শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

চার দেয়ালে বাক্সবন্দি প্রাথমিক শিক্ষা, নেই খেলার মাঠ

নুরুন নাহার নিরু

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৪  

 

# ২৭ ওয়ার্ডের মাত্র একটি স্কুলে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ আছে : সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার

 

 

শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশে অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা। এ কারণে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছেদ্য অংশের মতো থাকে খেলার মাঠ। খেলাধুলা ছাড়াও সমাবেশের আয়োজন, শ্রেণিকক্ষের বাহিরে পাঠদানের জন্য প্রয়োজন হয় একটি সুন্দর মাঠের। অখচ খেলার মাঠসহ সঙ্কুচিত হচ্ছে বিনোদনের সব জায়গায়। যেখানে প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলের সামনের শিশুদের খেলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানের খেলার মাঠ থাকার কথা।

 

সেখানে নারায়ণগঞ্জে মূল কেন্দ্র সদরের অধিকাংশ প্রাইমারি স্কুল গুলোতে খেলার মাঠ নেই। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে কিন্ডারগার্ডেন স্কুল। যেগুলোর কোনো রকম ফ্লাট বাসা ভাড়া করেই চলছে শ্রেণির কার্যক্রম। ফলে শারিরীক বিকাশের মাধ্যম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ ২৭ এবং ২৮ নং লক্ষী-নারায়ণ স্কুলটি শুধু মাত্র একটি ভবন রয়েছে। কিন্তু কোনো খেলার মাঠ নেই। একই রকম গলাচিপা শেরে বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং গলাচিপা ডি.এন সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের। এছাড়াও আরো অনেক স্কুল রয়েছে যেগুলোর স্কুলের সামনে খেলার মাঠ নেই।

 

নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, নারায়ণঞ্জে ৫৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদরের মধ্যে ১২০ টি। বন্দর উপজেলায় ৭৫টি। সোনারগায় উপজেলায় ১১৩টি। আড়াইহাজার  উপজেলায় ১২৪ টি। রূপগঞ্জ উপজেলায় ১১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চল উপজেলাগুলোতে প্রাথমিক স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমানে খেলার মাঠ থাকলেও সদরের মধ্যে অধিকাংশ সরকারি স্কুলগুলোতে মাঠ নেই। সদরের বেশির ভাগ স্কুলগুলো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জমির উপর তৈরি। যার ফলে শুধু মাত্র স্কুল ভবনটি রয়েছে।

 

কিন্তু কোনো খেলার মাঠ নেই। জানা যায়, সিটি করপোরেশনের মধ্যে ১৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয়টি হলো শুধু মাত্র ১টি স্কুলে পর্যাপ্ত মাঠ রয়েছে বাকি ১৭টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে কোনো খেলার মাঠ নেই।

 

এ নিয়ে গলাচিপা ডি.এন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শুভাশীষ রায় বলেন, সদরের মধ্যে প্রায় অধিকাংশ স্কুলে খেলার মাঠ নেই। আমাদের স্কুলে কোনো খেলার মাঠ নেই কিন্তু কিছু করার নেই। সরকারি যতটুকু জায়গা রয়েছে ততটুকু জায়গার মধ্যেই স্কুলের ভবনটি গড়া। আর বাচ্চাদের সমাবেশ বা খেলাধুলা যাই বলেন তা শ্রেণিকক্ষেই করি। আর স্কুলের ক্লাসের সামনে স্বল্প পরিমানের বারান্দা রয়েছে বাচ্চারা সেখানেই ছুটাছুটি করে। আর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য রেল লাইনের পাশে যে খালি জায়গা রয়েছে সেখানে নিয়ে যাই।

 

এ বিষয়ে শেরে বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান মিক্ষক মো. নিজামউদ্দিন বলেন, আমাদের স্কুলের সামনে আংশিক কিছু জায়গা আছে ২০-৩০ মিটারের ওই জায়গাটিতেই আমরা বাচ্চাদের সমাবেশ ও অন্যান্য যে কার্যকর্ম আছে ওখানে করি। আমাদের স্কুলে এখন বর্তমানে ৩০২ জন শিক্ষার্থী আছে এবং স্কুলের সমাবেশ হয়  সকাল ১২ টা থেকে ৩য়-৫ম শ্রেনি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের। কিন্তু শিশু থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিল সম্ভব হয় না। এছাড়া এই স্কুলে আমি ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি আগে থেকেই দেখে আসছি এই এস্কুল এরকম।

 

২৭নং লক্ষী নারায়ণ বালিকা স.প্রা.বি প্রধান শিক্ষক নুরুন নাহার বলেন, আমাদের স্কুলের খেলাধুলা ও অন্যান্য কর্যকর্ম স্কুলের পাশের মন্দিরের মাঠে করি, আর সমাবেশটা আমরা প্রত্যেক ক্লাসে ক্লাসে করাই। একটা ভালো বিল্ডি নেই এ নিয়েও বিভিন্ন জায়গায় অনেকজনকে জানানো হয়েছে। সমস্যা সমাধান না করলে এখন কি আর করার, এখানেই চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে বর্তমান ডিসি যিনি আছেন তাকেও জানানো হয়েছে, আবেদনও করা হয়েছে। এখন কি কাজ করবে পরবর্তিতে কি হবে তা পরে জানা যাবে।

 

এ নিয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুরুন্নাহার বিউটি যুগের চিন্তাকে বলেন, আমার আয়ত্তের মধ্যে শুধু মাত্র সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে এর মধ্যে মাত্র একটি স্কুলে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ রয়েছে। বাকি গুলোতে নেই। এখন সরকারি জায়গা না থাকলে তো মাঠ থাকবে না। স্কুলগুলোতে মাঠ না থাকার প্রধান কারন হলো সরকারি পর্যাপ্ত জায়গা নেই।  

 

এ বিষয়ে নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম যুগের চিন্তাকে বলেন, যে সরকারি প্রাথমিক স্কুল গুলো মাঠ নেই এগুলো এরকম ভাবেই চলে আসছে। এরকম নয় যে আগে এখানে মাঠ ছিলো কিন্তু এখন নেই। সরকারি পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে তো আর মাঠ করে দেওয়া যায় না। কেউ তো কারো জায়গা দিবে না মাঠ করে দেওয়ার জন্য। তবে হ্যাঁ মূল অফিসে আবেদন করা আছে বাচ্চাদের খেলার জন্য যেন প্রাইমারি স্কুলগুলোতে মাঠের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর