বুধবার   ২২ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

রাজাকার তকমাই কাল হতে পারে মাকসুদের

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৪  

 

বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বন্দরের কুখ্যাত রাজাকার রফিকের ছেলে মাকসুদ হোসেন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যেভাবে উঠে পরে লেগেছে যা নিয়ে একদিকে চলছে হাস্যরস অন্যদিকে বইছে সমালোচনা ঝড়। রাজাকার পুত্র মাকসুদ মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড অনেকটা তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবেই জানেন সমগ্র বন্দরবাসী।

 

জানা গেছে, মাকসুদের বাবা রফিক রাজাকারের বাহিনীর ভয়ে দেশ স্বাধীনের পরেও আতঙ্কে দিন কাটিয়েছে মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অসংখ্য নৃশংস হত্যাকান্ড হতো এই রফিক রাজাকারের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী ছেলে মাকসুদও ঘটিয়েছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড। তা ছাড়া টানা তিনবার খুটির জোরে মুছাপুর ইউনিয়ন বাসীকে জিম্মি করে চেয়ারম্যান তকমায় দীর্ঘদিন চললেও এবার পুরো উপজেলা নিজের আওতায় নিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।

 

এখন চেয়ারম্যানের চেয়ার পাওয়ার স্বপ্নে বন্দরে ইতিমধ্যেই টাকা ছিটিয়ে ভোট ক্রয় শুরু করেছেন তিনি। এমনকি রক্ত চক্ষু গরম করে অনেকে ভয় দেখিয়ে ভোট চাইছেন সে সময় ভয়ে টু শব্দ করে না মানুষ। তার বাপ-চাচা, ভাই-ব্রাদার ও পুত্রসহ পরিবারের প্রায় সকল পুরুষের বিরুদ্ধেই হত্যা, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক সিন্ডিকেট, ধর্ষণে সহযোগিতা ইত্যাদি বিভিন্ন কুকর্মে আছে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে এই রাজাকার পুত্রসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ এই রাজাকার তকমাই কাল হতে পারে এই কুখ্যাত মাকসুদের।

গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) বাদ মাগরিব কলাগাছিয়ার ইউনিয়নের ঘাড়মোড়া এলাকায় আসন্ন বন্দর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ রশিদের দোয়াত কলম প্রতীকে নির্বাচনী উঠান বৈঠক মাকসুদ হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ রশিদ বলেন, যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে, পতাকা পদদলিত করছে, আজকে তাদের সন্তানদের সাথে আমাকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে।

 

তার দাদা, বাবা, চাচা সবাই সরকারী তালিকা ভুক্ত রাজাকার, আজ সে আপনাদের কাছে এসে ভোট চায়। রাজাকারের সন্তান আজকে ভোট ভিক্ষা করছে, মানুষের রক্ত চুষে খেয়ে টাকা কামিয়েছে এই রফিক রাজাকারের ছেলে মাকসুদ হোসেন। সেই টাকা দিয়ে সমাজ নষ্ট করছে। ৭১ এ আমরা দায়িত্ব নিয়ে ছিলাম আজকে আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ধামগড় ইউনিয়নে তার পরিবার ২৯জনকে জবাই করে হত্যা করেছে। ৪জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে।

 

আজকে যখন তারা ভোট চাইতে আসে তখন কেন প্রশ্ন করেন না আপনাদের সেই সন্তানরা কই। তার বাবা করে ৭ নাকি ৮টা বিয়া ২২ জন ছেলে মেয়ে। সে কয়টা করছে ঠিক নাই। পত্রিকায় দেখলাম এক বউ মামলা করছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমি যদি যোগ্য হই তাহলে আপনারা আমাকে একটি ভোট দিয়ে জয়ী করবেন।

 

গত (৩০ মার্চ) উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র ছাড়ার পরপরই সেলিম ওসমান মাকসুদকে নিয়ে বলেছেন, ‘ইতিমধ্যে আমি একটি এলাকায় চেয়ারম্যান খোঁজা শুরু করেছি। তাকে নিয়ে কাজ করব। এখন দুইজন আমার অমতে নির্বাচন করার চিন্তা ভাবনা করছে। আমি বলিনা একজন তো নিজেই বলেন রাজাকার সন্তান। মাকসুদ প্রমাণ করে দিয়েছেন উনি রাজাকার। আমি কখনো এটাকে ধরি নাই। মানুষের জন্য কাজ কর। আগের পাপ বাপ দাদার পাপ ভুলে যাও। পাপে বাপেকেও ছাড়ে না।

 

মাকসুদ সাহেব আমি আজকে এতগুলো মানুষের সামনে আবারো বললাম আল্লাহর কাছে মাফ চান। এবং আবার ফিরে আসেন আমি আপনাকে কিছু বলব না। তবে মনে রাখবেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা। যদি ভালোয় ভালোয় কথা শুনেন তো শুনবেন। না হলে মুগুর কিভাবে বানাতে হয় দেখবেন। মুগুরের মাধ্যমে কিন্তু আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে। আমি বললাম কথা দিলাম আপনি আগামী কালকের মধ্যে উইথড্রো করেন।

 

আপনার সঙ্গে ৪ জন চেয়ারম্যন যেভাবে আমার কথা শুনেছেন আমার সামনে বসেছে আপনি মাসুদ সাহেব আপনিও আসেন। আপনার এত টাকা কোথায় থেকে হল মাসুদ সাহেব। আপনি বাড়ি বাড়ি টাকা দেওয়া শুরু করেছেন। আমার কাছে আমার হিসাব পরে। প্রায় ৩ কোটি টাকা ইতিমধ্যে আপনি খরচ করে ফেলেছেন। ঐদিন নাইরে নাতি খাবলাইয়া খাবলাইয়া খাতি। আপনি ভুলে যাবেন না বাংলার মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। যদি আপনি আপনার রাজাকার পরিচয়টা দেন।

 

আপনি আমার সন্তান হিসেবে জানেন। মাথায় টুপিও দাঁড়ি লাগিয়ে বইলেন না আমি মানুষের উপকার করি। কেন এই রমজান মাসে মানুষকে আপনি বিভ্রান্ত করছেন। আপনি মহিলাদের বলছেন আমাকে ভোট দিলে ৩০০ করে টাকা দিবেন। মহিলাদের ৩০০ টাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। আপনি কেন একটি মানুষকে খারাপ বানানোর চেষ্টা করছেন। আমি আপনাকে নিষেধ করলাম। আমার ভবিষ্যত প্রজন্ম আমার মৃত্যু হলো কিন্তু আপনাকে ছাড়বে না। আপনি কেন বসলেন না আপনি কেন আলোচনা করলেন না। আপনি মনে করলেন আমার জন্য একটি গরম চাদর ও দুই প্যাকেট মিষ্টি ও আমার বউয়ের জন্য একটি শাড়ি দিয়ে আপনি উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন। ঐদিন ভুলে যান।’

 

এদিকে জানা গেছে, নির্বাচনকে ঘিরে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পরছেন কুখ্যাত রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেন। এদিকে আরো জানা গেছে, মাকসুদের বাবা রাজাকার রফিক বিয়ে করেছে ৪টি। ৪ পক্ষে তার ছেলে রয়েছে ৮ জন। প্রায় সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। রাজাকার রফিকের দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় ছেলে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, অবৈধ অস্ত্র রাখা প্রভৃতি অপরাধে ১০টির বেশি মামলা ছিল। পুলিশের হাতেও বেশ কয়েকবারও গ্রেফতারও হয় এই দুধর্ষ সন্ত্রাসী।

 

প্রতিবারই জামিনে বেরিয়ে এসে এলাকায় কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। দ্বিতীয় স্ত্রীর তৃতীয় ছেলে মুর্শেদ ওরফে মুন্সীও দুধর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে বন্দর থানায়। চতুর্থ ছেলে মোয়াজ্জেম ওরফে কালুর বিরুদ্ধে রয়েছে ২ হত্যাসহ ৯টি মামলা। তা ছাড়া এই মাকসুদ ও তার ছেলে মাহমুদুল হক শুভ বিগত দিন থেকেই মুছাপুর ও ধামগড়বাসীর উপরে রোলার কোস্টার চালায়।

 

শীঘ্রই পুরো উপজেলায় এই রোলার কোস্টার কায়েম অবহৃত রাখতে এবার উপজেলাকে টার্গেট করেছে রাজাকার পুত্র মাকসুদ। এবার তিনি সুযোগ পেলেই বন্দর উপজেলাকে গিলে খাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আর তাদের পরিবারের মাধ্যমে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার নকশা তৈরি করছেন। বর্তমানে বন্দর ও পুরো জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই রাজাকার পুত্র মাকসুদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নাখোশ রয়েছেন। এস.এ/জেসি 
 

এই বিভাগের আরো খবর