রোববার   ১৯ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

নিজ দলের চাপে চ্যাপ্টা মুকুল-মাকসুদ  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৬ মে ২০২৪  

 
বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুইদিন এর মধ্যেই নির্বাচনী মাঠে থাকা না থাকা নিয়ে দুই বিতর্কিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে রয়েছে নানা সংশয়। এরা নিজ দলকে বিতর্কিত করে এবার উপজেলা পরিষদকে বিতর্কিততায় রূপান্তরিত করতে মরিহা হয়ে উঠেছে। এই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিতর্কের আমলনামা নিয়ে হৈ চৈ লেগে গেছে বন্দর জুড়ে।

 

 

এরা দুইজন হলেন, বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল ও জাতীয় পার্টির ঘোষিত বহিস্কৃত নেতা ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেন। এরা দুইজনই নিজ দলের নেতাদের কাছ থেকে বেঈমানের তকমা পেয়েছে। এবার বন্দর উপজেলা নির্বাচন বিরোধী লিফলেট বিতরণ করে মুকুলকে চাপে ফেলে দিল খোদ মহানগর বিএনপি।

 

 

নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন বর্জন নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড নানা বক্তব্যে দিলে ও তা কানে নেয়নি খোদ বন্দর বিএনপির বহু নেতাকর্মীরা। কিন্তু যখনই দ্বাদশ নির্বাচনের মতো করে লিফলেট বিতরণ শুরু হলো বন্দরে এর পর থেকেই মুকুলকে সমর্থক দেওয়া বহু বিএনপির নেতাকর্মী এখন পাঁ পিছিয়ে নিয়েছে যা মুকুলের অনেক বড় একটি ক্ষতি বলা চলে।

 

 

তা ছাড়া ও এই মুকুলকে নিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নানা জ¦ালাময়ী বক্তব্যে দিয়ে যাচ্ছে এমনকি সরকারী দলের দালাল বলে ও তাকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যাকে ঘিরে ভোটের লড়াইয়ে এটার একটি বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিএনপি'র নেতাকর্মীরা ভয়ে ভোট দিতে আসবেনা। অনেক কর্মী ইতিমধ্যেই ভয়ে কোনঠাসা হয়ে পরেছে।

 

 

যার মাধ্যমে বলা হচ্ছে ঘনিষ্ঠ এমপির বক্তব্যের পর এবার নিজ দলীয় নেতারাই তার শেষ কপিনে প্যাড়াক পুতে দিলো। অপর দিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি মাকসুদ আহামেদকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

 

এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি অত্যন্ত সুশৃংখল একটি দল। এই দলের টেইন অফ কমান্ড অত্যন্ত মজবুত। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করার সুযোগ এই দলে নেই। শীগ্রই প্রেস রিলিজের মাধ্যমে মাকসুদের বহিস্কার আর্দেশ কার্যকর করা হবে। যাকে ঘিরে দলীয় চাপে চ্যাপ্টা হয়ে পরলেন মুকুল-মাকসুদ।
 

 


এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ একজন রাজাকারের পুত্র। জানা জেছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর ভোল পাল্টায় মাকসুদের বাবা রাজাকার রফিক। কিছুদিন আত্মগোপনের পর আবার ফিরে আসে এলাকায়, আবির্ভূত হয় স্বরূপে। গড়ে তোলে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। ছলে বলে কৌশলে নির্বাচিত হয় ইউপি চেয়ারম্যান।

 

 

আবার অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে এই কুখ্যাত রাজাকার। কয়েক বছর আগে রাজাকার রফিকের সন্ত্রাসীরা কুড়িপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে। আলাউদ্দিনের অপরাধ, তিনি রফিকের ছেলেকে বলেছিলেন- ‘রাজাকারের ছেলে’। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে বন্দরে।

 

 

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বন্দর কমান্ড মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করে। আইনের ফাক গলে বেরিয়ে আসে রাজাকার রফিক ও তার সন্ত্রাসীরা। রাজাকার রফিক বিয়ে করেছে ৮টি। ৮ পক্ষে তার ছেলে রয়েছে ২২ জন। প্রায় সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী।

 

 

রাজাকার রফিকের ছেলেদের বিরুদ্ধে বন্দর থানা সহ দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা,চাঁদাবাজি,নারী নির্যাতন,মাদক,অস্ত্র মামলা সহ একাধিক মামলা হয়েছে। তাছাড়া রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনের ছেলে শুভ এর বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা,চাঁদাবাজি ও অপহরণ সহ একাধিক মামলা হওয়ার কারণে সারা বন্দর জুড়ে তারা আধিপত্য বিস্তার করে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে।

 

 

তা ছাড়া আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য মাকসুদ হোসেন এবং তার পুত্র মাহমুদুল হাসান শুভ দুইজনই অংশগ্রহণ নিয়েছেন। আর মাসকুদ তার ছেলে শুভকে অংশ করিয়েছেন এই কারণে যে তিনি তার গুন্ডাবাহিনীর মাধ্যমে নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে জয় লাভ করার ক্ষেত্রে।

 

 

তাছাড়া এই মাকসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে নিজ পরিবারে তার স্ত্রী ও মেয়েকে নির্যাতনের যা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করা ও হয়েছিলো। তা ছাড়া ও এই মাকসুদের পরিবার ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এবার তিনি তার বাহিনী দ্বারা বন্দরবাসীকে নির্যাতনের লক্ষ্যেই উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার চিন্তা মাথায় গেতেছেন।

 


অপর দিকে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপির বহিস্কৃত বিতর্কিত নেতা আতাউর রহমান মুকুল যিনি ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠনের পূর্বে তিনি ছিলেন বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এরপরও ২০১৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় স্থায়ী এমপির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেয়নি এই মুকল।

 

 

তাছাড়া তিনি ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা এড. তৈমুর আলম খন্দকারকে গোপনে গোপনে সমর্থন করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেননি। আর বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তৈমূর আলম খন্দকারকে বহিস্কার করা হয়।

 

 

তবে সেই নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকারকে বন্দরে এলাকায় পুরোপুরি সাপোর্ট দিয়ে নিজেও প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, বিতর্কিত মুকুল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ২০০৮ সালের পর থেকে দলীয় কোনো মিটিং কিংবা মিছিলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি। বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে বেশী দেখা যায়।

 

 

শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে গিয়ে নৌকার ফুলের তোড়া উপহার পেয়েছিলেন তিনি। এমনকি একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে গালমন্দ করলেও মুকুল কোনো প্রতিবাদ করেনি। এদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর পক্ষে না থেকে সেলিম ওসমানের পক্ষে সরাসরি ভোট প্রার্থনা করেন।

 

 

সেই একইভাবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি বর্জন করলেও মুকুল তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সেলিম ওসমানের পক্ষ সরাসরি ভোট চায়। এরপর তাকে বিএনপি থেকে তাকে বহিস্কারও করা হয়। তিনি একই ভোল পাল্টানো স্বার্থবাদী নেতা। তিনি নিজ স্বার্থে দলের বিরুদ্ধে থেকে শুরু করে সকলভাবে ক্ষতি করতে পারে।

 

 

যাকে ঘিরে এই মুকুলকে চায় না নিজ দলসহ বন্দরবাসী। যাকে ঘিরে এটা সুপষ্ট হয়ে উঠেছে নির্বাচনে এবার বাজেয়াপ্ত হারাবে মুকুল-মাকসুদ। যার পরে বন্দরে থাকা তাদের জন্য অনেকটাই ট্রাফ হয়ে যাবে এমনটাই বলছে অনেকেই।    এন. হুসেইন রনী   /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর