দশ মিনিটের চাপে মিমাংসা!
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:৩৮ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার
# মিমাংসার জন্য উভয়কে ১০ মিনিটের সময় দেন মির্জা আজম
# নচেৎ উভয়কে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়
# পদ হারানোর ভয়ে ১০ মিনিটেই মিমাংসা করেন হাই-বাদল
একদা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ‘মানিক জোড়’। দলের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও তারা উভয়ে ছিলেন একজোট। তবে, জেলা আওয়ামী লীগের সেই মানিক জোড়ের মধ্যে সম্প্রতি তুমুল বিভাজন তৈরী হয়েছে।
গোগনগরের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পক্ষ-বিপক্ষ নেয়া এবং সদর ও সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে মতের অমিল দেখা দেয়। এতেই মানিক জোড় থেকে তারা হয়ে উঠেন একে অপরের প্রতিপক্ষ তুল্য। একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্যও রাখেন। জেলা আওয়ামী লীগে দেখা দেয় উত্তাপ। তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় সর্বত্র। বিষয়টি গড়িয়েছে কেন্দ্রেও। অতঃপর কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে মিমাংসা হয় উভয়ের।
সূত্রের খবর, হাই-বাদলের এই মিমাংসা হয়েছে কেন্দ্রের গ্যারাকলে আটকে গিয়ে। গত ৭ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের ঢাকার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদলও ছিলেন। একপর্যায়ে তাদের বিরোধের বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ভিপি বাদলের বিরুদ্ধে নালিশ করে। একই সময়ে ভিপি বাদলও আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ দেয়। একপর্যায়ে আব্দুল হাই ও ভিপি বাদলের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। অতঃপর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম তাদের নিবারণ করেন এবং উভয়ের প্রতিই ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে হাই-বাদলকে ১০ মিনিটের সময় বেধে দেন নিজেদের মধ্যে মিমাংসা করে নেয়ার জন্য। নচেৎ, উভয়কেই দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে বলে জানান মির্জা আজম।
সূত্র জানিয়েছে, মির্জা আজমের ভাষ্য ছিলো- ‘১০ মিনিটের মধ্যে হাই-বাদল তাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ মিমাংসা না করলে উভয়কে অব্যাহতি দিয়ে কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী করার মাধ্যমে আগামী এক দেড় মাসের মধ্যে জেলার সম্মেলন করা হবে।’ মির্জা আজমের এমন কথায় আব্দুল হাই ও ভিপি বাদল উভয়ে ঘাবরে যান। একপর্যায়ে তারা উভয়ে পৃথক একটি রুমে বসে ১০ মিনিটের মধ্যে নিজেদের মাঝে মিমাংসা করে নেন এবং তারা মিলে মিশে কাজ করবেন বলে মির্জা আজমকে প্রতিশ্রুতি দেন। অতঃপর আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর জেলার ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করার জন্য নির্দেশনা দেন মির্জা আজম।
দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, উভয়ের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের মিমাংসাটা হয়েছে মির্জা আজমের গ্যারাকলে পরে। এযাবৎ একে অপরের প্রতি প্রকাশ্যে সমালোচনা করলেও ১০ মিনিটের চাপে এবং পদ হারানোর ভয়ে তারা মিমাংসা করেছেন। তবে, গ্যারাকলে পরে মিমাংসায় আসা হাই-বাদল আবারও মানিক জোড় উপাধি ফিরে পাবেন কিনা- তা নিয়েও আলোচনা চলছে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে।
প্রসঙ্গত, সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল নারায়ণগঞ্জ সদর ও সোনারগাঁও থানা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য, বিএনপি, জামায়াত-শিবির ও জাতীয় পার্টি ঘেষা ব্যক্তিদের পদ দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠে। এমনকি ত্যাগী বা প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে মূল্যায়ন না করে হাইব্রিডদের সামনে টেনে আনাসহ নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগও বাদলের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে কমিটিতে হাইব্রিড-কাউয়া নিয়ে একটি সভায় মন্তব্য করেন আব্দুল হাই। এতে চটে যায় ভিপি বাদল। পরে আব্দুল হাইকে নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। এমনকি আব্দুল হাই মুক্তিযোদ্ধা কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ভিপি বাদল। এরপরই এই মানিক জোড়ের মধ্যে বিভাজন প্রকাশ্যে আসে।