বুধবার   ২২ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

দুর্ধর্ষ দাউদ সোহেলের সহযোগীরা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৪  

 

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দিনকে দিন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ফতুল্লার দক্ষিণ শিয়াচর এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারী সোহেল ওরফে দাউদ সোহেল। এছাড়াও রয়েছে কথিত সংবাদকর্মী ও কতিপয় অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের পরোক্ষ সহযোগীতা। ঈদ উল ফিতরের পূর্বে যুগের চিন্তা পত্রিকায় দাউদ সোহেলের মাদক বেচাবিক্রি প্রসঙ্গে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হওয়া পর কিছুদিন চুপ থাকলেও সম্প্রতি আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সে।

 

অভিযোগ উঠেছে, মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ার জের ধরে এবার এক যুবককে কোপাতে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ ৪০-৫০ জনের কিশোরগ্যাং বাহিনী নিয়ে পুরো এলাকায় মহড়া চালিয়েছে সে। তার এমন কর্মকান্ডে আতঙ্কগ্রস্থ স্থানীয়রা চান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জরুরী হস্তক্ষেপ। শোনা যাচ্ছে, ফতুল্লা থানা যুবলীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় এলাকায় এমনসব কর্মকান্ড করে বেড়ায় সে।

 

এলাকাবাসীর দেয়া তথ্য মতে, দাউদ সোহেলের নেতৃত্বে ফতুল্লার দক্ষিণ শিয়াচর ইয়াদ আলী মসজিদ থেকে শুরু করে পুরো রেললাইন জুড়ে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল বেচাবিক্রি করছে কথিত ছাত্রলীগ নেতা রাজু, মাসুদ, বকুলির ছেলে গোলাম রাব্বী ওরফে কাল্লু, জসিম, সাব্বির, সাগর ও সাইফুল।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফতুল্লার শিয়াচর ইয়াদ আলী মসজিদ এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে সোহেল ওরফে দাউদ সোহেল। আর দাপা মসজিদ এলাকার মৃত মহিউদ্দিনের পুত্র সাহাবুদ্দিন ওরফে ডাকাত সাহাবুদ্দিন। সংঘবদ্ধ এই চক্রটি বর্তমানে ডিজিটাল সব মাধ্যম ব্যবহার করে ফতুল্লার শিয়াচরে হাজার হাজার পিস ইয়াবা ও ফেন্সিডিল বিক্রি করে চলেছে।

 

অভিযোগ আছে, প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর শিয়াচরের ইয়াদ আলী আলী মসজিদ এলাকায় দাউদ সোহেলের আড্ডাখানায় পুলিশ ও ডিবির কতিপয় সদস্যের আনাগোনা হয়। মূলত এ কারণেই স্থানীয় পঞ্চায়েত ও সচেতন নাগরিকদের কেউ বাধা প্রদান করলে তাদের পুলিশ-ডিবি দিয়ে হয়রানি করার দু:সাহস দেখাতে পারে সংঘবদ্ধ ওই চক্রটি।

 

এমনটাই বলছেন, খোদ এলাকার মসজিদ কমিটির লোকজন। যদির এ সকল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে থানা পুলিশ ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, কার্যত এখনো পর্যন্ত কোন সুফল পায়নি স্থানীয় পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির লোকজন।

 

তথ্য বলছে, শুধু মাদক ব্যবসা পরিচালনা করেই এরইমধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন ফতুল্লা শিয়াচর এলাকার চিহ্নিত মাদক সম্রাট সোহেল ওরফে দাউদ সোহেল। দক্ষিণ শিয়াচরের ইয়াদ আলী মসজিদ এলাকা থেকে পুরো রেললাইন পর্যন্ত শুধু তারই রাজত্ব। নিজ বলয়ের অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন যুবকের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ওই এলাকায় নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে দাউদ সোহেল। যাদের নিত্যদিনের খরচ থেকে শুরু করে ঘরভাড়া পর্যন্ত বহন করে সে।

 

এরমধ্যে, দাউদ সোহেলের নিয়ন্ত্রিত খুচরা মাদব সরবরাহকদের মধ্যে রয়েছে, বকুলির ছেলে গোলাম রাব্বী ওরফে কাল্লু, জসিম, সাব্বির, সাগর ও সাইফুল। এতোকিছুর পরেও কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় চিন্তিত শিয়াচরের পঞ্চায়েত ও মসজিদ কমিটির লোকজন। তাদের দাবি, কোনভাবেই যেনো থামনো যাচ্ছে না দাউদ সোহেলকে। বরং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে উল্টো জেলখাটার হুমকি পেতে হয় বলে দাবি করছেন তারা।

 

এদিকে, নতুন করে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সন্ত্রাসী দাউদ সোহেল। বিগত সময়ে দাউদ সোহেলের লালিত কিশোরগ্যাং সদস্যদের ফতুল্লার শাহজাহান রোলিং মিলস সংলগ্ন খাঁ বাড়ি এলাকায় মাদক ব্যবসা করতে না দেওয়ায় ২৬ এপ্রিল শুক্রবার ফতুল্লার দক্ষিণ শিয়াচরের ইয়াদ আলী মসজিদ এলাকা থেকে ৪০-৫০ জনের একদল কিশোরগ্যাং নিয়ে মাহমুদ হাসান হৃদয় নামে এক যুবকের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের ১নং বিবাদী আতাউর মিয়ার পুত্র সোহেল ওরফে দাউদ সোহেল (৩৫), ২নং বিবাদী মহন মিয়ার পুত্র জসিম (২২), ৩নং বিবাদী শাহিন (২২), ৪নং বিবাদী সোলেমান (২৩), ৫নং বিবাদী সাব্বির (২৫), ৬নং বিবাদী ফাইজুল (২৫) সহ অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জনের একদল কিশোর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বাদি মাহমুদ হাসান হৃদয়ের খোঁজে তার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তার খোঁজ না পেয়ে বাদীর পরিবারের লোকজনকে হুমকি ধামকি এবং তার বাড়ির গেইট ভাংচুর করে চলে যায় বিবাদীরা।

 

এ বিষয়ে অভিযোগের বাদী মাহমুদ হাসান হৃদয় জানান, দাউদ সোহেল ফতুল্লার একজন চিহ্নিত মাদক কারবারী এবং সন্ত্রাসী। বিগত সময়ে দাউদ সোহেলের বিভিন্ন অপকর্মের খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছে। তার নামে ফতুল্লা মডেল থানায় ৭ থেকে ৮টি মামলা রয়েছে। দক্ষিণ শিয়াচরের পুরো ইয়াদ আলী মসজিদ এলাকায় দাউদ সোহেল ও তার লোকজন মাদক বেচাবিক্রি করে। আশপাশের আরও কিছু এলাকাতেও তারা মাদক ব্যবসা করে।

 

সেই ধারাবাহিকতায় খাঁ বাড়ি গলিতেও দাউদ সোহেলের লোক মাদক বেচাবিক্রি শুরু করে। পরবর্তীতে আমি বেশ কয়েকবার এ ব্যাপারে তাদের নিষেধ করি। সেই ঘটনার জের ধরে শুক্রবার দাউদ সোহেলের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন কিশোরগ্যাং সদস্য আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে আমার বাড়িতে খুঁজতে আসে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল, ছুরি, রামদা। ফিল্মি স্টাইলে মহড়ার ওই ভিডিও’র সিসি টিভি ফুটেজও আমরা সংগ্রহ করেছি।

 

এ বিষয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া যুগের চিন্তাকে বলেন, থানায় অভিযোগ হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখতে বলছি। অবশ্যই সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর