বৃহস্পতিবার   ১৬ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

পুরনো স্বপ্নে বিভোর মুকুল

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৪  

 

বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন দিন দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বিভিন্ন বিতর্কিত নেতাদের অংশগ্রহণে অসন্তোষের ছায়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে এই নির্বাচনে বিতর্কিত মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল চেয়ারম্যান পদে চিংড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে এই মুকুল তার সাবেক দলীয় নেতাদের থেকে শুরু করে স্থানীয় সকলের কাছেই তিনি দুই নৌকায় পা দেওয়া চরিত্রহীন নেতা হিসেবেই সুপরিচিত।

 

জানা গেছে, সর্বশেষ আতাউর রহমান মুকুল ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় না থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আদিষ্ট থেকে তিনি বন্দরবাসীর কোন কাজেই আসেনি। উনি শুধু উনার পকেট ভারী করতেই ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। এরপর দল ক্ষমতায় শীঘ্রই চলে আসবে এমন আভাস পেয়ে ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।

 

এবার দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করাসহ কঠোর আন্দোলন করে ও ব্যর্থ হওয়ায়। এবার ২০২৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে আবারো সেই চেয়ারম্যানের চেয়ার পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠেছে। এখন তিনি একা নয় উনার পুরো পরিবার নির্বাচনী প্রচারণায় নামিয়ে দিয়েছে।

 

এদিকে দ্বাদশ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী একে.এম সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দল তাকে বহিষ্কার করেন। যাকে ঘিরে এই নির্বাচনে বিএনপির কোন নেতাকর্মী তার পাশে নেই। তা তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পূর্ব মুহুর্তে বুঝতে না পারলেও বর্তমানে তিলে তিলে টের পাচ্ছে। আর যতই পাচ্ছে ততই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরছে এই বিতর্কিত মুকুল।

 

সূত্র বলছে, বিতর্কিত নেতা মুকুলের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ডের কবিলের মোড়। তবুও তিনি বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান হতে মরিহা হয়ে আছেন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠনের পূর্বে তিনি ছিলেন বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এরপরও ২০১৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় স্থায়ী এমপির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেয়নি এই মুকুল।

 

তা ছাড়া তিনি ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা এড. তৈমুর আলম খন্দকারকে গোপনে গোপনে সমর্থন করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেননি। আর বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তৈমূর আলম খন্দকারকে বহিষ্কার করা হয়। তবে সেই নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকারকে বন্দর এলাকায় পুরোপুরি সাপোর্ট দিয়ে নিজেও প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।

 

অভিযোগ রয়েছে, বিতর্কিত মুকুল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ২০০৮ সালের পর থেকে দলীয় কোনো মিটিং কিংবা মিছিলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি। বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে বেশি দেখা যায়। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে গিয়ে নৌকার ফুলের তোড়া উপহার পেয়েছিলেন তিনি। এমনকি একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে গালমন্দ করলেও মুকুল কোনো প্রতিবাদ করেনি।

 

এদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর পক্ষে না থেকে সেলিম ওসমানের পক্ষে সরাসরি ভোট প্রার্থনা করেন। সেই একইভাবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি বর্জন করলেও মুকুল তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সেলিম ওসমানের পক্ষ সরাসরি ভোট চায়। এরপর তাকে বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়। এমনকি তিনি তার বলয়ের কিছু নেতাকর্মীদের আন্দোলন সংগ্রাম না করার জন্য নির্দেশ ও দিয়েছিলেন।

 

যারা তার কথা শুনেনি সেই সকল বিএনপির নেতাকর্মীদের বেছে বেছে মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলো এই কথিত মুকুল। তা ছাড়া বর্তমানে বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও বিএনপির সমর্থন ছাড়াই উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা তো দূরের কথা সাধারণ জনগণকে আতাউর রহমান মুকুলকে সমর্থনে তার পাশে নেই কেউ। আর উপজেলার মানুষ সিটি এরিয়ার নেতাকে আর চায় না। তারা চায় বন্দর উপজেলার জনপ্রতিনিধি।

 

যিনি সময়ে উপজেলার মানুষের পাশে থাকবেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। সেই প্রেক্ষাপটে মুকুল পুরোই ভিন্ন তিনি নির্বাচনে এসেছেন আর চেয়ারে বসেত চাইছেন তার স্বার্থের লোভে। এর বাহিরে জনগণের কোন কাজেই মুকুল বিগত দিনে ছিলো না সামনে ও থাকবে না এই বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়েছে বন্দর উপজেলাবাসী।

 

বিভিন্ন ভাষ্য অনুযায়ী শোনা যাচ্ছে, শীঘ্রই মুকুলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৮ মে বন্দর উপজেলায় ভোট গ্রহণের আগমুহুর্ত কতটুকু মাঠে থাকতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর