শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১   ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শামীম ওসমানের মুখোশ খোলার হুমকিতে ভীত নন নেতৃবৃন্দ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৭:৩৭ পিএম, ৩ মে ২০২১ সোমবার

# অন্যদের বিরুদ্ধে বলার আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখার আহবান কাদিরের


একটি সময় ছিলো যখন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের কোনো কথার প্রতিবাদ করার সাহস পেতো না কেউ। শামীম ওসমান যা বলতো তাই মানতে হতো সবাইকে। কিন্তু সেই সময় এখন আর নেই। সময় পাল্টেছে আরো আগেই। আর এখন শামীম ওসমান যা বলছেন তার সব কথাতো সবাই মানছেনই না বরং তার দলের ভেতর থেকেই তীব্র ভাষায় প্রতিবাদও করছে অনেকে।

 

সম্প্রতি শামীম ওসমান এমন কিছু কথা বলছেন যা কিনা তার দলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। তিনি তার দলে দুর্নীতিবাজ রয়েছে, শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে এবং শত কোটি টাকার বাড়ি বানানো হচ্ছে এসব অভিযোগ তোলার পর এই দলের নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বশীল নেতারা কেউই তার এ কথা মানেননি। বরং অনেক নেতা অভিযোগ করেছেন শামীম ওসমান কোনো প্রমাণ ছাড়া এসব বলছেন এবং দলের ক্ষতি করছেন।

 

আর যারা শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট আনিসুর রহমান দীপু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল কাদির, কেন্দ্রীয় শ্রমীকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাউসার আহম্মেদ পলাশ এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সহ আরো অনেকে। তারা পরিস্কার ভাষায়ই বলেছেন শামীম ওসমান যা বলছেন তার প্রমাণ শামীম ওসমানকেই দিতে হবে। তিনি অনেকদিন ধরেই এমন কথা বলছেন। কিন্তু তার হাতে কোনো প্রমাণ নেই।


এদিকে শামীম ওসমানের কথার জবাব দিতে গিয়ে কোনো কোনো নেতা শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগও করেছেন। তারা বলছেন শামীম ওসমান নিজেই নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি একজন বিতর্কিত নেতা। তিনি এখন বহু টাকার মালিক। তাই তার টাকার উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের অনুসারী অনেকেই এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। নারায়ণগঞ্জের বৈধ অবৈধ আয়ের সেক্টরগুলোও শামীম ওসমানের লোকেরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারপরেও শামীম ওসমান এতো কথা বলবেন কোনো? আসলে তিনি কখনোই নিজের দোষ দেখেন না। তাই তার আর কোনো অপপ্রচারকেই ছাড় দেবেন না বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

 

অপরদিকে শামীম ওসমান বলেছেন ঈদের পর নাকি তিনি তার দলের অনেকের মুখোশ খুলে দেবেন। ফলে তার এই বক্তব্য নিয়েও আলাপ হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে। তারা বলেন, শামীম ওসমান নতুন করে আর কার মুখোশ খুলবেন? অনেক দিন ধরেইতো তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে বলে আসছেন।

 

জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়েও তিনি আইভীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। দূদকে অভিযোগ করেছেন এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে দূদক তদন্তও করেছে। কিন্তু কিছুই পায়নি দূদক। বরং এই তদন্ত হওয়ার কারনে মেয়র আইভীর ভাবমূর্তি আরো উজ্জল হয়েছে। মানুষ জেনেছে মেয়র আইভী একজন সৎ জনপ্রতিনিধি। বিপরীতে ক্ষতি হয়েছে শামীম ওসমানের। মানুষ জেনেছে শামীম ওসমান একজন প্রতিহিংসাপরায়ন নেতা। মিথ্যা অভিযোগ করেন তিনি। তাই এবার তিনি কার কি মুখোশ খুলবেন এ নিয়ে কেউ তেমন কোনো চিন্তিত নন।

 

বরং এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল কাদির বলেন, তিনি অনেক বলেছেন। নতুন করে তিনি কার বিরুদ্ধে কি বলেন সেটা আমরাও দেখবো। আমরাও প্রস্তুত। দলের কারো বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যা অপবাদ দেবেন আর আমরা মুখ বুঝে সহ্য করবো এটা যদি তিনি ভেবে থাকেন তাহলে তিনি বোকার স্বর্গে আছেন। আবদুল কাদির আরো বলেন, শামীম ওসমান আসলে দলের নেতৃবৃন্দকে ভয় দেখাতে চান। তিনি চান তিনি যা বলেন আমরা যেনো চুপ করে সেটাই মেনে নেই। কিন্তু আমি আগেও বলেছি তিনি অপরাজনীতি করছেন।

 

আবদুল কাদির বলেন, তিনি নিজের এলাকার উন্নয়ন বাদ দিয়ে অন্যদের পেছনে লেগে রয়েছেন। তার এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতা সহ নানা সমস্যা ভুগছে। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। তিনি আছেন অন্যদের মুখোশ নিয়ে। আমি তাকে বলবো আগে আয়নায় নিজের মুখটা দেখুন। তারপর দলের অন্যদের নিয়ে মন্তব্য করুন। আপনাকে বুঝতে হবে দলের কেন্দ্র আপনার কোনো কথা বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস করে না নারায়ণগঞ্জের জনগনও। তাই দলের কারো বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে হিসাব করে বলুন। নইলে আপনার বক্তব্যের কঠোর জবাব দিতে দলকে যারা ভালোবাসেন তারা প্রস্তুত রয়েছেন।