শনিবার   ১৮ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

মাঠ দখলে মরিয়া কেন শামীম ওসমান

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২৪  

 

 

শামীম ওসমান নামটি আসলে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হবেনা এটি ভাবাই যায়না। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন ৮ মে। এই নির্বাচন নিয়ে আবারো শামীম ওসমানের কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন সদর উপজেলার (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা। তবে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার দোহাই দিয়ে গত দেড়যুগেরও বেশি সময় ধরে সদর উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।

 

উন্নয়নের মানদণ্ডেও শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লা নেহাৎ পেছনে। এখানে সমস্যার শেষ নেই। জনজীবনে স্বস্তি নেই। নিজের এলাকাতেই যখন সমস্যা জর্জরিত এবং শামীম ওসমানের নিজ আসনের উপজেলা নির্বাচন যখনই হয়না, তখন তার এলাকার বাইরে অন্যান্য উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অযাচিত নাক গলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি বন্দর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে শামীম ওসমানের ব্যতিব্যস্ত হওয়া নিয়ে এই প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে। শামীম ওসমান মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদে রয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের কোন পদেও নেই। নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের বন্দর উপজেলাটি শামীম ওসমানের বড় ভাই সাংসদ সেলিম ওসমানের আয়ত্তাধীন।

 

অথচ সেলিম ওসমানের চাইতে বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন শামীম ওসমান। মাঠ দখলে শামীম ওসমানের এমন মরিয়া ভাব জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। বন্দর উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ রশিদকে নিয়ে বুধবার স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এসময়  নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা উপস্থিত ছিলেন।

 

তবে এখানে সেলিম ওসমান ছিলেননা। যদিও বন্দরে এমএ রশিদকে সবার আগে সমর্থন দিয়েছেন সেলিম ওসমান। দানবীর হিসেবে খ্যাত সেলিম ওসমান বন্দরে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হলেও শামীম  ওসমানের অযাচিত হস্তক্ষেপে অনেকে বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছেন। সেলিম ওসমান যেখানে বন্দরে নিজ হাত খুলে উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির চিন্তায় মগ্ন উল্টোদিক শামীম ওসমানের নিজের নির্বাচনী এলাকার দুরাবস্থা লাঘবে তিনি কোন কার্যকরী ভূমিকাই নিতে পারেননি। ফতুল্লাবাসী শামীম ওসমানের ব্যর্থতায় বারবার সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন। তাহলে শামীম ওসমান বন্দরের মাঠ দখলের জন্য কেন এতো মরিয়া?

 

এতে তার কি স্বার্থ? রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, শামীম ওসমানের মাঠ দখলের এমন হস্তক্ষেপে সেলিম ওসমানের নির্বাচনী এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। শামীম ওসমানের উচিৎ নিজের এলাকায় আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। অন্য উপজেলার প্রার্থীকে নিয়ে শামীম ওসমানের এমন বাড়াবাড়ি ভিন্ন বার্তাই বহন করে। তাও আবার সেলিম ওসমানের মতো একজন গ্রহণযোগ্য জনপ্রতিনিধি থাকার পরেও। বন্দরে গিয়ে মাত্র তিনদিন আগে শামীম ওসমান সেখানকার দুই প্রার্থীকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন এতে ওই এলাকার নির্বাচনী পরিবেশও বাধাগ্রস্ত হবে। অনেকে নানা আশঙ্কার কথাও প্রকাশ করেছেন।

 

নিজের এলাকা বাদ দিয়ে শামীম ওসমান বন্দরের মাঠ দখল করে কী উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান? অনেকে বলছেন, শামীম ওসমান নিজের এলাকায় নির্বাচন আটকে রেখে অন্যত্র প্রভাব বাড়াতে চান। নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার সমস্যা নিয়েও শামীম ওসমান এমন অযাচিত হস্তক্ষেপ করার নজির রয়েছে।

 

স্বরাষ্টমন্ত্রীর সাথে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদের সাক্ষাতের ছবিতে শামীম ওসমানের উপস্থিতি বন্দরে তার মাঠ দখল করার মরিয়া হওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শামীম ওসমানের উচিৎ আগে নিজের এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, উপজেলা নির্বাচন না হওয়ার সমাধান করা, তাছাড়া রাস্তাঘাট- ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান এবং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মানোয়ন্নন ঘটানোর চেষ্টা করা।

এই বিভাগের আরো খবর