বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

১৮ মাস পর আজ খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

# নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৮৪৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে


# স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস তবে আতঙ্কও আছে


# শিক্ষার্থীরা জিগজ্যাগ তথা জেড বিন্যাসে ক্লাসরুমে বসেছে


# ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে : জেলা শিক্ষা অফিসার



করোনার কারণে গত বছর থেকে পুরো শিক্ষাপঞ্জি স্তব্ধ হয়ে গেছে। অবশেষে সকল জটলা কাটিয়ে আজ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে পাঠদান শুরু হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের আনন্দ বিরাজ করলেও অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক কাটে নাই। তাদের মাঝে করোনার একটা ভয় রয়েগেছে। কিন্তু অভিভাবকরাও চাননা তাদের ছেলে মেয়েরা পাঠ দান থেকে দূরে থাকুক। সব কিছু বিবেচনা করে সরকার রোববার থেকে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যবিক বিদ্যালয় খুলে দিয়েছে। তাই আজ থেকে শুরু হয়েছে শ্রেনী কক্ষে পাঠ দান।

 


এদিকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিলেও খোলার পর দীর্ঘ বিরতির কারণে শিক্ষার্থীরা সশরীর ক্লাসে এসে স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানতে পারবে, একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানও সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা। এদিকে বিদ্যালয় খোলার পর কীভাবে চলবে সে সংক্রান্ত ১৬ দফা নির্দেশনা প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত আসায় ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রস্তুতি শেষ করেছে। দের বছরে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পরেছে। সেই সাথে অনেক শিক্ষার্থী পড়া লেখার মনোযোগ থেকে দূরে সরে গেছে। তাদের আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে কিছুটা কষ্ট হতে পারে বলে মনে করে শিক্ষাবিদরা। কয়েক শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘ দিন পরে তাদের বন্ধুদের সাথে দেখা হবে। বিদ্যালয়ের  শ্রেণিকক্ষে বসে আগের মত খোস গল্প করতে পারবে। এ জন্য তাদের মাঝে এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে।

 


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজের প্রত্যেকটি কক্ষে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা সহ জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আসবাব, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মাঠের গর্তে মাটি ভরাটসহ ভাঙা দরজা-জানালা মেরামতের চিত্র দেখা গেছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেই সাথে মাঠের ঘাঁস কেটে ছোট করা হচ্ছে। পাশা পাশি বিদ্যালয়ের আশ পাশ পরিস্কার করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখে স্যানিটাইজার ব্যবহার সহ হাত ধোয়ার জন্য সাবনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এসে জেনে যাচ্ছে কার ক্লাস কবে। কোন কক্ষে তাদের ক্লাস হবে তার খবর নিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্কুল কলেজের মাঠ সহ আশ পাশের পরিবেশ সবুজায়ন হয়েছে। সবুজের সমারোহে এক অন্যরকম পরিবেশ।

 


প্রতিষ্ঠান্ গুলোর জন্য শর্ত:  অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কিছু শর্ত দিয়ে দিছে। তা হলো, দৈনিক সমাবেশ বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ দূরত্ব রেখে নিজেদের আসনে বসে হালকা শারীরিক কসরত (পিটি) করবে। কেউ প্রয়োজন মনে করলে পিটি করা থেকে বিরত থাকতে পারবে। শিক্ষার্থীরা জিগজ্যাগ তথা জেড বিন্যাসে বসবে। প্রতি বেঞ্চে একজনের বেশি বসবে না। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একই শ্রেণিকে একাধিক দলে ভাগ করে একাধিক কক্ষে ও একাধিক শিক্ষকের সহায়তায় পাঠদান চালাতে হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম সপ্তাহের ৬ দিন চলবে।

 

পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন আসবে।শ্রেণি কার্যক্রমে দলীয় কাজ ও দু’জনের কাজের মতো সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সষ্টিকারী শিখনকাজ আপতত বাদ রাখতে হবে। একই দিনে একই সময়ে সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার ব্যবস্থা রেখে টিফিন বিরতি ছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টার মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করতে হবে। শিক্ষকরা মাস্ক পরে ক্লাস নেবেন। শিক্ষার্থীদেরও মাস্ক পরা নিশ্চিত করবেন তিনি। এ ছাড়া ক্লাস শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে।

 


এই প্রসঙ্গে কথা হয় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফিয়াদ হোসেনের সঙ্গে। সে বলে, ‘দেড় বছর পর স্কুল যাব। বন্ধুদের সঙ্গে আবার দেখা হবে। স্কুল খুললে বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস করব,সবার সাথে খোস গল্প করবো। বিদ্যালয়ের মাঠে আগের মত এক সাথে সকলে লাইনে দারিয়ে পিটি করবো খুব মজা হবে। মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রুমাইসা নামে এক শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘ দিন পর ক্লাস শুরু হবে। বাসায় থাকতে থাকতে বরিং হয়েগেছি। তা ছাড়া বান্ধবীদের সাথে অনেক দিন দেখা হয় না। কাল থেকে সবার সাথে দেখা হবে এটা শুনে খুল ভালো লাগতাছে। আমরাও পড়া লেখায় আগের মত মনোযোগি হতে পারবো। শহরের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক অভিভাবক জানান, দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় ছেলে মেয়েরা পড়া লেখা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। তাদের পড়ায় মনোযোগি করা শিক্ষকদের অনেকটা কষ্ট হবে। তাছাড়া করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে ছাত্র ছাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে। কেননা শিক্ষার্থীদের যেন করোনায় ছোবল মারতে না পারে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আমরা চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন আর বন্ধ না হয়।

 

নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এটা আমাদের চলমান প্রক্রিয়া সবসময় হয়ে থাকে। তারপরেও যেহেতু ১২ তারিখ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসেবে আমাদের চলমান পক্রিয়ার বাইরে গিয়ে একেবারে ভাল করে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম করছি। যাতে করে কোনো রকমের অপরিস্কার না থাকে। ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিস্কার করার পর স্যাভলন পানি দিয়ে জীবানুমুক্ত করা হচ্ছে।’ পাশাপাশি মাঠের ঘাঁসগুলো বড় হয়েছিল সেগুলো ছোট করে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে ছেলে মেয়েরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দিবে আমরা সে নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবো।’

 


নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, স্কুল খোলার খবরে শিশুরা খুব খুশি। তারা স্কুলে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকেই আবার দলে দলে এসে বিদ্যালয় খোলার খবর শুনে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। অবশ্যই আমরা স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজর দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হবে।

 


সরকারি আই ই টি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাসুদা আক্তার জানান, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুসারে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন শেষ করেছি। রোবার নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ৩ টা ভাগে ক্লাস হবে। পর্যায় ক্রমে তা সোমবার ৮ম শ্রেনী, মঙ্গলবার ৭ম এবং বুধবার ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ক্লাস হবে। এছাড়া শনি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন দশম এবং এস এসসি শিক্ষার্থীদের পাঠ দান হবে। এতে করে আশা করি শিক্ষার্থীরা পড়া শুনার প্রতি আগের মত মনোযোগি হবে।’

 


নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বেলা রানী সিংহ জানান, আমরা সার্বক্ষণিভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রেখে পড়া শুনার প্রতি মনোযোগ রাখার চেষ্টা করেছি। রোববার আমাদের একাদশ - দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সকাল ৮ টায় ক্লাস শুরু হবে। প্রতিটি ভবনের সামনে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য রোবার স্কাউটদের রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন শেষ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন আগের মত পড়া লেখায় মনোযোগি হতে পারে তার জন্য শিক্ষকদের  প্রতি বিশেষ ভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 


জেলা শিক্ষা অফিসার শরীফুল ইসলাম জানান, আমরা পুরো জেলায় ঘুরে দেখেছি নারায়ণগঞ্জে সবকটি প্রতিষ্ঠানে ভালো প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। ২০২১, ২২ সনের এসএসসি,  এইচ এসসি এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস হবে। তাছাড়া যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে তাদের একটা তালিকা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবো। ওই সকল শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের সহযোগিতা করবো।

 


জেলা শিক্ষা অফিসের সুত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৮৪৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে। জেলায় সরকারি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সহ প্রায় ৩০০ টি স্কুল কলেজ মাদরাসা রয়েছে। এছাড়াও ৫৪৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রসঙ্গত, করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। প্রায় আঠার মাস পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে। যা রোববার শেষ হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর