বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হয় ঋণ, নয়তো প্রনোদনা চায় ব্যবসায়ীরা

শাহজাহান দোলন

প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২১  

#হোসিয়ারী ব্যবসায়ীদের অবস্থা নাজুক 


# পরিবহন খাতে সরকারি প্রনোদনা খুবই জরুরী


# জটিলতার জন্য প্রনোদনা দেয়া সম্ভব নয়


গত বছর দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর থেকেই, এটি প্রতিরোধে সরকার একের পর এক লকডাউন দিয়ে যাচ্ছে। তবে মহামারী প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত এই লকডাউন এখন দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। কারণ এর ফলে ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা খাতে ধস নেমেছে। বাদ যায়নি প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ শহরও।

 

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ছোটবড় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের দাবি, গত ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত চলমাল কঠোর লকডাউনে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তাদের। তবে এ মূহুর্তে জরুরী ভিত্তিতে স্বল্প পরিসরে ঋণ অথবা সরকারি প্রনোদনা পেলে হয়তো এ ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা। এদিকে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বল্প পরিসরে ঋণের বিষয়ে ইতিমধ্যেই এফ.বি.সি.সি.আই সরকারের সাথে আলোচনা করেছে। তবে প্রনোদনার বিষয়টি নানা জটিলতার কারণে আটকে আছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।    

 


বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল এ বিষয়ে বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকার বাইরে কয়েক হাজার মাঝারি এবং ক্ষুদ্র হোসিয়ারী ব্যবসায়ী আছেন। শহরের নয়ামাটি, উকিলপাড়া, দেওভোগ মার্কেটসহ শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় এদের দেশীয় পোশাক তৈরীর প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা হোসিয়ারী ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে এসেছে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে হোসিয়ারীতে কাজ করে কয়েক লাখ শ্রমিক নিজেদের সংসার চালাচ্ছে। তবে গত এক বছর ধরে করোনা আর লকডাউনের জন্যে হোসিয়ারী ব্যবসায়ীদের অবস্থা নাজুক।

 


তিনি বলেন, গত ১ তারিখ থেকে নারায়ণগঞ্জ ও এরপর সারাদেশের যেই লকডাউন শুরু হয়েছে এতে হোসিয়ারী ব্যবসায় রীতিমতো ধস নেমেছে। দূর-পাল্লার যানবাহন ও দেশের পোশাকের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় কোন পাইকার (ক্রেতা) নারায়ণগঞ্জে পোশাক ক্রয় করতে আসছে না। তাই ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ঠিকমতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারছেনা। এতে মালিক ও শ্রমিক দু-জনই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাই এই মূহুর্তে সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ অথবা প্রনোদনা না দেয়া হলে হোসিয়ারী ব্যবসায়ীরা এই কঠিন পরিস্থিতি তেকে বের হতে পারবেনা। আমি দ্রুত এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাহায্য কামনা করছি।

 


এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী বলেন, বোস কেবিনে বসে পরিবহন মালিকদের কোটি কোটি টাকার হিসাব করেন; এমন মানুষের নারায়ণগঞ্জে অভাব নেই। কিন্তু লকডাউনের ফলে আমরা যে কি খারাপ সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি, সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। গত ১ বছর ধরে থেমে থেমে লকডাউনে পরিবহন বন্ধ রেখে আমাদের কোটি কোটি টাকা লস হয়েছে। আমাদের পাশাপাশি আমাদের শ্রমিকদের অবস্থাও খারাপ। মূলত গাড়ি ১দিন বন্ধ থাকলেই আমাদের হাজার টাকা লস। তাই এখন নারায়ণগঞ্জের পরিবহন খাতে সরকারি প্রনোদনা খুবই জরুরী। নইলে আমরা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো না।

 


নারায়ণগঞ্জ জেলা দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি হাসান ইমাম বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৭ হাজার দোকান আছে। এসব দোকানে পোশাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন যিনিসপত্র বিক্রি হয়। তবে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা লকডাউনে মার্কেটগুলো সরকারী বিধি নিষেধের আওয়াতাভুক্ত থাকায় আমরা দোকান মালিকরা মহা বিপদে আছি। সেইসঙ্গে আমাদের দোকানের কর্মচারীরাও টাকার সমস্যায় আছে, কারণ দোকান বন্ধ থাকায় আমরা ঠিকমতো তাদের বেতন দিতে পারছিনা। তাই এখন আমাদের দোকান মালিদের সরকারি প্রনোদনা অথবা সহজ কিস্তিতে ঋণ প্রয়োজন। আশাকরি আমাদের নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজল ভাই এ বিষয়ে কিছু একটা করবেন।

 


জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল বলেন, স্বল্প পরিসরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণের বিষয়ে আমরা ও এফ.বি.সি.সি.আই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে প্রনোদনার বিষয়টি বেশ কিছু জটিলতার জন্যে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ অধিকাংশ ব্যবসায়ী যারা প্রনোদনা আশা করছেন তাদের ট্রেড লাইসেন্সসহ নানা বিষয়ে নিয়ে সমস্যা আছে। তাছাড়া আমাদের কাছেও সকল ব্যবসায়ীদের সুনিদৃষ্ট তালিকা নেই। তাই এটি সম্ভব নয়। তবে করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে আশা করি কিছু একটা করা যাবে।   
 

এই বিভাগের আরো খবর