সোমবার   ১৩ মে ২০২৪   বৈশাখ ৩০ ১৪৩১

মুখে কুলুপ জেলা-মহানগর আ.লীগের শীর্ষ চার নেতার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২৪  

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের শেখ রাসেল পার্ক ও নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটকে কেন্দ্রকরে ধর্মীয় লেবাসধারী কতিপয় উগ্র-সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিবর্গের অকথ্য ও উস্কানীমূলক উগ্র-বক্তব্যের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ জেলার ১০২টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী, ছাত্র-যুব সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক যৌথবিবৃতি দিয়েছে।

 

শেখ রাসেল পার্ক প্রসঙ্গে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জড়িয়ে নানা অশ্রাব্য মন্তব্য করেছে ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুর রহমান। এছাড়া হেফাজত নেতা মাওলনা আব্দুল আউয়ালও নানা কটূক্তি করেছেন। এই দুই হেফাজত নেতার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার পুরো নারায়ণগঞ্জ।

 

তবে অজ্ঞাত কারণে আইভীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করলেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা মুখ খোলেননি।

 

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ছিলে মেয়র আইভী। তাছাড়া আওয়ামী লীগের টিকেটে গত দুই মেয়াদের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মেয়র আইভী। শেখ রাসেল পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ শিশু সন্তান শেখ রাসেলের নামে।

 

নারায়ণগঞ্জবাসীর নানা আবেগের সাথে মিশে গেছে শহরের ফুসফুস খ্যাত শেখ রাসেল পার্ক। আওয়ামী লীগের নেতারা তো বটেই বিভিন্ন বামসংগঠন, সামাজিক সংগঠনসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতারা যখন হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার সেখানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা কাকে তুষ্ট করতে এব্যাপরে চুপ আছেন সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

 

অনেকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের এই কর্মকাণ্ডে নিন্দা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, তাহলে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে থাকার মানে কি, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকা আওয়ামী লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রাখছে, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে প্রকাশ্যে একটি পক্ষ অথচ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন এটি অবশ্যই নিন্দনীয়।

 

এদিকে ১০২টি সংগঠনের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের শেখ রাসেল পার্ককে কেন্দ্র করে শহরের চিহ্নিত কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠী অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এর আগেও বহুবার তারা বিভিন্ন ইসু তৈরি করে নগরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার পায়তারা করেছে।

 

ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে মাওলানা নামধারি এইসব ব্যক্তি মূলত অকথ্য ভাবে তাদের জঙ্গি চরিত্রকে জাহির করে চলেছে। তারা যে কাউকে হাত ভেঙ্গে দেয়া, পা ভেঙ্গে দেয়া, লাশ ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়।

 

গত ১৯ এপ্রিল তারা সংবাদ সম্মেলন করে অত্যন্ত আপত্তিকর, হিংসাত্মক, আগ্রাসী ও উগ্র বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শহরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরির পায়তারা করেছে।

 

তারা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল করে প্রায়সই আক্রমনাত্বক বক্তব্য দিয়ে যায়, রাসেল পার্ককে ‘মিনি পতিতালয়’ আখ্যা দেয়, সেখানে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউটকে (আর্ট কলেজ) উড়িয়ে দেয়ার হুমকী দেয়।

 

আমরা এই উগ্রবাদী ব্যক্তিদের এহেন দুষ্কর্মের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি এরা দেশ, জাতি, স্বাধীনতা ও সংস্কৃতির শত্রু। শহরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সাভাবিক রাখার প্রয়োজনে আমরা মাওলানা নামধারি আবদুল আউয়াল ও ফেরদাউসের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি।”

 

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনসমূহের মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সাস্কৃতিক জোট, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট (আর্ট কলেজ), সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটি, খেলাঘর জেলা কমিটি, উদীচী জেলা কমিটি, কমিউনিস্ট পার্টি জেলা কমিটি, বাসদ জেলা কমিটি, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা কমিটি, ন্যাপ জেলা কমিটি, গণসংহতি আন্দোলন জেলা কমিটি, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন জেলা কমিটি, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র জেলা কমিটি, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন জেলা কমিটি, শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা কমিটি, মহিলা পরিষদ জেলা কমিটি, মহিলা ফোরাম জেলা কমিটি, যুবলীগ মহানগর কমিটি, যুব ইউনিয়ন জেলা কমিটি, ছাত্র ইউনিয়ন জেলা কমিটি, ছাত্রফ্রন্ট জেলা কমিটি, ছাত্র ফেডারেশন জেলা কমিটি, বঙ্গসাথী ক্লাব, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ জেলা কমিটি, প্রগতী লেখক সংঘ, প্রগতী সাহিত্য পরিষদ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র জেলা কমিটি, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমি, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদ, ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন, সুবর্ণগ্রাম সংস্কৃতি অঙ্গন, সমমনা, আনন্দধারা, শহুরে গায়েন, বসন্তবাহার সংগীত একাডেমি, অনন্যা সংগীত একাডেমি, অশোক স্মৃতি সংগীতাঙ্গণ, কথন আবৃত্তি সংসদ, কণ্ঠকালা আবৃত্তি সংসদ, ষড়জ সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গণ, চন্দ্রবিন্দু শিশু মনন বিকাশ কেন্দ্র, মাইম ফেইস, এই বাংলায়, গঙ্গাফড়িং, নারায়ণগঞ্জ হাওয়াইয়ান গীটার পরিষদ, উঠান থিয়েটার, ক্রান্তি খেলাঘর, একতা খেলাঘর, ঝিলিমিলি খেলাঘর, অগ্নিবন্যা খেলাঘর, অর্চনা একাডেমি, সুপ্রিয়া একাডেমি, ইকরা ইত্যাদি।

এই বিভাগের আরো খবর