বৃহস্পতিবার   ১৬ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

সোনারগাঁয়ের বাগানগুলোতে লিচুর গায়ে তাপের দগদগে ক্ষত

সোনারগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৪  


সোনারগাঁয়ের লিচুর নাম শুনলেই মুখ রসে ভরে ওঠে। দেশের বাজারে সবচেয়ে আগে আসে বলে এই লিচুর কদর অনেক। কিন্তু এবার তীব্র দাবদাহের কারণে ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। সেই সঙ্গে গাছে ঝুলে থাকা লিচু ফেটে ঝরে পড়ছে মাটিতে। এতে চরম দুশ্চিন্তায় সোনারগাঁয়ের লিচু চাষিরা।

 

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগানে সেচসহ পরিচর্যা করে গাছে লিচু রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা। কেউ কেউ লিচু রক্ষার জন্য গাছে কীটনাশকও প্রয়োগ করছেন।

 


উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হিসেবে গত বছর ১০০ হেক্টর জমিতে ৬৫০টি লিচু বাগান ছিল এবং সেখান থেকে লিচু বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৯ কোটি টাকার।

 

 

তবে ১০৭ হেক্টর জমিতে ৬৬৬টি বাগানে লিচুর আবাদ হয়েছে এবং এখান থেকে সম্ভাব্য আয় হবে ১০ কোটি টাকা। যেখানে গত বছর থেকে এ বছর ৭ হেক্টর বেশি জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য বাগান রয়েছে।

 


কিন্তু লিচু চাষিদের ভাষ্য মতে, এবার এখানে কদমি লিচুর পাশাপাশি ‘পাতি’ লিচু ও ‘চায়না-৩’ জাতের লিচু বেশি চাষ হলেও তীব্র দাবদাহের কারণে বেশিরভাগ বাগানের লিচুর গুটি ও লিচু ফেটে মাটিতে ঝরে পড়ছে। এতে লাভের চেয়ে লোকসানের শঙ্কাই বেশি।

 


এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৮৫টি গ্রাম লিচুর জন্য প্রসিদ্ধ। তবে অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে পানাম, সনমান্দী, গোয়ালদী, বৈদ্যেরবাজার, ভট্টপুর, গাবতলী, হাড়িয়া, অর্জুন্দী, দুলালপুর, গোবিন্দপুর, কৃষ্ণপুরা, বাগমুছা, হাতকোপা, দত্তপাড়া, আদমপুর, খাগুটিয়া, খাসনগর দিঘিরপাড়, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, দরপত, টিপরদী, হরিশপুর, তাজপুর, সাদীপুর, ইছাপাড়া, বারদী, সেনপাড়া, বালুয়াদিঘির পাড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকার লিচু বাগানের গুটি পড়ে যাচ্ছে আবার গুটি থাকলেও বেশিরভাগ লিচু রোদে পুড়ে ফেটে ঝরে পড়ছে মাটিতে।

 


সোনারগাঁ পৌরসভার বাঘমুছা গ্রামের লিচু চাষি ফজলুল হক জানান, তার বাগানে ছোটবড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক লিচুর গাছ রয়েছে। প্রথম অবস্থায় প্রায় প্রতিটি গাছেই ব্যাপক মুকুল আসায় এবার লিচু নিয়ে বেশ লাভের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু গুটি আসার মোক্ষম সময়ে তীব্র রোদ আর গরমের কারণে পুড়ে গেছে গাছের অনেক মুকুল এবং এখন ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি।

 


লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত উপজেলার পানাম। এই এলাকার লিচু চাষি আব্দুল আলিম জানান, লিচুকে কেন্দ্র করেই এই অঞ্চলের হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল। কিন্তু প্রকৃতির বিরূপ আচরণে লিচুর ফলন নিয়ে শঙ্কায় তারা।

 


কৃষিবিদ দীপক কুমার বণিক দীপু বলেন, লিচুর মুকুল থেকে গুটি আসার সময় সাধারণত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তা ফলনের জন্য বেশ ভালো। এর বেশি হলে লিচু ঝরে পড়ার আশঙ্কাই বেশি। এবারের তাপমাত্রা খুবই অসহনীয়। তাই লিচু নিয়ে চাষিদের দুঃশ্চিন্তা হওয়ারই কথা।

 


আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাপমাত্রা গড়ে ৪০ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওঠানামা করছে। দাবমাত্রা এভাবেই কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলেও জানা যায়।

 


উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, লিচুগাছে এবার প্রচুর মুকুল আসার পরও তীব্র দাবদাহের কারণে লিচুর গুটি ঝড়ে পড়ছে ও লিচু ফেটে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা চাষি পর্যায়ে বলছি, এটা একটা চ্যালেঞ্জ।

 

 

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গাছের ওপরে পানি স্প্রে করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই রোদ ওঠার পর সেচ দেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। নিয়মানুযায়ী সেচ ও ছত্রানাশক স্প্রে করে গুটি ঝরা ও লিচু ফাটা রোধ করা যাবে।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর