শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

যত দোষ প্রশাসনের

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

 

# পুলিশ আমাকে পাত্তা দেয় না : মেয়র আইভী
# আইনের রক্ষক হয়ে ভক্ষক হবেন কেন : শামীম ওসমান
# অবৈধ স্ট্যান্ড সরাতে না পারলে পুলিশ থাকা লাগবে না : সেলিম ওসমান

 

 

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের উত্তর দক্ষিন মেরুর ভাই বোনের যে অনৈক্য ছিল তা এখন এক কাতারে এসে বসেছে। সেই সাথে তাদের মাঝে যে বিভেদ ছিল তাও এখন ঐক্যে পরিনত হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর মেরুর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান দক্ষিন মেরুর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মিলে একত্রি হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরকে সুন্দরময় গড়ে তুলতে চান।

 

স্থানীয় রাজনীতিতে তারা দুজনেই একে অপরকে বড় ভাই ছোট বোন বলে ডাকেন। এই দিক দিয়ে তারা ভাই বোন হিসেবে পরিচিত। শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সমস্যা যানজট, ফুটপাতে হকার মুক্ত করে মানুষ চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য আলোচনা করা হয়। কিন্তু এই আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের তিন আলোচিত জনপ্রতিনিধিই পুলিশ প্রশাসনকে দোষি সাব্যস্ত করেন। অনেকটা যত দোষ প্রশাসনের এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

এদিকে দীর্ঘ দিন যাবত নারায়ণগঞ্জ সচেতন মহল থেকে শহরের ফুটপাতের হকার মুক্ত, যানজট মুক্ত করে ইতিবাচক নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলার জন্য দাবী জানিয়েছেন। এই দাবী পুরনের জন্য সাংসদ শামীম ওসমান ও নাসিক মেয়রকে এক টেবিলে বসার জন্য সাংবাদিক মহল বলে আসছেন। একই সাথে সাংসদ সেলিম ওসমানও গত ১০ বছর যাবত মেয়র আইভীকে নিয়ে একটেবিলে বসার আহ্বান জানান। কিস্তু তার সেই আহ্বান অবশেষে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের মাধ্যমে পুরণ হয়। শনিবার প্রেস ক্লাবের আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠক হয়।

 

এই সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, নাসিক সিটি মেয়র আইভী পুলিশ প্রশাসনকে দোষারপ করে বক্তব্য রাখেন। কেননা পুলিশ চাইলে শহরের ফুটপাতের হকার মুক্ত করা, যানজট মুক্ত করতে কোন বিষয় না। কারণ এসপি হারুন যখন নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে ছিলেন তখন চার মাসের মত শহরের ফুটপাত মুক্ত রেখেছেন। সেই সাথে শহরের অটো ইজিবাইক বন্ধ রেখে যানজট মুক্ত রেখেছেন। তাই প্রশ্ন উঠে আগের এসপি পারলে বর্তমান এসপি কেন পারবে না। এজন্য এই তিন জনপ্রতিনিধি শহরে সড়কের বিশৃঙ্খলার পিছনে পুলিশকে দোষারপ করছেন।  

 

পুলিশ প্রশাসন প্রসঙ্গে মেয়র আইভী বলেন, ট্রাফিকের কাজ হলো ট্রাফিক মেইনটেইন করা। ট্রাফিক তো এ দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের, এমপিদের উপর চাপায় দিতে পারে না। আপনাদের (পুলিশের) কাছে আমরা বার বার চিঠি দেই বৈধ-অবৈধ স্ট্যান্ডের বিষয়ে। ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই সম্ভবত শেষ চিঠি দিয়েছি। একটাও কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের ডিসি এসপি মেয়রের কথা শুনে না। তারা এমপিদের কথা শুনে। পুলিশতো পাত্তায়ই দেয় না।  বঙ্গবন্ধু রোড হকারমুক্ত করতে ২০০৩ সাল থেকে যে দিন থেকে পৌরসভার হয়ে এসেছি সেদিন থেকে কাজ করছি।

 

এসপি সাহেব (ভারপ্রাপ্ত এসপি) আমির খসরু বলেছেন, হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। ৬ শ‘ হকারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে, আমার কাছে লিস্ট আছে। একজন এসপি যখন কথা বলবেন, দায়িত্ব নিয়ে কথা বলবেন। ৬ শ‘ হকারকে পুনর্বাসন করার পরও যে উনি (ভারপ্রাপ্ত এসপি) বলেন হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মুখ থেকে যখন এ কথা বের হয়, তখন কি আর হকার উঠবে। পুনর্বাসিত ৬ শ‘ হকারের লিস্ট আছে আমার কাছে। তারা তাদের দোকান বিক্রি করে রাস্তায় বসেছেন। পুরো শহর এখন হকারে ভর্তি। শহরের প্রতিটি রোড হকারে ভর্তি। আমরা এর প্রতিকার চাই। আমার কোন অজুহাত শোনার দরকার নাই।

 

মেয়র আইভী আর বলেন, (ভারপ্রাপ্ত) এসপি সাহেব একটি চমৎকার কথা বলেছেন যে, তিনি তো যানজটের জন্য তার নিতাইগঞ্জের কোয়ার্টারে থাকেন না। কেন ভাই ওই এলাকায় কি মানুষ থাকে না। আমরা থাকি না। আমাকে তো বন্দী করে রাখছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ট্রাক দিয়ে বন্দী। মেয়রকে আপনার সবসময় দোষারোপ করেন। আপনি (ভারপ্রাপ্ত এসপি) যদি ওই কোয়ার্টারে থাকতেন, তাহলে কিছুক্ষণ হলেও রাস্তা যানজটমুক্ত থাকতো। আমি অনুরোধ করবো আপনি ওই এলাকায় গিয়ে থাকেন।

 

এমপি সেলিম ওসমান পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সোনালী ব্যাংকের মোড়ে বেবি স্ট্যান্ড হয়ে আছে। আপনারা (পুলিশ) কি চাইলে পারবেন না যে, এই স্ট্যান্ড থাকবে না। রাইফেল ক্লাবের সামনে অবৈধ স্ট্যান্ড থাকবে না। আপনারা তা না পারলে, তাইলে নারায়ণগঞ্জে পুলিশ থাকা লাগবে না। আপানারা ঘুমান, আমরা বের হবো। আমরা যদি বাইরে যাই অমুকের লোক, তমুকের লোক আসছে এমনটা হবে। আপনারা (পুলিশ) গিয়ে স্ট্যান্ড সড়ায় দেন। তারপর নোটিশ দেন এখানে ফুটপাতে দোকান বসানো যাবে না।

 

ওরা কোথায় যাবে এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর বিষয় না, ওরা কোথাও না কোথাও যাবে। আল্লাহর দুনিয়া চলবে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ পাটে ভরপুর ছিল। পাট ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না এটার বাইরে কেউ কখনও চিন্তাও করতে পারে নি। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ছিল, পাট বন্ধ হওয়ায় কি তারা না খেয়ে মারা গেছে। শেখ হাসিনার সরকারে কেউ না খেয়ে মরবে না।

 

পুলিশকে উদ্দেশ্য করে এমপি শামীম ওসমান বলেন, বিআরটিএ পারমিশন ছাড়া কোন গাড়ি বা পরিবহন চলা উচিৎ না। পারমিটবিহীন গাড়ি চলবে কেন। যদি পারমিট বিহীন গাড়ি চলে তাহলে আপনাদের দরকার কেন। আপনারা আইনের রক্ষক হয়ে ভক্ষক হবেন কেন। আপনি বলবেন আমি পারি না। আমি বলবো আমিও পারি না, আইভী বলবে সেও পারে না। আমরা যাতে পারি তার জন্য গোল টেবিল বৈঠক। বলা হচ্ছে আমি বাসের ব্যবসার সাথে জরিত। আমি শীতল পরিবহনের মালিক হয়ে বাস রাখার জন্য আলাদা জায়গা ভাড়া করেছি। যেখানে আমি বাস রাখি। এজন্য আমাদের অনেকটা ভাড়া গুনতে হয়। আমি শামীম ওসমান এমপি হয়ে গাড়ি রাখার জন্য আলাদা জায়গা ঠিক করে রেখেছি, আর অন্যরা এসে রাস্তায় গাড়ি রাখবে এটা প্রশাসনের দেখা উচিৎ। বিআরটিএর পারমিট ছাড়া কোন গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হবে না।

 

এর আগে জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু মন্তব্য করে বলেন মার্কেটরে সামনে পার্কিং ব্যবস্থা নাই। মার্কেটের সামনে পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের চোখে অনেকগুলো সমস্যা দেখেছি। আমরা যে তা ওভারকাম করতে পারি, সেটির ইতোমধ্যে করে দেখিয়েছি, তার জলজান্ত উদাহরণ আছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্যারের সহযোগীতায় আমরা রমজান মাসে সেটা করে দেখিয়েছি। শহরের সমস্যার মধ্যে আমার কাছে মোস্ট কয়েকটা সমস্যা দেখেছি।

 

তার মধ্যে একটা হকার ও আরেকটা ইজি বাইক। একটা যানবাহন চালু হয়ে গেছে এটার সাথে লাখ লাখ শ্রমিক ও তার পরিবার জরিত হয়ে গেছে, সুতরাং তাকে কিভাবে ডিল করবেন। আমরা হকার বসতে দিয়েছি আনঅফিসিয়ালি, এই হকারগুলো উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবে। আপনাকে একটি বিকল্প পন্থা বের করে ভাবতে হবে কারণ এই দুইটা ট্রাফিক জ্যামের অন্যতম একটি কারন যেহেতু। এই শহরে আপনাদের, আমাদের কাজ করতে অনেক সময় আপনাদের দিক নির্দেশনা লাগে। যেহেতু আমরা রমজান মাসে পারি তাহলে অন্য সময় পারবো না কেনো?

 

তিনি আরও বলেন, আমার কাছে মনে হয় শহরে যেগুলো অনিবন্ধিত বাস আছে এগুলো বন্ধ করে দিতে পারি, আমি আগেও বলেছি হকার উচ্ছেদ আপনি মেইন রাস্তা থেকে তাড়িয়ে দিবেন সেই হকার গলির ভিতরে গিয়ে ঢুকবে, ওদের তো একটা জায়গা দিবেন। আর আপনারা যদি বলেন নারায়ণগঞ্জে কোন হকারই থাকবে না। তাহলে আমরা পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন সকলে মিলে কাজটি করে দিবো। আমরা ১মাস না বাকি মাসগুলোও পারবো। আমি এই জেলায় যোগদানের পর গুনেছিলাম এই শহরে ১৭০টি মৌমিতা বাস আছে।

 

সেটা নামতে নামতে আমার মনে হয় ১২০টাতে চলে এসেছে। মূলত অনুমোদন আছে ৭০টি বাসের। এটি এখন কমে ১০০ কাছাকাছি এসেছে। সরকার থেকে আমাকে একটি বাংলো দেয়া হয়েছে নিতাইগঞ্জে। সত্যি কথা বলতে আমি কিন্তু জ্যামের কারণে সেই বাসায় উঠিনি। নিতাইগঞ্জে যে ট্রাক আছে আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি, অনেকবার আমাদের অফিসে এসে কমিটমেন্ট করেছে। মেয়র মহোদয় ও এমপি মহোদয় আপনারা একটু ভাবেন আমরা কাদের অনুমোদন দিতে পারি। সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে কাদের ও সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে কত গুলো অনুমোদন দিতে পারি। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর