
নারায়ণগঞ্জ কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এখানে জন্ম নিবন্ধনের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। অভিযোগ আছে জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য সরকার কর্তৃক যে নির্ধারিত ফি আছে এখানে তার চেয়েও অনেক বেশি নেওয়া হয়। এমনকি নির্ধারিত টাকার প্রায় ৭ থেকে ৮ গুন বেশি টাকা নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে সরকারি জন্ম নিবন্ধন ফি কত টাকা নির্ধারণ করা আছে সেই বিষয়ে সাধারণ মানুষের স্পষ্ট কোনো ধারণা না থাকায় এখানকার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদেই অতিরিক্ত ফি নেয়া হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তাই ভোগান্তি এড়ানোর জন্য অভিভাবকরা এসব ইউনিয়ন পরিষদের দাবি করা টাকা দিয়েই কাজ সম্পন্ন করতে বাধ্য হয়।
তারপরও তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। টাকা দিলেও যথাযথ সময়ে তাদের জন্মসনদ মিলে না বলে অভিযোগ আসে বিভিন্ন সময়। সার্ভারে সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে টালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করে জনগণকে ভোগানোর অভিযোগও নেহাৎ কম নয়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা যায়, জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি অনুযায়ী শূন্য থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত শিশুদের জন্মনিবন্ধন ফ্রী। ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুদের জন্য ২৫ টাকা এবং ৫ বছরের বেশি হলে ৫০ টাকা করে ফি দিয়ে জন্মনিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধন করার জন্য সকলের কাছ থেকেই ৪০০ টাকা করে ফি আদায় করা হয়ে থাকে বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন জন্মনিবন্ধনের জন্য ইউনিয়নবাসীর কাছ থেকে জন প্রতি ৪০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। শূন্য থেকে শুরু করে বয়স যতই হোক না কেন সবার জন্যই ৪০০ টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে জন্ম নিবন্ধন ফি। ইউনিয়নে কর্মচারীদের কাছে বাড়তি টাকা না দেওয়ার কথা জানালে তারা ৪০০ টাকার কমে হবে না বলে জানিয়ে দেন।
কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদের আবেদন করে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় বাসিন্দা ফাতেমা বেগম জানান, তার ছোট শিশুর বয়স চার বছর, আগামী বছর সেই শিশুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার উদ্দেশ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে ইউনিয়ন অফিসে গিয়েছিলেন তিনি। এখানে জন্মনিবন্ধন করার জন্য ৪০০ টাকা দাবি করেন দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা। ঝামেলার কথা চিন্তা করে ৪০০ টাকা দিয়েই জন্মনিবন্ধন করতে দিয়ে এসেছেন তিনি।
কাশিপুর ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা বাসার মিয়া জানান, কিছুদিন আগে আমি আমার বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করার জন্য ৪০০ টাকা করে দিয়ে এসেছি। তখন আমাদের বাড়ির অনেক বাচ্চার জন্মনিবন্ধন একই সাথে করেছিলাম। সবার কাছে থেকেই ৪০০ টাকা করে ফি নিয়েছে তারা। আর আমরা জানতামই না যে জন্মসনদের সরকারি ফি মাত্র ৫০ টাকা। আমরা কাগজ নিয়ে জমা দেওয়ার পর যত টাকা দাবি করেছে আমরা তা-ই দিয়ে দিয়েছি।
জন্ম নিবন্ধনের বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়ে কাশিপুর ইউনিয়নের সচিব মো. আওলাদ হোসেন জানান, সরকারি ফি ৫০ টাকা হলেও, এখানে উদ্যোক্তা যারা আছেন তাদের তো সরকারি কোনো বেতন নাই। ইউনিয়ন পরিষদের একমাত্র সরকারি লোক আমরা। আর সরকারি বেতন শুধু আমাদের দেওয়া হয়।
বাকি যারা আছেন, যারা জনগণকে সার্ভিস দেয়, (উদ্যোক্তা) এই বাড়তি ফি তাদের জন্য চেয়ারম্যান বরাদ্দ করেছেন। আমাদের লোকবল কম থাকায় এখানে উদ্যোক্তাদের জনসার্থে কাজ করতে হয়। লোকবল কম থাকায় সারা বাংলাদেশেই সরকার উদোক্তাদের বসিয়েছেন। আর ৪০০ টাকা করে ফি দেয়ার বিষয়টা কমানোর জন্য চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই ফি আরো কমানো হবে বলে আশা করি। এস.এ/জেসি