের রাতে ডিআইটি মসজিদে ওই বয়ানে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেছিলেন, ‘পুলিশ আমাদের বুঝতেছে না, আমাদের (হেফাজত) অতি উৎসাহী লোকেরাও আমাদের বুঝতে চাইছে না। তাঁরা বলতেছে, হুজুর পুলিশের কমান্ড ভেঙে বের হয়ে গেল না কেন? আমি আর তোমাদের হেফাজতের সাথে থাকব না, আমি মসজিদে থাকব। তোমরা যারা অতি উৎসাহী আছ, তোমরা করো। আমি তোমাদের সাথে থাকব না। এখন আমার বার্ধক্য বয়স, অসুস্থ মানুষ দাঁড়াইতে পারি না, হাঁটতে পারি না। তাই আমি হেফাজতের নেতৃত্ব আর দিব না, কোনো আন্দোলনেও যাব না।’  


আব্দুল আউয়ালের এমন ঘোষণার পরই হেফাজতের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, মূলত মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান অধিক কর্তৃত্ব ফলাতে নানা ভাবেই বিরোধীতা করেছেন আব্দুল আউয়ালের। সম্ভবত ফেরদাউস হেফাজত ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতৃত্বে আসতেই বিরোধীতা করছেন।


অন্যদিকে, মাওলানা আব্দুল আউয়ালের এই ঘোষণার পর দৈনিক যুগের চিন্তায় মুঠোফোনের এক সাক্ষাৎকারে মাউলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেছিলেন, ‘তার (আব্দুল আউয়ালের) সাংগঠনিক জ্ঞ্যান ও দক্ষতা নেই। সাংগঠনিক জ্ঞ্যান থাকলে তিনি এভাবে ঘোষণা দিতেন না। সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিতেন।’


অন্যদিকে, গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি মসজিদে জুমার বয়ানে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন অবস্থা আমরা দেখছি, ওমুক স্থানে গাড়ি ভাঙচুর, উমুক স্থানে আগুন। এ গুলো কারা করছে? এ ঘটনার মধ্যে দু’টি দল আছে। একটি হলো আমাদের বিরুদ্ধে যারা মাঠে কাজ করে। অন্যটি আমাদের মধ্যে অতি উৎসাহিত কিছু মানুষ। যারা আন্দোলন বুঝে না। আফসোস হলো, সেই ষড়যন্ত্রের গভীরতা বুঝতে আমরা ভুল করছি। না বুঝার ফলে সেই ভুলের মাশুল এখন আমাদের দিতে হচ্ছে। অনেকে আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন। কিন্তু আমি আপনাদের কথায় চলবো না। আমাকে আল্লাহ বিবেক দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন। কোরআন হাদিস গবেশনা করার যতটুকু যোগ্যতা দিয়েছেন, আমি সেইটুকু গবেশনা করেই সামনে বাড়বো।’ 


এদিকে, “আমি আপনাদের কথায় চলবো না” এই কথা বলে আব্দুল আউয়াল তার নিজ দলের নেতাদের কথা বুঝিয়েছেন বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল। আউয়ালের এই কথার দ্বারা প্রতীয়মান হয়, হেফাজতের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার  ক্ষেত্রে আব্দুল আউয়ালের সাথে অনেকের মতের বিরোধীতা চলছে।


বোদ্ধা মহল বলছেন, এমনিতেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে মামলার দরুণ বিপাকে পড়েছে হেফাজত। তার মধ্যে অভ্যান্তরীন কোন্দল বা মতপর্থক্য নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়ায় ইসলামী এই সংগঠনটির সাংগঠনিক ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।
 

এই বিভাগের আরো খবর