শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

স্বামী-স্ত্রী-মেয়ের নিয়ন্ত্রণে খানপুর হাসপাতালের দালাল সিন্ডিকেট

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

 

# স্ত্রী রাজিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
# মেয়ে মুক্তা অনিয়মের অভিযোগে বদলী হন

 

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ঘিরে অন্তত ডজন খানেক দালাল চক্র সক্রিয় আছে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব দালালের হাতে জিম্মি রোগী ও তাদের স্বজনরা। এসব দালালের উৎপাতে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ফুসলিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে দালাল চক্র।

 

বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে। এদিকে স্থানীয় মাধ্যম ও প্রত্যক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ শয্যা হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি বেসরাকরি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অন্তত ডজন খানেক দালাল হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। এসব দালাল চক্রের মধ্যে নারীও রয়েছে। যাদের দেখে বোঝার উপায় নেই এরা দালাল চক্রের সদস্য।

 

সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে দালাল চক্রের এক নারী সদস্যের সাথে কথা হয়। তিনি পরিচয় দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। এমনকি তার নাম বলতে চান নাই। তিনি বন্দরে থাকেন। তবে তার মাধ্যমে দালাল চক্রের একাদিক সদস্যের নাম উঠে আসে। তার মাঝে অবসর প্রাপ্ত ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের চিহ্নিত দালাল হারুন। এই হারুন দালাল ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রাজিয়ার স্বামী। রাজিয়া এই হাসপাতালের ফার্মেসি বিভাগে কর্মরত রয়েছে।

 

এছাড়া দালাল হারুনের মেয়ে নাসরিন সুলতানা মুক্তাকে দুর্নীতির অভিযোগে নগরীর খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে বদলি করে ঢাকার দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে এই মুক্তার মালিকানাধীন গ্যাষ্ট্রোলিব ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে ৩শ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে রোগি নিয়ে যান তারই পিতা দালাল হারুন। তাছাড়া দালাল চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন রবি, বাদল, তসলিমা, রাজিয়া, ফয়েজ মুস্তাফিজসহ বেশ কয়েকজন দালালের নাম উঠে আসে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, রাজিয়া সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে হাজিরা দিয়ে বাসায় চলে যান। পরে ১২ টার দিকে এসে আরামের সাথে দুপুরের চা নাস্তা করে ১ টার দিকে চলে বাসায় চলে যান। অভিযোগ রয়েছে তিনি ঠিক মত হাসপাতালে ডিউটি না করে তার স্বামী হারুনকে রোগি নেয়া বেপারে সহযোগিতা করেন। কেননা তারা স্বামী স্ত্রী এবং মেয়ে মিলে হাসপাতালে দালাল সিন্ডিকেট তৈরী গড়ে তুলেছেন।

 

দালালদের সন্ধ্যার পরে দুর্নীতির অভিযোগের বদলী হওয়া নাসরিন সুলতানা মুক্তা চক্রের সদস্যদের বখরা প্রদান করেন। এই দালাল সিন্ডিকেটের মুল হোতা হারুন। প্রধান সহযোগি হিসেবে কাজ করেন হাসপাতালে কর্মরত তারই স্ত্রী রাজিয়া। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। তাদের মেয়ে মুক্তা নানা অপকর্মের অভিযোগে এখান থেকে বদলী হন। কিন্তু তার পরেও তাদের অপকর্ম থেমে নেই। মুক্তার গ্যাষ্ট্রোলিব ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের মাধ্যমে রাতারাতি কোটি পতি বনে গেছেন। তার বদলী হলেও তার মা এবং বাবার সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলে হাসপাতালের রোগিদের জিম্মি করে রেখেছেন।  

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সনের ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মইনুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানাকে দুর্নীতির অভিযোগে বদলির আদেশ দেয়া হয়।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের ডাক্তারের রুমের ভেতর থেকে কোন রোগী বাইরে বের হওয়া মাত্রই তাদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নেন দালাল চক্রের সদস্যরা। এরপর রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি গ্যাষ্ট্রোলিব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করেন। একদল আবার বেশি অসুস্থ রোগী দেখলেই চিকিৎসা পেতে দেরি হবে বলে বাইরের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা করেন।

 

সংঘবদ্ধ দালাল চক্রটি দুটি অংশে কাজ করে। এক অংশ হাসপাতালের বহির্বিভাগে কাজ করে। আরেকটি অংশ কাজ করে হাসপাতালের বাইরে। ডাক্তারের কাছ থেকে যখন রোগী চিকিৎসা নিয়ে বের হয় তখন ভেতরের দালাল চক্রটি রোগীদের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার জন্য বলে। আরেক দল থাকে বাইরে।

 

যারা খুব বেশি অসুস্থ রোগী হাসপাতালে ঢুকতে দেখলে হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া যাবে না বলে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রতিটি রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন পান দালালরা। রোগীর খরচ যত বেশি হয় তাদের কমিশন তত বেশি হয়। যা সন্ধ্যার পরে বখরা প্রদান হিসেবে দিয়ে থাকেন মুক্তা। তাদের সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের থেকে মুক্তিচান নগরবাসি। 

 

খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবুল বাশার জানান, সরকারি হাসপাতালে এই ভাবে চাকরী করার নিয়ম নেই। সঠিকভাবে নিয়ম মেনে চাকরী করতে হবে। রাজিয়ার বিষয়ে এমন তথ্য আমার জানা নেই। তার পরেও আমি খোজঁ নিয়ে বিষয়টি দেখবো। এবিষয়ে রাজিয়ার সাথে একাধিকবার যোগযোগ করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর