রোববার   ১৯ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

পাঁচটি আসনের তিনটিতে দাপট

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৬ মে ২০২৪  

 

 

রাজনীতিতে শামীম ওসমানের একটি বদনাম রটেছে সম্প্রতি। তিনি অনধিকার চর্চা করেন বেশি। নিজের সংসদীয় এলাকা ছেড়ে নিজেকে জাহির করতে অন্য সাংসদের এলাকায় নাক গলান। নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের সবকটিতেই মাঝেমধ্যে নিজেকে জাহির করে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছেন শামীম ওসমান। এতে ত্যক্ত-বিরক্ত অন্যান্য আসনের সাংসদরা।

 

সম্প্রতি নিজ আসনের সদর উপজেলার নির্বাচন দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি মামলা জনিত কারণে ঝুলে থাকলেও এটির সুরাহা না করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের অধীন বন্দর উপজেলা নিয়ে সরব হতে দেখা গেছে শামীম ওসমানকে। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে (সোনারগাঁ) সবসময়ই অতীতে নজর ছিল শামীম ওসমানের। অনেকটা সফল হয়েছিলেনও বটে। জাতীয় পার্টির দখলে ছিল সোনারগাঁ।

 

লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি থাকাকালীন সময়ে সোনারগাঁয়ে নানা বিষয়ে মাঝে মধ্যেই সরব হতেন শামীম ওসমান। তবে দিন বদলেছে। প্রভাবও কমেছে শামীম ওসমানের। বর্তমান সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের পরিবারেরও সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। তাই বিগত ১০ বছরের মতো এখন আর আগের মতো সুবিধাজনক দাপট দেখাতে পারছেননা শামীম ওসমান।

 

আর নারায়ণগঞ্জ-১ আসন (রূপগঞ্জে) তো দাপট দেখানোর তেমন সুযোগই পাননি শামীম ওসমান। কেননা, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) এমপি হওয়ার পর থেকেই রূপগঞ্জে তাঁর একচ্ছত্র দাপট ছিল। এছাড়া গত মেয়াদে গোলাম দস্তগীর গাজী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। যার ফলে মন্ত্রীর কথার উপর ছড়ি ঘোড়ানোর সুযোগ পাননি শামীম ওসমান।

 

এবারও রূপগঞ্জে শামীম ওসমানের দাপট দেখানোর তেমন কোন সুযোগ নেই। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের (আড়াইহাজার) এর এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক জখম হন। তাছাড়া নজরুল ইসলাম বাবু ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাই বরাবরই আড়াইহাজারে নমনীয় ছিলেন শামীম ওসমান। এবার তো আর কথাই নেই জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবে (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) দায়িত্ব দেয়া হয়েছেন নজরুল ইসলাম বাবুকে। তাই সেখানে শামীম ওসমানের যে সহজাত অভ্যাস দাপট প্রদর্শন তাঁর সুযোগ নেই।


নিজের সংসদীয় আসন ছেড়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নানা সমস্যার বিষয়ে অযাচিত নাক গলিয়ে সমালোচিত হন শামীম ওসমান। বিগত সময়ে অন্যান্য সংসদীয় আসনেও নাক গলিয়েছেন শামীম ওসমান। তবে এবার সবজায়গাতেই সেই দাপট কমেছে। একেতো নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে সবচাইতে উন্নয়ন কম হয়েছে শামীম ওসমানের সংসদীয় আসনের ফতুল্লা এলাকায়।

 

সিটি কর্পোরেশনের অধীন থাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ যেখানে উন্নয়নের সুবাতাস পেয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে ফতুল্লায় এর উল্টো চিত্র। এখানে  উপজেলা নির্বাচন বন্ধ। গত দেড় যুগের বেশি অর্থব নেতাদের দখলেই গোটা উপজেলা। ফতুল্লার রাস্তাঘাট ভাঙা চোরা। গোটা এলাকার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। শামীম ওসমানও নির্বাচনের পর থেকে ফতুল্লায় তেমন একটা যাননা। সেখানকার মানুষ চায় সিটি কর্পোরেশনের আওতায় চলে আসতে। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও নিম্নগামী। নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে।

 

অথচ এই এলাকার এমপি শামীম ওসমান নাক গলান অন্য সংসদীয় এলাকার বিষয়ে। অন্য এলাকা নিয়েই তাঁর যত মাথাব্যথা। অবশ্য সমালোচকরা বলেন, এই নাক গলানোর পেছনে ভিন্ন কারণ রয়েছে। ব্যবসায়ীক নানা স্বার্থ সেখানে থাকতে পারে। নিজের এলাকার জনগণ নানা সময়ে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যখন আর্তনাদ করছে সেদিকে তাকানোর সুযোগ নেই শামীম ওসমানের। কিন্তু ভিন্ন এলাকায় প্রভাব বিস্তারের সুযোগ খোঁজেন তিনি। নিজের ভাইয়ের সংসদীয় এলাকা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এবারের মেয়াদে কিছুটা অনধিকার চর্চা করে নাক গলানোর সুযোগ থাকলেও সোনারগাঁয়ে আগের দাপট অব্যাহত রাখা এবার শামীম ওসমানের জন্য দুষ্কর।

 

আর রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে শামীম ওসমানের সেই সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে। অনেকে বলছেন, রাজনীতির দীর্ঘ সময়ে শামীম ওসমানের উচিৎ নিজের এলাকার মানুষের উন্নয়নে মনোনিবেশ করা। এখানকার নাগরিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা। আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সময়ে যেখানে গোটা দেশের উন্নয়ন চিত্র বদল হয়েছে, সেখানে শামীম ওসমানের এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার দৈন্যদশা শামীম ওসমানকেই নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এখান থেকে তার উত্তোরণের চেষ্টা করা উচিৎ। না হলে মানুষ আর তাঁর ফাঁকা আওয়াজে সাড়া দেবে না।

এই বিভাগের আরো খবর