সোমবার   ১৩ মে ২০২৪   বৈশাখ ৩০ ১৪৩১

কোনঠাসা মাকসুদ-মুকুল, ফর্মে রশীদ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২৪  

 

# আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে শোকজ করা হয়েছে মাকসুদকে,

# চাপ আসতে পারে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মুকুলের উপরেও

# জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত : এম এ রশিদ

 

আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবারেও সবচেয়ে বেশি আলোচনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ রশিদ। যদিও তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় আছেন আরও তিন প্রার্থী।

 

তাদের মধ্যে, দু’জনকে সবচেয়ে বেশি হেভিওয়েট ধরা হলেও তার মধ্যে একজনকে ইতিমধ্যেই শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন। যিনি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় পার্টি নেতা মাকসুদ হোসেন। আর বাকি একজন তথা বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেষতক মাঠে থাকতে পারবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

 

কেননা, দীর্ঘদিন ওসমান পরিবারের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে রাজনীতি করেও এবার তাদের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নির্বাচনে থাকতে চাইছেন আতাউর রহমান মুকুল।

 

সূত্রানুযায়ী, আগামী ৮ মে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এবার নির্বাচন করছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশিদ (দোয়াত-কলম), সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল (চিংড়ি মাছ), মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি মাকসুদ হোসেন (আনারস) এবং তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ (হেলিকপ্টার)।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মাসের ১৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করে রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ। পরে ২২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে আশ্চর্য্যজনকভাবে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান।

 

২৩ এপ্রিল চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে প্রচারণাও শুরু করেন তারা। নানা প্রতিশ্রুতিতে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। এরইমধ্যে আবার গতকাল ২৭ এপ্রিল দুপুরে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে জাতীয় পার্টি নেতা ও চেয়াম্যান পদপ্রার্থী মাকসুদ হোসেনকে শোকজ করেছে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আনন্দ।

 

শোকজ নোটিশে প্রার্থী মাকসুদ হোসেনকে বলা হয়, আপনি আপনার নির্বাচনী এলাকার অলিগলিতে শত শত পোস্টার অবৈধভাবে বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটিয়েছেন। এছাড়াও অনুমতি ব্যতিত অবৈধভাবে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন যা আচরণবিধি লঙ্ঘন।

 

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না পেলেও বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ রশীদ দলীয় সমর্থন পাচ্ছেন। কারণ এরইমধ্যে তার বিপরীতে দলেরই আরেক প্রার্থী আবু সুফিয়ান দলীয় সমঝোতায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

 

গত ১৯ এপ্রিল মদনপুরের এক রিসোর্টে আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় আবু সুফিয়ান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে রশীদের পক্ষে কাজ করার কথা জানান। পরবর্তীতে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারও করে নেন।

 

এদিকে, স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানের সরাসরি সমর্থন পাচ্ছেন এম এ রশীদ। সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও তিনি এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের রশীদকে সমর্থন দিচ্ছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে একাধিক অনুষ্ঠানে রশীদকে সমর্থন করে তিনি বক্তব্যও দিয়েছেন।

 

এমনকি গতবারের উপজেলা নির্বাচনেও সেলিম ওসমান আওয়ামী লীগের রশীদের পক্ষে ছিলেন। সেবারও বিনা প্রতিদন্দ্বীতায় বন্দর উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এম এ রশিদ।

 

জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ যুগের চিন্তাকে বলেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। তবে, এটাও বলতে চাই- প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও সক্রিয় আছেন। তারা তাদের মতো করে কাজ করছেন। তাদেরকে আমি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই নিচ্ছি।

 

তিনি আরও বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমার আত্মবিশ্বাস সবার উপরে। কারণ ৫২-৫৩ বছর ধরে আমি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমি সবসময়ই মানুষকে সাথে নিয়ে মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছি। জণগনের প্রতি আমার আস্থা আছে, জণগন আমাকে ভালোবাসে।

 

অপরদিকে, এম এ রশিদের বিপরীতে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। গত নির্বাচনে রশীদকে ছাড় দিলেও এবার বেশ শক্তভাবেই মাঠে নেমেছেন এই উপজেলার পরপর দুইবারের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল।

 

শোনা যাচ্ছে, মাঠ পর্যায়েও বেশ সমর্থন রয়েছে তার। বিএনপি বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলের হয়ে কাজ করতে এরইমধ্যে মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে বিএনপি নেতাদের।

 

জানা গেছে, দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলের নির্বাচনী গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকে অংশ নিয়েছেন সাবেক এমপি এডভোকেট আবুল কালাম পুত্র নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর আবুল কাউছার আশা।

 

২৫ এপ্রিল বন্দর ইউনিয়নের কুশিয়ারা এলাকায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মুকুলের পক্ষে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকে অংশ নেন আবুল কাউসার আশা।

 

সবকিছু মিলিয়ে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতউর রহমান মুকুলকে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

 

তাদের মতে, আতাউর রহমান মুকুল এর আগেও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে এই উপজেলায় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও এবার বিএনপির উপজেলা নির্বাচনকে বর্জন করেছে। তার উপর মুকুল বিএনপির বহিষ্কৃত হওয়ায় চেয়ারম্যান নির্বাচনে তার তেমন বাধা নেই। যদিও বন্দরের বিএনপি নেতারা যেনো তার পক্ষে কোন ধরণের কাজ না করেন সেই আহ্বান জানানো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে।

 

তবে, মুকুলকে দমানোর জন্য বড় ধরণের চাপ আসতে পারে ওসমান পরিবারের পক্ষ থেকে। কেননা, বিগত সময়ে বিএনপি নেতা থাকাবস্থায় ‘ওসমান পরিবারের রাজনীতি করেন’ এমনটাই বলে বেড়াতেন আতাউর রহমান মুকুল। এস.এ/জেসি 

এই বিভাগের আরো খবর