শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

হোন্ডাবাহিনীর কাছে অসহায় সাংসদ-মেয়র-প্রশাসন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৩  



# একের পর এক অপকর্ম করেও পার পেয়ে যায় তারা


# সেলিম ওসমানের আল্টিমেটাম হালে পানি পায়নি


গত কয়েকমাস শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার পরে রাজনীতির মাঠে ফিরেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন হোন্ডাবাহিনী, হাম্মাজান গ্রুপ এবং ভাইজান গ্রুপসহ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। এমনকি প্রশাসনকে এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে  ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন সেলিম ওসমান।

 

 

তবে সাংসদের এই হুঁশিয়ারি গায়েই মাখেনি হোন্ডাবাহিনী। শহরে তেমন কোন তাণ্ডব না চালালেও জমি দখল নিতে হোন্ডা বাহিনীর পিজা শামীমের নেতৃত্বে গোলাগুলি এবং তাণ্ডব চালানোর ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি এতোটাই নাজুক ছিল বন্দরের ফরাজিকান্দা নাসিম ওসমান সেতু এলাকায় উত্তেজিত জনতা হোন্ডাবাহিনীর চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।

 

 

তবে এরআগে হোন্ডাবাহিনীর তাণ্ডবে বন্দরে জাতীয় পার্টির নেতা মরহুম রাইসুল হকের ছেলে জমির মালিক মনিরুল হক পারভেজ গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া আহত হন আরো ১০ জন। ঘটনার পরপর পিজা শামীমকে আটক করা হলেও ওই এলকায় এখানো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই ঘটনার পর শহর ও বন্দরে আবারো আলোচনায় এসেছে হোন্ডাবাহিনী প্রসঙ্গ।

 

 

 চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সাংসদ সেলিম ওসমান বিকেএমই’র এক অনুষ্ঠানে বলেন, এখন অনেক ব্যবসায়ীর বুক ফাটছে কিন্তু বলতে পারছে না। তাই আমি বলছি, বর্তমানে কিছু উশৃঙ্খল ছেলে-পেলের জন্ম হয়েছে এই নারায়ণগঞ্জে। সেখানে আবার নেতৃত্ব দেওয়া হয়। সেই নেত্রীকে বলা হয় হাম্মাজান।

 

 

হাম্মাজান যেই হোক না কেন, কোন অবস্থায় কোন ব্যবসায়ীর ক্ষতি করা যাবে না। আরেকটা আছে ভাইজান গ্রুপ। মোটরসাইকেল দেওয়া হয়, কে, কবে, কোথায় থেকে মোটরসাইকেল কিনলো, কিভাবে মোটরসাইকেল রাস্তার মধ্যে নামে। কিভাবে বিভিন্ন কারখানায় কারখানায় জুট ব্যবসার সৃষ্টি হয়! দেখেন।

 

 

নতুন নতুন গাড়ি কোথা থেকে আসে, তদন্ত করেন।’ বাধন কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান আরও বলেন, ‘আমি এখনও মরি নাই। ওটা যদি আমার বাপও হয়, কোন রকমের ছাড় দেওয়া হবে না। আপনারা সরাসরি বলতে না পারলে লিখিত ভাবে অভিযোগ বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের কাছে জমা দিবেন।

 

 

কারখানাগুলোতে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখবেন। সেই ২০০০ সালে যে ভাবে শক্ত হয়েছিলেন, সেভাবে শক্ত হন। সাদা পতাকা না, এবার প্রয়োজনে লাল পতাকা নিয়ে আপনাদের সাথে বের হবো। আমরা এত গুলো মানুষ একত্রিত হলে এমন কোন মায়ের বেডা জন্মাইছে, তারা বাহাদুরি করবে। নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাস করবে।

 

 

মোটরসাইকেল বাহিনী চলবে না। সে যদি আমার বাপও হয়, তাহলেও ছাড় দেওয়া হবে না। কোন রকমের ছাড় নাই। কেউ কোন দিন বলবেন না ওসমান পরিবারের সদস্য। হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন এক হয় না। ওসমান পরিবারের ৫টা আঙ্গুলও আলাদা আলাদা রকমের আছে, সবগুলো এক সমান না। সুতরাং, আপনাদের ভয়ের কোন কারণ নাই।

 

 

 এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘এখান থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে আহ্বান করবো, আমার নারায়ণগঞ্জের মানুষ এই কষ্টে থাকতে পারবে না। তারা লম্বা লম্বা চুল রেখে, মোটরসাইকেল দিয়ে গিয়ে, আমার ফ্যাক্টরীর ভিতরে প্রবেশ করে আমার মালিককে ধমকা-ধমকি করবে। আমার জুটের দাম নির্ধারণ করবে। কারা তারা, ব্যবস্থা নিন।’

 

 


এদিকে এর তিনপর ৬ জানুয়ারি  বন্দরে জাতীয় পার্টির নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  সেলিম ওসামন যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি তার পরিবারের দিকেই আঙুল তাক করেছেন বলে মনে করছে এলাকাবাসী। সেলিম ওসমান বন্দরের নানা সেক্টরে অশান্তির নেপথ্যে দুইদিন আগের বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করেছেন।

 

 

সেলিম ওসমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘বন্দরে সন্ত্রাস ছিলো না পুনরায় আবার সন্ত্রাস বেড়ে উঠছে। কোনো মানুষ নাই যার কাছে চাঁদা দাবি করা হয় না। বেবি টেক্সি, রিকশাওয়ালা ও ডিস লাইনের কথা বলেন কোনো এক খান সাহেব এখানে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছেন। আমি কোন দল বুঝি না, ছোট ভাই বুঝি না, বড় ভাই বুঝি না, বাপ বুঝি না।’ তিনি বলেন, বন্দরে কিছু অবৈধ ক্লাব গড়ে উঠেছে।

 

 

আমি জানি কারা করেন। আমি ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি ‘হাম্মা গ্রুপ ও ভাই সাহেব গ্রুপ’। যদি আপনারা মনে করেন তারা ওসমান পরিবার। ওসমান পরিবারের কিন্তু হাতের পাঁচটা আঙ্গুল সমান না। সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে এমন কাজ যদি কেউ করতে আসে, তাহলে সেলিম ওসমানের জীবন গেলে জীবন যাবে, তাদের অস্তিত্ব থাকবে না।

 

 

সেলিম ওসমান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মোটরসাইকেল বাহিনী বলেন, আর আমার বাপ বলেন, বন্দরে কোন রকমের বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া যাবে না। আমাকে জানাবেন কোথায় কে অশান্তি সৃষ্টি করছে। জমি দখল করা যাবে না। আপনারা নাম দেন কে কোন অশান্তি সৃষ্টি করছে। এমনকি আমার চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলররাও যদি কিছু করে তাও জানান।’

 

 


তবে সেলিম ওসমানের হুঁশিয়ারি এবং আল্টিমেটাম দমাতে পারেনি হোন্ডাবাহিনীকে। তারা আরো বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন শহর-বন্দরবাসী। ১৬ মার্চ বন্দরে হোন্ডাবাহিনীর তাণ্ডব আবারো সামনে নিযে আসলো হোন্ডাবাহিনী, হাম্মাজান এবং ভাইজান গ্রুপের কাছে অসহায় এমপি ও প্রশাসনও। কেননা, সাংসদ সেলিম ওসমানের আল্টিমেটামের পরেও এখ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।

 

 


যদিও এরআগে থেকেই হোন্ডাবাহিনী নিয়ে মুখ খুলেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি আলী আহম্মদ চুনকা মিলনায়তনের এক অনুষ্ঠানে হোন্ডা বাহিনী প্রসঙ্গে মেয়র আইভী বলেন, নির্বাচনের বছর চলে আসছে। আগামী একবছর পর নির্বাচন হবে।

 

 

তাই অনেকের এখন টনক নড়েছে অমুক বাহিনী, খান বাহিনী চাই না। হোন্ডাবাহিনী চাই না। নারয়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানের বক্তব্য প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমার কথা হলো ভাই, এই ৪ বছর কি করলেন।

 

 

 আপনারা ৩০ বছর যাবৎ এই শহরকে জিম্মি করে রেখেছেন। হঠাৎ করে মনে হয়েছে এই কথাগুলো বলতে হবে, আর বলছেন।  আপনারা মনে করছেন নির্বাচনের মৌসুমে এই কথা বলে মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়া যাবে। আর মানুষ তাদের ভোট দিয়ে দিবে। না, এই শহর-বন্দরের মানুষ এখন সব বুঝেন।’  

 


নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বারবার হোন্ডাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানালেও অজ্ঞাত কারণে হোন্ডাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন। ১৬ মার্চ বন্দরে তাণ্ডবের পর ডিবি পুলিশের হাতে আটক পিজা শামীম প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের অনুসারী।

 

 

সেলিম ওসমান চলতি বছর ভাইজান ও হাম্মাজান গ্রুপ বলে যেদিকে ইঙ্গিত করেছেন তা তার নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রতি ইঙ্গিত করেই বলেছিলেন বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বন্দরে তাণ্ডবের ঘটনার পর এবার দেখার বিষয় হোন্ডাবাহিনীর বিরুদ্ধে  প্রশাসন কী ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এরআগে গতবছর হোন্ডাবাহিনী শহরের এক পত্রিকা অফিসে হামলা চালানোর পরেও খুব ভারী ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনের। এন.হুসেইন/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর