শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় রাজপথ থেকে পিছটান

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

 

‘স্বার্থ থাকলে আসি না থাকলে নাই’ এমনই একটি প্রবাদের রূপ উন্মোচন করলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন এরা কেউ বর্তমানে বিএনপির আন্দোলনকে ঘিরে রাজপথে থাকতে রাজি নয়। তারা এসেছিলেন তাদের যার যার নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করতে কিন্তু দিন শেষে স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় তারা ব্যাকফুটে চলে গেছেন।

 

জানা গেছে, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম ইসলাম মান্নান দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিজেকে ব্যাপক ভূমিকার রাজনীতিবীদ হিসেবে জাহির করেছেন। যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে দ্বাদশ নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়ন হাসিল করা। যেহেতু তার বিপক্ষে সেখানে হেভেওয়েট কেউ ছিলো না সেহেতু সে নিজে সুযোগটা হাসিল করে নিতে চাইছিলেন। কারণ সেই আসনের সাবেক এমপি রেজাউল করিমের বেশি একটা জনপ্রিয়তা না থাকায় মান্নান চিন্তা করেছিলেন তিনিই মনোনয়ন পাবেন কিন্তু শেষ সময়ে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ায় মান্নান বিএনপির দফায় দফায়কৃত আন্দোলন থেকে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে যান।

 

জানা গেছে, এই মান্নান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থেকে বেশি প্রধান্য দিতেন বসুন্ধরা গ্রুপের কিছু কর্তাদের কথা তাদের না নির্দেশেই আজকে মান্নান রাজপথ ছেড়ে আন্দোলন থেকে পিছপা ছিলেন বলে মনে করছে অনেকেই। অপর দিকে আড়াইহাজার বিএনপির নেতা হিসেবে সুপরিচিত নারায়ণগঞ্জ-২ আড়াইহাজারের সাবেক সাংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর। বিএনপির বিরোধী দল থাকায় বহু দিন থেকেই বিএনপির রাজপথ থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন এই নেতা। কিন্তু গত ২০২২ সালে হঠাৎ উন্থান হয় এই নেতার। তাকে আগে থেকেই আড়াইহাজারে সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

 

গত নির্বাচনের পর সর্বশেষ ২২ সালে হঠাৎ রাজপথে বিএনপির দফায় দফায়কৃত আন্দোলনে যোগদান করেন। অবশেষে এক বছর বিএনপির সকল আন্দোলনে তুখোড় ভূমিকা রাখেন। বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে আড়াইহাজার থেকে ব্যানার ফেস্টুনে আসতেন এই আঙ্গুর। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর পর থেকে এই তিনমাসের কঠোর আন্দোলনে তিনি ও তার লোকেরা ছিলেন রাজপথে থেকে উধাও। নেতাকর্মীরা বলছে, এই আতাউর রহমান আঙ্গুর দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনের জন্যই মূলত রাজপথের লড়াই এসেছিলেন। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় অনেকটাই হতাশ হয়ে পরেছিলেন তিনি।

 

অবশেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কোন ছোট দল থেকে অংশ নেওয়া ইচ্ছা পোষন করলে সেটা সকলের সামনে উন্মোচন হয়ে আসলে উনি সেখান থেকে পিচপা হয়ে পরেন। তিনি বিএনপি থেকে তার স্বার্থ না পাওয়ায় এখন বিএনপি থেকে আবারো সেই ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরের মতোই দূরে সরে আছেন। হয়তো আবারো কোন এক নির্বাচনে তাকে রাজপথে দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া ও আরো রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন।

 

নেতারা বলে থাকে এই মোশারফ স্বার্থ থাকলেই রাজপথে আসেন। এবার তার স্বার্থ ছিল একটু আলাদা উনি চেয়েছিলেন বর্তমান সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হতেন তাহলে তার পদে উনি সভাপতি হয়ে যেতেন। তার সকল আশায় ধূলোবালি পড়ায়, উনি এখন রাজপথ থেকে উধাও হয়ে আছেন। কোন প্রকারের খোঁজ খবর ও রাখছে না নেতাকর্মীদের। বিএনপির এই নেতারা স্বার্থ থাকলেই রাজপথে থাকবে স্বার্থ ছাড়া বিএনপিকে কোন মূল্যায়ন করার সময় নেই।

 

সূত্র মতে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিকে আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করতে এই সকল নেতাদের উপর আস্থা রাখলে তার সেই সিদ্ধান্ত অবশেষে ভূল প্রমান দিয়েছেন এই নেতাকর্মীরা। তারা কেউ বিএনপিকে তাদের মন থেকে ভালোবেসে আন্দোলন নামেনি তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতেই এসেছিলেন। কিন্তু তা হাসিল না হওয়ায় বিএনপি থেকে অনেকটাই পিচপা হয়ে আছেন এই স্বার্থ হাসিলকারী নেতারা।

 

তারা কেউ কেউ সভাপতি ও আবার কেউ কেউ মনোনয়ন পেয়ে এমপি হওয়ার লোভ লালসা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যই ছিলো না তাদের। যা বর্তমানে প্রমান হচ্ছে প্রতিটি মুহুর্তে, যাকে ঘিরে এমন মান্নান, আঙ্গুর ও মোশারফের মতো লোকেরা দলকে সুসংগঠিত বা দিতে নয় সব সময় নিতেই আসে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছে, এরা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ না করলে ও তাদের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের থেকে আওয়ামী লীগসহ অন্য অন্যদলের নেতাকর্মীদের সাথে বেশি সখ্যতা। তারা বিএনপির রাজনীতিকে মূল্যায়ন করতে পারলে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সকল পোগ্রামে রাজপথে থাকতেন। কিন্তু তা না করে শুধু একদিন মান্নাকে গত ২৭ জানুয়ারী অল্প কিছু লোক নিয়ে ঢাকায় পোগ্রামে অংশ নেয়। তাকে ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি।

 

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এই মান্নান ঢাকায় ছিলেন যাকে ঘিরে উনি সম্মান রক্ষার্তে অনুষ্ঠানে কোন রকমভাবে অংশ নিয়ে ফটোশেসন করে চলে যান। তার পর ৩০ অক্টোবর  তাকে রাজপথের আন্দোলনে কোন মতেই দেখা যায়নি। তা ছাড়া আতাউর রহমান আঙ্গুর ও মোশারফকে বিএনপির কোন নেতাকর্মী ফোন দিয়ে পায়নি। তারা কাউর খোঁজ খবর রাখেনি। তারা বলে থাকে আবারো ৫ বছর সময় আছে নিজের কাছে সময় দেই, আবারো নির্বাচন আসলে তার আগে একুট রাজপথে থাকলেই হয়ে যাবে। তারা এমন মন্তব্য করছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবি, এই ধরনের সুবিধাভোগী নেতাকর্মীদের দিয়ে দল সুসংগঠিত নয় ধ্বংস হয়। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর