শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

ফতুল্লার জলাবদ্ধতা নিরসনে উদাসীনতা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২৪  

 

 

স্বাধীনতার পর থেকে ফতুল্লার মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগে কাটাচ্ছেন। দীর্ঘ এই সময়ে অনেক জনপ্রতিনিধির ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও স্থানীয় বসবাসরত মানুষের কোন পরিবর্তন হয় নাই। ফতুল্লা অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও অল্প বৃষ্টিতেই বাড়ি ঘর সহ অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যায়। এমনকি অনেক এলাকায় কোমর পানি হওয়ায় তাদেরকে নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়।

 

তাছাড়া নোংরা ময়লা যুক্ত পানি মসজিদে প্রবেশ করায় এবাদত বন্দেগীতেও মানুষের বিগ্ম ঘটে। এমনকি সারা দিন বৃষ্টি আসলে তিন থেকে চার দিন ঘর বন্দি থেকে তার খেসারত দিতে হয়। অনেকের কর্মস্থলে যেতে না পেরে কষ্টে জীবন যাপন করেন। এত কিছুর পরেও জলাবদ্ধাতা নিরসন নিয়ে ফতুল্লার স্থানীয় এমপি থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, মেম্বাররা জনপ্রতিনিধ হয়ে উদাসীনতা রয়েছেন।

 

এনিয়ে তাদের তেমন কোন ভাবনা নেই বললেই চলে। অথচ নির্বাচন আসলে প্রত্যেকেই আশ^াসের বানী শুনান বড় করে। নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে সাথেও তারাও তা ভুলে যান। যা উদাসীনতাকে বুঝায়। ফতুল্লা বাসিও আশার বানি শুনতে শুনতে এখন বিরক্ত হয়ে গেছে। তারা এখন জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চান।


 এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শামীম ওসমান। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা নিয়ে গঠিত তার নির্বাচনী আসন। এর আগেও ১৯৯৬ সনে এই আসনে শামীম ওসমান প্রথম বারের মত এমপি নির্বাচিত হনে।

 

চার বার সংদ সদস্য হয়েও তিনি ফতুল্লার জলাবদ্ধতা নিরসনে তেমন কোন উল্লেখ্য জনক উদ্যোগ নেন নাই। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থেকেও ফতুল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে কোন উন্নত করতে পারে নাই। তাছাড়া স্বাধীনতার পর থেকে ফতুল্লাবাসি প্রতি বছরের বৃষ্টির মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকেন। এখানকার জনপ্রতিনিধির ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও মানুষের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলে না। কবে নাগাত তাদের মুক্তি মিলবে তাও জানেন না স্থানীয়রা।


অপরদিকে বর্ষা না আসতেই ঘুর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ন ও ঘণবসতিপূর্ন জনপদ ফতুল্লা। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ড্রেনগুলোও তলিয়ে গেছে পানির নিচে। ডিএনডি এলাকাসহ ফতুল্লার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও দোকানপাটেও ঢুকেছে বৃষ্টির পানি। এমনকি মসজিদ মাদরাসাও বাদ পড়ে নাই।  

 

এতে করে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন ফতুল্লার কয়েক লক্ষ মানুষ। ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় খালগুলো উদ্ধার ও খনন করা হলেও অভ্যন্তরীন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হওয়ায় ড্রেনগুলোতে পানি নামছে না। এতে খাল পর্যন্ত পানি যাচ্ছে না। ফলে ডিএনডি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেলেও ফতুল্লা সহ আশপাশের অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে রেহায় পাচ্ছে না।


সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টির প্রভাবে গত রোববার দিবাগত গভীর রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। যা বিরামহীন ভাবে সোমবার রাত পর্যন্ত চলা বৃষ্টিতে ফতুল্লা ইউনিয়নের লালপুর, পৌষার পুকুরপাড়, টাগারপাড়, দাপা ইদ্রাকপুর,  এনায়েত নগর ইউনিয়নের ইসদাইর, গাবতলা, কুতুবপুর ইউনিয়নের দক্ষিন সেহাচর, পিলকুনী, নন্দলালপুর সহ প্রায় প্রতিটি জনপদ, কাশিপুর ইউনিয়নের গোয়ালবন্দ, হাট খোলা সহ বিভিন্ন এলাকা,

 

এনায়েতনগর ইউনিয়নের মাসদাইর, আমতলা, সহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোথায় হাঁটু আবার কোথায় জমেছে কোমড় পানি। কোথাও কোথাও বাড়ির নিচতলার রান্না ঘর ও সৌচাগার পানিতে তলিয়েছে। এতে স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও। এমনকি কর্মী জীবিদেরকে কর্মস্থলে বিজে যেতে হচ্ছে। এতে করে অনেকে পানি বাহিত রোগ সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।


ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফাইজুল ইসলাম। তার নির্বাচনে প্রধান ইশতেহার ছিল ফতুল্লার জলাবদ্ধতা নিরসন করা। তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মানুষের বাড়িঘর পানিতে ডুবে থাকে। একই সাথে তার এলাকার লোকজান এই জলাবদ্ধতার কারেন দুর্ভোগে পরে থাকেন। কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে তিনি তেমন ভাবে কোন উদ্যোগ নেন নাই। এমনকি দুর্ভোগ লাগবে তেমন কোন ভুমিকায় নেই। স্থানীয়দের মতে যেখানে এমপি ব্যর্থ সেখানে তিনিই বা কি করতে পারেন।


এছাড়া ফতুল্লার পাশের ইউনিয়ন এনায়েত নগর বিভিন্ন এলাকায় পানিতে ডুবে থাকেন। এই ইউনিয়নের টানা ২ বারের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসাদুজ্জামান জনপ্রতিনিধি হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও এই তার নির্বাচনী এলাকা পানিতে ডুবে থাকলেও তা নিয়ে তার তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। অনেকটা উদাসীনতায় থাকেন। জলাবদ্ধতা নামক অভিশপ্ত থেকে মানুষের কষ্ট লাগবে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয় বলে জানান এলাকাবাসি।


স্থানীয়রা জানান, এসব এলাকার অভ্যান্তরিন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। আবার কোথাও কোথাও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোন উন্নত করা হয় নাই। তাছাড়া ড্রেনগুলো বালু, মাটি, পলিথিন ও অপচনশীল বর্জ্যে আটকে গেছে। একই ভাবে গত বছর খনন করা অভ্যান্তরিন খালগুলোও অনেকটা ভরাট হয়ে আছে গৃহস্থালির আবর্জনায়। এতে বৃষ্টির পানি খাল বা ড্রেন হয়ে নামতে পারছে না। ফলে প্রতিবছরের মত জলাবদ্ধতা থাকছেই। কিন্তু এবার বর্ষা আসার আগেও ফতুল্লা বাসি পানিতে ডুবে রয়েছেন।


ফতুল্লা জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে এমপি শামীম ওসমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বর্ষণে নিজ সংসদীয় এলাকা ফতুল্লার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। একইসাথে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। শামীম ওসমান বলেন, ‘ফতুল্লার লালপুর এলাকা ফতুল্লার হার্ট। এখানে এলাকার মানুষের কিছু ব্যর্থতা আছে।

 

সে ব্যর্থতা হচ্ছে রাস্তা উচু, জায়গাটা নিচু। সে কারণে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ এখানে পানিবন্দি হয়ে আছেন। গতবার আমরা জেলা পরিষদের সহায়তায় তিনটি পাম্প বসিয়েছিলাম। প্রায় অর্ধকোটি টাকার উপরে খরচ হয়েছিল। এখানে একটা টান্সফর্মার ছিল। টান্সফর্মার খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ কারণে এবার প্রচুর পানি জমে গেছে। বাড়ি-ঘর তো রয়েছে বাথরুমের ময়লা মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে প্রবেশ করেছে। এজন্য আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত।


ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
 

এই বিভাগের আরো খবর