শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

১০ বছরেও হয়নি মেট্রোপলিটন

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২১  

# প্রতি চার হাজার মানুষের সেবায় একজন পুলিশ !


# ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরই নারায়ণগঞ্জে মেট্রোপলিটন পুলিশ জরুরী : এসপি


# বিধি মোতাবেক প্রস্তাব প্রেরণ করবো : ডিসি


 
প্রথম শ্রেণিভুক্ত জেলা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব সূচকেই এগিয়ে রয়েছে শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ। শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এই জেলা দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও শতগুরুত্ব বহন করছে। শহর থেকে শহরতলীর সর্বত্রই ঘণবসতি। বেসরকারী তথ্য মতে, জেলাজুড়ে অন্তত ৯০ লাখ মানুষের বসবাস। ঢাকার পর নারায়ণগঞ্জ সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা এই জেলা ধনীর তালিকায়ও রয়েছে শীর্ষে। সবমিলিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের ইউনিট থাকার প্রয়োজনীয়তা শতভাগ থাকলেও তা হচ্ছে না।

 

বেসরকারি সূত্র মতে, প্রায় ৯০ লাখ লোকের বসবাস নারায়ণগঞ্জ জেলায়। সিংহভাগই কাজের সূত্রে যাতায়াত করে নারায়ণগঞ্জে। বিপুল সংখ্যক এই মানুষের সেবা দিতে নারায়ণগঞ্জে রয়েছে মাত্র ২২ শ’ ৯৫ জন পুলিশ। এর মধ্যে একজন এসপি, সাতজন অতিরিক্ত এসপি, সাতজন এএসপি, ৬৬ জন ইন্সপেক্টর, ২৩১ জন এসআই ২৭০ জন এএসআই, ১৫১৫ জন কনস্টেবল রয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে প্রায় চার হাজার মানুষের সেবায় রয়েছে মাত্র একজন পুলিশ। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় জেলা পুলিশকে। রাত-দিন কাজ করলেও অপরাধপ্রবণ এ জেলায় ঘটে চলেছে খুন, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ। পুলিশের লোকবল চাহিদাতুল্য না হওয়ায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।

 

তাই এই জেলায় মেট্রোপলিটন পুলিশের ইউনিট করাটা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল। জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশন ঘোষণা হয়েছে। অথচ এখনো গঠন হয়নি মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট। মেট্রোপলিটন না হওয়ায় বাড়েনি পুলিশের জনবল। ফলে একদিকে মানুষ যেমন পুলিশি সেবা শতভাগ পাচ্ছে না, অপরদিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে বর্তমান জেলা পুলিশের পরিশ্রমও বেড়েছে দ্বিগুন। সূত্র জানায়, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। এরপরে সিটি করপোরেশন হয়েছে গাজীপুর ও রংপুরে। পরে মর্যাদা পেলেও গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ পেয়েছে। কিন্তু তালিকাতে থাকলেও ১০ বছর ধরে ঝুলে আছে নারায়ণগঞ্জ মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রস্তাব।

 

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের শুরুতে নারায়ণগঞ্জ মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট গঠনের প্রস্তাব পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। একই সময়ে গাজীপুর, রংপুর ও কুমিল্লা মেট্রোপলিটন পুলিশ করার প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছিলো। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ‘গাজীপুর মহানগরী পুলিশ আইন-২০১৭’ ও ‘রংপুর মহানগরী পুলিশ আইন-২০১৭’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার প্রস্তাব এখনো আলোর মুখ দেখেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী পুলিশে নতুন ৫০ হাজার জনবল বৃদ্ধির যেই উদ্যোগ নিয়েছেন, সেখান থেকে দু’টি মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিটের কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা ছিলো। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মেট্রোপলিটন পুলিশে একজন ডিআইজি, দুইজন অতিরিক্ত ডিআইজি, ছয়জন এসপি, সাতজন অতিরিক্ত এসপি, চারজন এএসপিসহ ১ হাজার ২৪৮ জন জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছিলো। যা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

 

তবে, নারায়ণগঞ্জের প্রশানিক কর্মকর্তারাও বলছেন, গুরুত্ব বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরই নারায়ণগঞ্জ জেলায় মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট করা জরুরী ছিলো। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরই নারায়ণগঞ্জে মেট্রোপলিটন পুলিশ হওয়া অত্যন্ত বাঞ্চনীয়। এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রস্তাবনা দেয়ার পর তা পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে গিয়েছিলো। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে গেলেও তা নাকোচ হয়ে যায়। আমি মনেকরি, নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের মধ্যে অন্যমত বন্দর এবং শিল্পনগরী, এখানে অত্যাধিক কর্মকান্ড এবং যেই পরিমান ঘণবসতি রয়েছে, সেই হিসেবে নারায়ণগঞ্জ ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পরই বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন শহর। এই জেলার পুরোটাই নগরায়ন হয়ে গেছে।

 

সুতরাং নারায়ণগঞ্জের কেবল সদর থানাই নয়, জেলার বেশিরভাগ থানাই মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতায় আসার দাবি রাখে।’ শতগুরুত্ব বহনের পরও এই জেলায় কেন মেট্রোপলিটন পুলিশ হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে একটি চিঠি এসেছিল, সেখানে বলা হয়েছিলো যে, বিভাগীয় শহর না হলে মেট্রোপলিটন পুলিশ হবে না। এই এক কথার মাধ্যমে এটাকে নাকোচ করা হয়। বর্তমানে আমি মনে করি, এখানকার যারা জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তারা সকলে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে বুঝিয়ে বলতে পারে, তাহলে নারায়ণগঞ্জে মেট্রোপলিটন পুলিশ হওয়া সম্ভব।’

 

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যদি আমার কাছে মেট্রোপলিটন করার কোন প্রস্তাব আমার কাছে আসে, তাহলে আমরা আইন এবং বিধি মোতাবেক প্রস্তাব প্রেরণ করবো। তবে, আমার কাছে এখনো পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে কোন প্রস্তাব আসেনি। আর আমার আগে এখানে যিনি জেলা প্রশাসক ছিলেন, তার কাছে কোন প্রস্তাবনা এসেছিলো কিনা, তা আমার জানা নেই। তবে, সাবেক জেলা প্রশাসক যদি কোন চিঠি দিয়ে থাকে, সেটা আমরা রিমাইন্ড করবো। আমাদের যেহেতু জনসংখ্যা বেড়েছে, লোক সংখ্যা বেড়েছে, আমাদের পুলিশের ইউনিট বাড়ানো দরকার। নারায়ণগঞ্জে যেহেতু সিটি করপোরেশন আছে, সেহেতু এখানে মেট্রোপলিটনের গুরুত্ব আছে। এগুলো পর্যালোচনা করে বিস্তারিত বলতে পারবো।’

এই বিভাগের আরো খবর