বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৪  


সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা খালেদা জিয়া ‘গৃহবন্দি’ রয়েছেন মর্মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ মানবাধিকার রিপোর্টে যে দাবি করা হয়েছে তা নাকচ করেছে বাংলাদেশ সরকার। বৃহস্পতিবার সেগুনবাগিচায় দু’দফা ব্রিফিং করে মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট-২০২৩ এর ‘অসঙ্গতি’ তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।

 

 

সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলমসহ জনকূটনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। বিকাল ৩টার পূর্ব ঘোষিত ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়াকে ‘গৃহবন্দি’ করে রাখা হয়েছে মর্মে যে দাবি করা হয়েছে তা নিয়ে কোনো কথা বলেনি মন্ত্রণালয়। ব্রিফিং শেষে এ নিয়ে লিখিত যে বার্তা শেয়ার করা হয় তাতেও খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গটি ছিল না।

 

 

অবশ্য পরক্ষণেই সংশোধিত বার্তা প্রচার করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দ্বিতীয় দফায় ব্রিফিং করে মুখপাত্র এবং তার টিম ক্যামেরার সামনে সংযোজিত বক্তব্যটি পড়ে শোনান। তবে তিনি এদিন মার্কিন রিপোর্ট বা কোনো বিষয়েই প্রশ্ন নিতে রাজি হননি। গণমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় সেহেলী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রকাশিত মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০২৩-এ তথ্যের অসঙ্গতি আছে বলে মনে করে সরকার।

 

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায়, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে এবং সেখানে সরকারের ভালো কাজের কোনো স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। রিপোর্ট প্রকাশের দুদিন পর (বৃহস্পতিবার) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 


এতে বলা হয়, আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন, পৃথিবীর কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি শতভাগ নির্ভুল নয়। বাংলাদেশ সরকার দেশের জনগণের মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে বলেও দাবি করা হয়।

 

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, প্রতিবেদনটিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধারণা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। এসব ধারণা ও অভিযোগ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে এবং এসব এনজিও’র অনেককে যুক্তরাষ্ট্র অর্থায়ন করে থাকে। মার্কিন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ‘গৃহবন্দি’।

 

 

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি একজন দোষী ব্যক্তি এবং নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। আরেক জায়গায় মার্কিন প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু ক্ষেত্রে ‘অতিরিক্ত শক্তি প্রদর্শন করেছে’ বলে বলা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক সহযোগীরা যে ভাঙচুর ও সহিংসতা করেছে, সেটি উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

 

 

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকার জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মেকানিজমগুলোর সঙ্গে কাজ করবে, যাতে দেশের মানুষের মঙ্গল হয় বলে প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার রিপোর্টের ‘অসঙ্গতি’ তুলে ধরলেও তা পুরোপুরি নাকচ করেনি বাংলাদেশ।

 

 

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছে যে, দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে রিপোর্টে ‘মূল্যায়ন করতে ব্যর্থই নয় বরং অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। যা এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ।

 

 

সেগুনবাগিচার মুখপাত্র এ বিষয়ে প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে এটি স্পষ্ট হবে, এটি পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।

 

 

ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মূখপাত্র বলেন,  বাংলাদেশ সরকার  আশা করে ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।

 

 

গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত ছিল বলেও দাবি করেন তিনি। অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসাও করেন বাংলাদেশ সরকারের ওই প্রতিনিধি।

 

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার, ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

 

 

সাধারণভাবে, বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক রিপোর্টটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে বলে জানান মূখপাত্র।     এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর