সোমবার   ২০ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

চোখ রাঙানিতেও শেষ রক্ষা হলো না রশিদ-সানুর

এম মাহমুদ

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২৪  

 

 

ওঝা কখনোই মন্ত পরে বিষ নিঃশেষ করতে পারে না। ঠিক তেমনেই বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ওসমানরা অগ্নিঝরা বক্তব্য দিয়েও তাদের ভ্রাতৃদ্বয়দের জয়ী করতে পারেনি। বন্দরের নির্বাচনের সাথে আরেকটি বিষয় তুলনা না করলেই নয় ম্যাজিক কিন্তু সর্বদা কাজে আসে না মানুষের চোখে ধূলি দিতে পারলেই ম্যাজিক একমাত্র কাজে আসে।

 

ঠিক তেমননিই ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়ের চেয়ারম্যান প্রার্থী এম.এ রশিদ ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সানাউল্লাহ সানু পূর্বের ন্যায় ধরেই নিয়েছিলেন ওসমানদের সমর্থন মানেই জয় সুনিশ্চিত। কারণ পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে ওসমানদের সমর্থনে একপ্রকার সিলেকশনেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী এম.এ রশিদ ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সানাউল্লাহ সানু। তবে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে ওসমানদের ম্যাজিকও কাজে আসেনি ফলাফলে দেখা মিলেছে পরাজয়।

 

সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একে এম সেলিম ওসমান নির্বাচনের অনেক আগেই তার পছন্দের প্রার্থী হিসেবে রশিদ-সানুকে সমর্থন করেছিল। ঠিক একইভাবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একে এম শামীম ওসমান স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে রশিদ-সানুকে সমর্থন করেন। এর আগেও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একে এম সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একে এম শামীম ওসমানের সমর্থনের আর্শীবাদে সিলেকশনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন এম.এ রশিদ এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে সানাউল্লাহ সানুও উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে এক প্রকার সিলেকশনে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 

কিন্তু ষষ্ঠ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় ওসমানদের সমর্থন পেয়েও সিলেকশনে পাশ করা চেয়ারম্যান প্রার্থী এম.এ রশিদের অবস্থা ছিল নাযুক। কারণ তার জনপ্রিয়তা ছিল তলানীতে এতে করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা অন্যান্য প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে বা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে অগ্নিঝড়া মন্তব্য করে নির্বাচন থেকে সড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেছিল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একে এম সেলিম ওসমান।

 

সেলিম ওসমান বলেছিলেন, এখন দুইজন আমার অমতে নির্বাচন করার চিন্তা ভাবনা করছে। আমি বলিনা একজন তো নিজেই বলেন রাজাকার সন্তান। মাকসুদ প্রমাণ করেছে করে দিয়েছেন উনি রাজাকার। আমি কখনো এটাকে ধরি নাই। মানুষের জন্য কাজ কর। আগের পাপ বাপ দাদার পাপ ভুলে যাও। পাপে বাপেকেও ছাড়ে না। মাকসুদ সাহেব আমি আজকে এতগুলো মানুষের সামনে আবারো বললাম আল্লাহর কাছে মাফ চান। এবং আবার ফিরে আসেন আমি আপনাকে কিছু বলব না।

 

তবে মনে রাখবেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা। যদি ভালোই ভালোই কথা শুনেন তো শুনবেন। না হলে মুগুর কিভাবে বানাতে হয় দেখবেন। মুগুরের মাধ্যমে কিন্তু আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে। আমি বললাম কথা দিলাম আপনি আগামী কালকের মধ্যে উর্ধ্ব করেন। আপনার সঙ্গে ৪ জন চেয়ারম্যন যেভাবে আমার কথা শুনেছেন আমার সামনে বসেছে আপনি মাসুদ সাহেব আপনিও আসেন।

 

আপনার এত টাকা কোথায় থেকে হল মাসুদ সাহেব। আপনি বাড়ি বাড়ি টাকা দেওয়া শুরু করেছেন। আমার কাছে আমার হিসাব পরে। প্রায় ৩ কোটি টাকা ইতিমধ্যে আপনি খরচ করে ফেলেছেন। ঐদিন নাইরে নাতি খাবলাইয়া হাবলাইয়া খাতি। আপনি ভুলে যাবেন না বাংলার মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। যদি আপনি আপনার রাজাকার পরিচয়টা দেন। আপনি আমার সন্তান হিসেবে জানেন। মাথায় টুপিও দাড়ি লাগিয়ে বইলেন না আমি মানুষের উপকার করি। কেন এই রমজান মাসে মানুষকে আপনি বিভ্রান্ত করছেন।

 

আপনি মহিলাদের বলছেন আমাকে ভোট দিলে ৩০০ করে টাকা দিবেন। মহিলাদের ৩০০ টাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। আপনি কেন একটি মানুষকে খারাপ বানানোর চেষ্টা করছেন। আমি আপনাকে নিষেধ করলাম। আমার ভবিষ্যত প্রজন্ম আমার মৃত্যু হলো কিন্তু আপনাকে ছাড়বে না। আপনি কেন বসলেন না আপনি কেন আলোচনা করলেন না। আপনি মনে করলেন আমার জন্য একটি গরম চাদর ও দুই প্যাকেট মিষ্টি ও আমার বউয়ের জন্য একটি শাড়ি দিয়ে আপনি উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন। ঐদিন ভুলে যান।

 

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানও চেয়ারম্যান পদে থাকা অপর দুই প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার খুব বেশি ঘৃণা লাগে যখন কেউ বলে টাকা দিয়ে নির্বাচন করা যায়। এই জনগণ কি এত সস্তা? যে কয়েকটা টাকার জন্য নিজেদের ঈমান বিক্রি করে দিবে। তবে এখানে এসে শুনলাম কেউ কেউ কিছু কথা বলছে। কথা গুলো যদি আমরা আমলে নেই, তাহলে আগামীকাল থেকে কেউ কিন্তু মাঠে নামতে পারবেন না। আমি সেলিম ওসমান না।

 

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেছিলেন, মাকসুদ বন্দর উপজেলাকে মিনি পাকিস্তান করে রেখেছে। এভাবেই নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগ তথা জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরাও বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এম.এ রশিদ এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে সানাউল্লাহ সানুর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করতে আসে অতিরঞ্জিত বক্তব্য হুমকি ধামকি ছিল চোখে পড়ার মত।

 

কিন্তু গতকাল  ৮ মে ভোটের ফলাফলই বলছে, জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগ বা জাতীয় পার্টির নেতাদের হুমকি ধামকি বা বহিষ্কার করে রশিদ-সানুকে সমর্থন করে ও  নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একে এম সেলিম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একে এম শামীম ওসমানের সমর্থনের সাথে অগ্নিঝড়া বক্তব্য কোনটি কাজেই আসেনি। কারণ এম.এ রশিদকে নিয়ে অতিরঞ্জিত আচরণ প্রভাব ফেলেছে ভোটের মাঠে।

 

যার কারণে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্রার্থী হিসেবে বিভেচিত এম.এ রশিদ ১৪ হাজার ৮৭৪ ভোট পেয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষের প্রার্থী হিসেবে বিভেচিত মাকসুদ হোসেন (আনারস) ২৯ হাজার ৮৭৩ কাছে পরাজিত হয়েছেন। যার ফলে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির কাছে পরাজিত হল স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি শেষ রক্ষা করতে পারল না এমপি জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।

 

অপরদিকে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নারায়ণগঞ্জ-৪,৫ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমান তথা নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং মহানগর আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সমর্থন পেলেও সানাউল্লাহ সানু পেয়েছেন ১৭হাজার ১ ভোট পেয়ে মো. আলমগীর ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ১৭ হাজার ৬০৬ ভোটের কাছে পরাজিত হয়েছেন। মো. আলমগীর একজন হেভিওয়েট প্রার্থী না হয়েও এমপি ও দলীয় সমর্থনের প্রার্থী সানাউল্লাহ সানুকে পরাজিত করেছে।

এই বিভাগের আরো খবর