রোববার   ১৯ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

ধামগড়-মুছাপুরের মত বন্দর উপজেলা কী মিনি পাকিস্তান হতে যাচ্ছে?

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৪  

 

 

# মাকসুদের বাবা রাজাকার রফিক স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিলো
# গিয়াসউদ্দিন, আমিন উদ্দিন, মতি মিয়া ও আ. হামিদকে নৃশংস হত্যা করে রাজাকার রফিক
# উপজেলা জুড়ে মসজিদে মসজিদে গিয়ে অবৈধ টাকা বিলাচ্ছে রাজাকার পুত্র মাকসুদ

 

স্বাধীনতার পূর্বে বর্তমান ধামগড় ও মদনপুর ইউনিয়ন নিয়ে ছিলো অবিভক্ত ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ। তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার এম.এ রফিক। যে কিনা স্বাধীনতার পরেও ওই এলাকাটি মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রেখে ছিলো। পরবর্তীতে মুছাপুর ইউনিয়নে তার ছেলে আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। কিন্তু দায়িত্বে থাকাকালীন আনোয়ারের মৃত্যু হলে উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান হয়ে আসে মাকসুদ হোসেন।

 

বাবার মত তিনিই মুছাপুর ইউনিয়নকে মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রেখেছে। এবার ইউনিয়ন ছেড়ে তার দৃষ্টি পুরো উপজেলায়। আগামী ৮মে বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে মোট ৪জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াইটা হবে তিনজনের মধ্যে। যেটাকে স্বাধীনতার পক্ষে এবং বিপক্ষের লড়াই হিসেবে দেখছেন বন্দরবাসী।

 

প্রার্থীদের মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ রশিদ, দুই যুগের বেশি সময় ধরে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি দু’জনের একজন বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তার চাচা লতিফ সর্দার ছিলেন একজন কুখ্যাত রাজাকার। সেই হিসেবে তিনি রাজাকার পরিবারের সন্তান। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা কটুক্তি ও আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে বির্তকের জন্ম দিয়েছেন। আরেকজন হলেন কুখ্যাত রাজাকার এম.এ রফিকের ছেলে মাকসুদ হোসেন। মাকসুদ পুত্র মাহমুদুল হাসান শুভ ড্যামী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছে।

 

মাকসুদ হোসেন ছিলেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পদত্যাগ করে উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সহ বিভিন্ন মানুষের জমি জবর দখল, নদী দখল, অবৈধ বালু ব্যবসা, মাদক ব্যবসার শেল্টার দেয়া, মারপিট, চাঁদাবাজি, হোন্ডাবাহিনীর মহরা সহ নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মুছাপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। ভয়ে কেউ তার এবং তার ছেলে শুভ বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস পায়না। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও মুছাপুরকে মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রেখেছে এই পরিবার । জুলুম নির্যাতন, খুন, বর্বরতায় এই পরিবারটির ইতিহাস অনেক পুরনো। মাকসুদ হোসেনের পূর্বসূরীদের অতীত কিছু অপকর্মের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো,

পুরো পরিবারই নাম লিখিয়ে ছিলেন রাজাকারের খাতায়:

মাকসুদের বাবা কুখ্যাত রাজাকার রফিকের ঘৃণিত কর্মকান্ডের ইতিহাস সবারই জানা। রফিকের বাকি ভাইয়েরাও নাম লিখিয়েছিলেন রাজাকারের খাতায়। মাকসুদের চাচাতো ভাই ও সেকেন্ড ইন কমান্ড ইকবাল হোসেন তার সাথে ছায়ার মত লেগে থাকে। রাজাকার আব্দুস সামাদের ছেলে এই ইকবাল হোসেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান মাকসুদের দাদা ছিলেন মাঈনুদ্দিন। ওনার ৪ ছেলে রফিক হোসেন, আব্দুল মালেক, আব্দুস সামাদ, ও গোলাম মোস্তফা। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে রফিক ছিলেন একজন ব্যবসায়ী ঠিকাদার, আব্দুল মালেক ছিলেন আদমজি জুট মিলের একজন লাইন সর্দার। এছাড়াও আব্দুস সামাদ ও গোলাম মোস্তফা অন্য পেশায় জড়িত ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা সবাই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজাকারের খাতায় নাম লেখায়। যুদ্ধের সময় রাজাকার গোলাম মোস্তফাকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে হত্যা করেন বলে শোনা গেছে।

 

ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধ কোষ’, ‘শান্তিকমিটি ১৯৭১’ ও রীতা ভৌমিকের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ’ বইয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজাকারদের তালিকা থেকে রফিক, আব্দুস সামাদ, আব্দুল মালেক ও গোলাম মোস্তফার নাম পাওয়া গেছে। যাদের উভয়ের পিতা হলেন মাঈনুদ্দিন।

 

মাকসুদের বাবা রাজাকার রফিকের আমলনামা:

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক বই এবং গবেষনাগ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, মাকসুদের বাবা রাজাকার রফিক ছিলো অবিভক্ত ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। স্বাধীনতার পরেও ধামগড় ইউনিয়নে এই রাজাকার ও তার পরিবারের লোকজনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যাহত ছিল। তাদের এই দুর্র্ধষ কর্মকান্ড নিয়ে ২০০১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় ‘নারায়ণগঞ্জ ৩০ বছরেও রফিক বাহিনীর সন্ত্রাস কমেনি’ ধামগড়ের মানুষ আতঙ্কিত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

 

ওই প্রতিবেদনে কুখ্যাত রাজাকার রফিক ও তার সন্ত্রাসী ছেলেদের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনে, রফিক রাজাকারের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী ছেলেদের একের পর এক হত্যাকান্ডের তথ্য তুলে ধরা হয়। যেখানে রাজাকারের ছেলে বলার অপরাধে কুঁড়িপাড়া বাজারে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা,

 

যুদ্ধের সময় রফিকের রাজাকার হয়ে উঠা, ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল তার নেতৃত্বে ধামগড় গ্রামের বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন, আমিন উদ্দিন, মতি মিয়া ও আ. হামিদকে নৃশংস হত্যা, যুদ্ধের সময় ১৮টি গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া, ৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রফিকের বাহিনী গুলি করে সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের হত্যার লোমহর্ষক বর্ননা তুলে ধরা হয়ে ছিলো ওই রিপোর্টে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও রাজাকার রফিক ও তার ৪ পক্ষে ৮ ছেলের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও অগাধ সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়ে ছিলো।

 

১৯৬৪ সালে রাজাকার রফিক হিন্দু মুসলমান রায়াটের সময়, হিন্দুদের প্রায় দেড়শ বিঘা  জবর দখল করে নেয়। রফিক ও তার আত্মীয় স্বজনরা। লাঙ্গলবন্দ, চিড়ইপাড়া, চাপাতলী গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর চরম নির্যাতন চালায়। তারা হিন্দু নারীদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে। যার ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা, ভিটাবাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে যায়। হিন্দুদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি রফিক গংয়েরা আত্মসাত করে। লাঙ্গলবন্দ এবং কুড়িপাড়ায় তাদের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

 

রফিকের জীবদ্দশায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার দিন পর্যন্ত খুনের তালিকা

 

বন্দর থানা এলাকার রামনগর গ্রামের মগা প্রধান নামের এক ব্যক্তিকে সোনাচরার ডর্কইয়ার্ডের ভেতরে মাকসুদের বাবা ভাইরা মিলে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। ধামগড় ইউনিয়নের আইছাইল্লা মুন্সি নামক একজন ব্যক্তিকে দিনে দুপুরে কুড়িপাড়া বাজার থেকে শত শত মানুষের সামনে থেকে তুলে রফিকের বাড়িতে নিয়ে রামদা দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ কলই ক্ষেতে ফেলে রাখে। এ ব্যাপারে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হলে বিচারে রফিক গংদের যাবজ্জীবন সাজা হয়। আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্ট হয়ে সকল কারাবন্দীদের মুক্তি ঘোষণা করলে রফিক গংরা অল্প দিনের সাজা ভোগের পরই মুক্তি পেয়ে যায়।


১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল ধামগড় ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির মাষ্টারে বাড়িতে তাকে খুন করার উদ্দেশ্যে গিয়ে তাকে ধরতে না পেরে তার বড় ভাই গিয়াসউদ্দীন, নিকট আত্মীয় আমিনুদ্দীন, মতিউর রহমান কে রফিকের বাড়িতে ধরে নিয়ে এসে রাতে তাদেরকে কেটে টুকরো করে নদীতে ফেলে দেয়। ওই সময় ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা করেনি।

 

যুদ্ধকালীন সময় রফিকের খুন ও অগ্নিসংযোগ:

 

যুদ্ধ চলাকালীন সময় রফিক তার ভাইদের এবং দুই ছেলে ওমর আলী এবং তার রাজাকার বাহিনীদের নিয়ে ১৮টি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে ১২জন আওয়ামী লীগের কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে। গ্রাম গুলো হচ্ছে, কুড়িপাড়া, লালখারবাগ, চাপাতলী, গোকুলদাসের বাগ, ধামগড়, নয়ামাটি, আমৈর, বটতলা, বঙ্গশাসন, হরিপুর, আনন্দ নগর, সরাইল, কুতুবপুর, খোসের ছড়া, সেনের বাড়ি, জোলাবাড়ি ইত্যাদি। সেদিন খুন হয়ে ছিলেন, কুড়িপাড়া গ্রামের মুন্তু, খালেক, লালখারবাগের ছিটু মুন্সি, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ, ছব্দর আলী, বছরুদ্দিন, বঙ্গশাসন এলাকার নাবালিকা শাহিদা, আব্দুল রব, সোনারগাঁও কুতুবপুর এলাকার আইয়ুব আলী, আব্দুল জাব্বার, ফুলহর এলাকার মিয়াদউদ্দিন, ধনমিয়া, চাপাতলি এলাকার মুজাফ্ফর হোসেন, আব্দুল গফুর, খোছেরছড়া এলকাার জলিল মিয়া, ধামগড় গ্রামের নূর ইসলাম, নয়ামাটি গ্রামের আব্দুল হামিদ, ইদ্রিস আলী, কুটিরবন্দ গ্রামের আবুল হাসেম।


রাজাকার রফিক ও তার ভাইদের এমন নৃশংস কর্মকান্ডের প্রতিশোধ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা রফিকের ভাই মোস্তফা সহ কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা করে। কিন্তু অনেক চেষ্টার পর রাজাকার রফিককে ধরতে ব্যর্থ হয় মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দালালী আইন পাস করেন। তখন রফিক গংদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ লোকেরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঢাকা জেলা জজ রফিক সহ তার ছেলে আত্মীয় স্বজন, রাজাকারদের মধ্যে ১৮জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। কিন্তু খুনি মোস্তাফ যখন বেআইনিভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষতা দখল করেন সে সময় এই দালালদের তিনভাগের দুই ভাগ সাজা মাফ করে দিলে অল্প সাজা খেটেই তারা মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে।

 

স্বাধীনতার পর রাজাকার রফিক ও তার সন্তান আত্মীয় স্বজনদের দ্বারা সংগঠিত হওয়া হত্যাকান্ডের সংক্ষিপ্ত বণর্না :

 

১৯৯৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী লাঙ্গলবন্দ চিড়ইপাড়া এলাকায় রাজাকার রফিক, তার ছেলে আনোয়ার, মাকসুদ হোসেন, মুন্সি, মোয়াজ্জেম হোসেন কালু, ভাগিনা বিল্লাল মিলে প্যারালাইজড রোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক ভুইয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় উল্লেখিতদের আসামী করে বন্দর থানায় মামলা এয় মামলা নং ১১ (২)৯৪।


১৯৯২ সালের ২২ আগস্ট রাজাকার রফিকের ছেলে মাকসুদের বড় ভাই কালুর সাথে গরুর মাংস কেনা নিয়ে সামান্য কথা কাটাকাটির হলে, নিরীহ কসাই নবী হোসেনকে কেটে টুকরো টুকরো কওে বস্তাবন্দী করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।  এ ঘটনায় মাকসুদের ভাই আনোয়ার, মোর্শেদ মুন্সী, কালু, ভাগিনা বিল্লাল কে আসামী করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয় মামলা নং- ২২(৮)৯২।

 

২০০৩ সালে অক্টোবর মাসে লাঙ্গলবন্দের যোগী পাড়া এলাকার প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল কাজীর ছেলে  যে কিনা সম্পর্কে মাকসুদের চাচাতো শ্যালক মহসিনকে নৃশংস ভাবে খুন করে। তার মাথা কেটে উপস্থিত মানুষের সামনে কাটা মাথা দিয়ে কুড়িপাড়া স্কুল মাঠে ফুটবল খেলেছিলো। এ ঘটনায় মাকসুদের ভাই আনোয়ার, ভাগিনা বিল্লাল, ভাগনী জামাই (সাত খুনের আসামী) সেলিমকে আসামী করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।

 

মামলা নং -৭(১০)০৩। রফিকের ছেলেকে রাজাকারের ছেলে বলার অপরাধে ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে লালখার বাগ এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে রাজাকার রফিক ও তার ছেলে আনোয়ার ওমর, ভাগনি জামাই সাত খুন মামলার আসামী সেলিম। এ ঘটনায় বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয় মামলা নং-১২(৪)৮৬।

 

২০০৪ সালের মে মাসে মাকসুদের ভাই আনোয়ার, ফুপাতো ভাই সালাউদ্দিন, ভাগিনা বিল্লাল, ভাগ্নি জামাই সেলিম, ভাতিজা সম্রাট ও তুহিন গংরা মুরাদপুর গ্রামের দেলোয়ারকে হত্যা করে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয় মামলা নং-২৪(৫)০৪।


সামান্য বাস ভাড়া নিয়ে ঝগড়ার জের ধর রাজাকার পুত্র মাকসুদের তাই আনোয়ার, ভাগিনা বিল্লাল, ফুপাতো ভাই সালাউদ্দীন ওই বাস মালিক পাঠানটুলি এলাকার মোশারফকে হত্যা করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়।


১৯৯৮ সালে জুন মাসে রাজাকার পুত্র মাকসুদের ভাই আনোয়ার, ভাগ্নি জামাই সেলিম মদনপুর চাঁনপুর দেওয়ানবাগ এলাকার জুলহাসকে হত্যা করে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় একটি একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলা নং ১৯/৬/৯৮। 

 

১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসে সেলিম, আনোয়ার, বিল্লাল তিন জন মিলে আদমজী মিলের শ্রমিক, সুরু মিয়াকে চাঁদার জন্য আদমজী জুট মিল ঘাট থেকে বিকেল ৫টায় কুড়িপাড়া ধরে নিয়ে আসে, নদীর পাড়ে নৌকায় রেখে তার দুই হাত বগল পর্যন্ত কেটে নেয়। এ ঘটনায়  সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নং- ০৯ (০৮)৯৮।  তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসামীদের ১৭ বছর সাজা প্রদান করেছিলেন।

 

২০০৩ সালের অক্টোবার মাসে মাকসুদের ফুফাত ভাই সালাউদ্দিন মুরাদপুর এলাকার নিলুফাকে হত্যা করে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নং- ৪(১০)০৩। এছাড়াও ২০০৩ সালের মার্চ মাসে মুরাদপুর এলাকায় নূরা ও বাবুল নামের দুই সহদোর ভাইকে হত্যা করে মাকসুদের ভাগ্নি জামাই সালাউদ্দিন। এ ঘটনায় বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয় মামলা নং-৩৪(৩)০৩

 

মাকসুদের চাচা মতিন, রাজাদার মালেক, সামাদ রাজাকারের ছেলে ইকবাল মাকসুদের প্ররোচনায় চাপাতলি গ্রামের নান্নু কাঠ মিস্ত্রির ছেলে  মনির হোসেন কে হত্যা করে। নান্নু  ছিল মতিনেরই ফার্নিচার হাউজের মিস্ত্রি। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়।

 

মাকসুদ ও তার ছেলের অপকর্ম:

 

বাবার মত মাকসুদের রয়েছে একাধিক স্ত্রী। প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে দ্বিতীয় বিয়ে করা স্ত্রীকে দেয়নি মর্যাদা। সেই স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া কন্যা সন্তানকে বাবার সেহ্ন থেকে বঞ্চিত করেছে। পাশাপাশি স্ত্রীর বাবার বাড়ির সম্পত্তির ভাগের জন্য তাদের উপর বিভিন্ন সময় চালিয়েছে জুলুম নির্যাতন। সাম্প্রতি সময়ের দ্বিতীয় স্ত্রী সুলতানা বেগম মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলার আবেদন করেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে ২০২৪ সালে ২৪ এপ্রিল দুপুরে বন্দর থানায় এই মামলা দায়ের হয়। এর আগে ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর যৌতুক নিরোধ আইনে মাকসুদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করে ছিলেন সুলতানা বেগম।

মাকসুদের ভূমিদস্যুতা ও লুটপাটের খতিয়ান:

 

২০১০ সালের ৩০ জুন হইতে এখন পর্যন্ত জৈনক আলাউদ্দীনের নামে গোকুলদাসেরবাগ চৌরাস্তা মোড়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের কমার্শিয়াল লীজকৃত প্রায় ১৪হাজার২৫০ ফুট এবং সরকারি রেলওয়ের ৬৯ হাজার ৫০০ বর্গ ফুট জায়গা জবরদখল করে এলাকার লোকদের দোকান করে দেয়ার নামে ২৭৫জনের প্রত্যেকের থেকে ২/৩ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

যেখানে তাদেরকে উন্নত মানের টিনশেড দোকান করে দেয়ার কথা ছিলে সেখানে নিম্ন মানের ইট দিয়ে কোন রকম টিনশেড করে এক থেকে দেড়শ লোককে দোকান বুঝিয়ে দিয়েছে। বাকিরা এখনো দোকান বুঝে পায়নি। বাকিদের কাছ থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার মত আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে কেউ দোকানের জন্য দেয়া টাকা ফেরত চাইতে সাহস পায়না, তার পেটুয়া বাহিনীর ভয়ে। ভোক্তভোগীদের মধ্য থেকে দুইজন বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও কোন সুরাহায় পায়নি।

 

এছাড়াও রেলওয়ের ভূমিতে সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে এক তলা একটি নিজস্ব মার্কেট তৈরি করে পজিশন বাবদ দোকানদারদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা করে বিক্রি করেছে। অপর একটি ভবন সে নিজস্ব কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতো। যা পুরোটাই রেলওয়ের জমির উপরে। সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে নেওয়া এসব অর্থ দিয়ে ২ঝই ও ঋঘঋ  নামে পরিবেশ দূষনকারী দুটি ইটভাটা নির্মান করে।

 

নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর এনায়েতনগর এলাকার নিয়াজুল হক রানা ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে এক বন্দর বার পাড়া মৌজায় ,আর এস দাগ নম্বর ২০৫, এস এ দাগ নাম্বর ৮৪২, মোট ৩৭ শতাংশ জমি ক্রয় কওে  চারপাশে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করে। বেশ কিছু বছর পূর্বে ওই ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য ভারতে গেলে এ সুযোগে রাতের আধারে মাকুসদ হোসেন ওই রানার ওই জমিতে এক্সেভেটর মেশিন ডুকিয়ে,জমির মাটি কেটে নিয়ে কেটে পুকুরে পরিণত করে ফেলে।

 

জমি মালিক ক্ষতিপূরন দাবী করলে তাকে হত্যার হুমকি ধামকি দিয়ে চলেছে। মাকসুদ সোনালী পেপার মিলস কর্তৃপক্ষের লাঙ্গলবন্দ মৌজার প্রায় ৬ বিঘা জমি ও ৬ বিঘা পুকুর দখল করে রেখেছে। যার মালিকরা প্রাণ ভয়ে জায়গার আশেপাশে ও আসতে পারছেনা।

 

চাপাতলী এলাকার নামিরা মসজিদের নামে জোরপূর্বক লালখারবাগ এলাকার ছিটু মুন্সির ছেলের কাছ থেকে ৪ শতাংশ জায়গা  জোরপূর্বক ক্রয় করে ১৬ শতাংশ জারগা দখল করিয়া নিয়েছে। ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়’ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এবং তার সাংঙ্গপাংঙ্গদের মাধ্যমে ১০ বছরে ৬টি গ্রামে প্রায় ২ লাখ গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ও সেগুলো বৈধ করে দেওয়ার নাম করে প্রায় ৭২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খরব প্রকাশিত হয়েছিল।

 

মাকসুদ পুত্র শুভর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড:

 

দাদা বাবার মত মাকসুদ হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ নিজেও একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। বর্তমানে মুছাপুর এলাকার ভাইজান হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে এই শুভ। তার রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী। যারা ওই এলাকার শুভর হোন্ডা বাহিনী হিসেবে পরিচিত। সেই সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রতিদিন এলাকার হোন্ডার মোহরা, চাঁদাবাজি, নদী দখল, তীর্থ স্থানের জমি দখল, অবৈধ বালু ব্যবসা, মাদকের ব্যবসার শেল্ডার দেওয়া, ব্যক্তিগত কার্যালয়ের নামে টর্চার সেল তৈরি এমন কোন অপকর্ম নেই যা শুভর নেতৃত্বে তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা করছেনা। শুভ বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পায়নি ইউপি মেম্বার, পুলিশ সদস্য, ও গণমাধ্যমের কর্মীরাও।

 

পুলিশকে মারধর :

 

২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে লাঙ্গলবন্দ বাসস্ট্যান্ডে টহল ডিউটিতে থাকা কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা চালায় মদ্যপ অবস্থায় মাহমুদুল হাসান শুভর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। মটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চাওয়া পুলিশের উপর এ হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ওই রাতে পুলিশ মাহমুদুল হাসান শুভকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় এএসআই শফিউল্লাহ বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-২৬-১২২২। এ ঘটনায় শুভকে গ্রেপ্তারের পর ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বের হয় মাহমুদুল হাসান শুভ।

 

ইউপি সদস্যকে মারধর :

 

২০২২ সালের ১৪ মার্চ ধামগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য শরফুদ্দিনকে অস্ত্রের মুখে রাস্তা থেকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে সোনালী পেপার মিলের ভেতরে গড়ে তোলা তার টর্চার সেলের ভেতরে লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে শুভ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা।

 

এ ঘটনায় মেম্বার শফুরউদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা রাজাকার রফিকের নাতি ও মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ, আমিনুল ইসলাম, জরিফ, রানা, হানিফা, সোবহান,অন্তর,খাইরুল, সাইফুল, নাদিম সহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১৮/২০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে বন্দর থানার একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-২২-৩-২০২২।

 

এমন একটি কুখ্যাত পরিবারের সদস্য মাকসুদ হোসেন এবার মুছাপুর ইউনিয়ন ছেড়ে বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান পদের উপর নজর দিয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হতে তিনি শুরু থেকে অবৈধ টাকার ছড়িয়ে যাচ্ছে। বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকার কিশোর গ্যাং এখন সবাই মাকসুদ হোসেনের অনুসারী।

 

হোন্ডা বহর, প্রাইভেটকার মহরা, প্রতি ইউনিয়নে শতাধিকের উপরে ক্যাম্প নির্মান সহ নানা বির্তকিত কর্মকান্ড করে নির্বাচনী আচরন বিধি ভঙ্গের দায়ে ইতো মধ্যে দুই দফায় নির্বাচন কমিশন থেকে শোকজ পেয়েছেন তিনি। দুইবারই তিনি নির্বাচন কমিশন কাছে লিখিত ভাবে দু:খ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এমন ব্যক্তির বন্দরের মত একটি শান্তিপূর্ন উপজেলার এলাকায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসলে বন্দর উপজেলা এবং এলাকাবাসীর ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বন্দরের সচেতন নাগরিকরা।

 

এদিকে বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন মাকসুদ বিভিন্ন এলাকার মসজিদগুলিতে গিয়ে ২/৩ লাখ টাকা করে দিচ্ছে। এভাবে এই রাজাকার পুত্র অবৈধ আয়ের টাকা বিলিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য জোর অপচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয় তার বিরুদ্ধে কঠো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি উঠেছে। অনেকেই প্রশ্ন করছে মাকসুদের এই টাকা আয়ের উৎস কি? সে এই টাকার আয়কর দিয়েছে কিনা বিষয়ে সরকারের আয়কর বিভাগ ব্যাবস্থা নেবে বলে বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সচেতন মানুষ আশা করছে।

 

এই বিভাগের আরো খবর