শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

১০ বছরেও সংস্কার শেষ হয়নি ১১ কিমি সড়ক

আড়াইহাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২৪  

 


আড়াইহাজারের জাঙ্গালিয়া বাজারে মুদি দোকান রয়েছে জাকারিয়া প্রধানের। উপজেলা সদর থেকে বাজারটির দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। এই সড়ক ধরেই দোকানের জন্য নিয়মিত পণ্য আনতে হয় জাকারিয়াকে। কিছুদিন আগেই তাঁর পণ্য নিয়ে আসা একটি গাড়ি উল্টে যায়। এতে বেশ কিছু টাকার পণ্য নষ্ট হয়। জাকারিয়ার অভিযোগ, ওই সড়কের কাজ বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে। ফলে বাজারে পণ্য আনা-নেওয়া করতে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।

 

 

একই কারণে এখানে মানুষের আনাগোনা কমছে। ফলে ব্যবসা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু করেছিল উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও নামমাত্র কাজ ছাড়া আর কিছুই এগোয়নি।

 

 

এলাকাবাসী জানায়, উপজেলা সদর হয়ে ঢাকা যেতে খাগকান্দা, উচিৎপুরা, কালাপাহাড়িয়া ও হাইজাদী ইউনিয়নের লোকজন এই সড়ক ব্যবহার করেন। এ ছাড়া পাশের সোনারগাঁ উপজেলার দুটি ইউনিয়নের লোকজনও এ সড়ক দিয়ে আড়াইহাজারে আসা-যাওয়া করেন। অথচ প্রায় পুরো সড়কটিই এখন চলাচলের অনুপযোগী।

 


জানা গেছে, ১০ বছরে এ সড়কের প্রধান প্রধান মোড় ও বাজারগুলোতে সিসি ঢালাইয়ের কাজ ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো কাজই হয়নি। এর দৈর্ঘ্য সব মিলিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটারের মতো। বাকি ৯ কিলোমিটার অংশের এখানে-ওখানে পিচ ও খোয়া উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদাপানি জমে যায়। তখন হেঁটে যাওয়ারও উপায় থাকে না। অসুস্থ ব্যক্তি, নারী, বৃদ্ধ ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে।

 


দাশিরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক দিন যাইতে-আইতে অনেক সময় লাগে। তাছাড়া রাস্তা খারাপ দেইখা শরীলে বিষ বইয়া যায়। কবে যে রাস্তা ঠিক হইবো কে জানে? কয়দিন দেহি কাজ করে, আবার দেহি খবর নাই। এই করতে করতে ১০ বছর হইয়া গেল।’

 


নিউ জেনারেশন ফ্যাশন নামের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে নিয়মিত এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হয় বাসচালক শফিকুল ইসলামকে। তিনি বলেন, এই সড়কে গাড়ি চালানো যেমন কষ্টের, তেমন ব্যয়বহুল। কারণ, প্রায়ই সড়কে গাড়ি বিকল হয়। মেরামতে অনেক খরচ হয় তাদের।

 


২০১৪ সালে সড়কটির কাজ শুরু করে এখনও শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিলচন্দী গ্রামের ইয়াসিন। তিনি বলেন, ‘রাস্তা যেমন ভাঙা, তেমন ধুলাবালি। এই যন্ত্রণা কবে যে শেষ হইব? আর ভালো লাগে না।’

 


দীর্ঘ সময় ধরে ভাঙা সড়কের কারণে জনদুর্ভোগের তথ্য স্বীকার করেন উচিৎপুরা ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, নতুন একজন ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছেন। দ্রুতই এ সড়কের কাজ শেষ হবে।

 


আড়াইহাজার উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বদলাতে হয়েছে। তাদের দরপত্র কয়েকবার বাতিল করা হয়েছে। আবারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা চার-পাঁচ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করবে বলে আশা করছেন।

 



নারায়ণগঞ্জ জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, ওই সড়কের কাজ শেষ করতে রত্না এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর