সোমবার   ০৬ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

প্রকাশ্যে মানুষ খুন করার হুমকি দিচ্ছে ফেরদৌস-আউয়াল!

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪  

 

# নারায়ণগঞ্জ মগের মুল্লুক কিনা সেই প্রশ্ন তুলছে নগরবাসী

 

আবারো বেপরোয়া হয়ে মাঠে নেমেছে সেই ফেরদৌস ও আউয়াল গং। তারা এই মুহুর্তে নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীর প্রাণের স্পন্দন হিসাবে পরিচিত শেখ রাসেল পার্ককে পতিতালয় বলে চরম নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে বলে নগরবাসী মনে করছে। অথচ এই শেখ রাসেল পার্কের জায়গাটি এক সময় সত্যিকার অর্থেই পতিতালয় ছিলো। ছিলো মাদক আর সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। তখন এই ফেরদৌস এবং আউয়াল গংরা কোথায় ছিলো?

 

শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানে পতিতাবৃত্তি আর মাদক ব্যবসা চলতো প্রকাশ্যে। এটা ছিলো একটি ঘিঞ্জি নোংরা বস্তি এলাকা। কিন্তু মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বহু বাধা পেরিয়ে বর্তমানের এই শেখ রাসেল পার্ক নির্মিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সর্বকনিষ্ট পূত্র শহীদ শেখ রাসেলের নামে পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে এটি সারা নারায়ণগঞ্জবাসীর নিশ্বাস নেয়ার একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রের রূপ লাভ করেছে।

 

গাছপালাহীন ইটপাথরের এই নগরীতে বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে উঠেছে শেখ রাসেল পার্ক। খুব ভোরে সেখানে গেলে দেখা যায় মধ্য বয়সী বহু নারী-পুরুষ তাদের নিজেদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য হাঁটছে এবং ব্যায়াম করছে। ফজর নামাজ পরেই এই শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে বহু মানুষ সেখানে যাচ্ছে হাঁটতে। প্রচুর গাছপালা থাকার কারণে তারা বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে আর পাচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন। অথচ ফেরদৌস আর আউয়াল গং এই অনবদ্য সুন্দর এই পার্কটিকে পতিতালয়ের সাথে তুলনা করে গোটা নগরবাসীর মনে আঘাত দিয়েছে।

 

কারণ এই পার্ক বিশেষ করে বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়, মেয়র আইভীর সম্পত্তিও নয়, বরং এটা এখন গোটা নগরবাসীর সম্পদ। এখানে গিয়ে বিশ্রাম নিতে কাউকে কোনো রকম টাকা পয়সা দিতে হয় না। তাই নগরবাসীর প্রশ্ন এমন একটি সুন্দরতম স্থানকে যারা পতিতালয়ের সাথে তুলনা করে তারা আসলে কেমন মানুষ। তারা মন মানসিকতায় কতোটা নোংরা হলে এমন বক্তব্য দিতে পারে? ফলে গোটা নারায়ণগঞ্জবাসী এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে।

 

প্রসঙ্গত, মাওলানা আউয়াল আর ফেরদৌস নারায়ণগঞ্জে মারাত্মক বিতর্কিত দুইজন মানুষ। বিগত সময়ে তারা বিভিন্ন সময়ে বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা রকম বক্তব্য দিয়ে এসেছে। কিন্তু সুবিধাবাদী এই দুই আলেমরুপী ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের একজন প্রভাবশালী এমপির সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেছেন বলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। এই দুই জনের মাঝে ফেরদৌস একজন ভয়ংকর ব্যক্তি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।

 

ইসলামী সংগঠনের নামে এই ফেরদৌস নানা রকম ব্যবসা বানিজ্যে জড়িত রয়েছে। ফেরদৌস আর আউয়াল বড় বড় কথা বললেও সব সময়েই তাদেরকে দুই প্রভাবশালী এমপির সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলতে দেখা গেছে। ফলে এই মুহুর্তে কোনো একজন এমপি তাদেরকে মেয়রের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে নগরবাসীর মাঝে।

 

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরা নিজেরাই বার বার ওই এমপির নাম ব্যবহার করে এমপিকে বিতর্কিত করেছে। ওরা এখন হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলছে। মানুষ খুন করার হুমকি দিচ্ছে। পার্কের ভেতর ঢুকে ভাংচুর করার অপরাধে ওদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালতে মামলা করেছে সিটি কর্পোরেশন। মেয়র আইভী এখন দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। ওরা মামলা ফেস না করে মানুষ খুন করার মতো হুমকি দেয়ার সাহস কোথা থেকে পায়। তাহলে এই শহর কি মগের মুল্লুক?

 

তাই এখনই আইনশৃংখলা বাহিনী এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নিলে যেকোনো অঘটনের জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে বলে নগারবাসী মনে করেন। এই সুন্দরতম পার্কটির ভেতরে ঢুকে যারা ভাংচুর চালিয়েছে ওদের বিরুদ্ধে আদালতও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে ঘরবাসী আশা করছেন।

 

এদিকে এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে তো কেউ নয়। একটা প্রতিষ্ঠানের ভেতর ঢুকে ভাংচুর করবে আর তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। এটি কেমন আবদার? তারা নির্দোষ হলে রেহাই পাবে। কিন্তু মামলা করাতে হুমকি ধমকি দেয়া এ কিসের আলামত? ‘হাত ভেঙে দেবে’ ‘পা ভেঙে দেবে’ ‘খুন করবে’ এসব হুমকির অর্থ কী? এটা কি জঙ্গি-রাষ্ট্র নাকি? ওরা এই সাহস পায় কোথায়?

 

তিনি আরো বলেন, এটা একটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। যারা অন্তরে পতিতা লালন করে বাইরে তারা সর্বত্রই পতিতা দেখে। যাদের অন্তরে আল্লাহর অস্তিত্ব বিরাজমান তারা সর্বত্র আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য অনুভব করে। আমি তো বাইরে কেবল মা, বোন, কন্যাদেরই দেখি, কোথাও তো অন্য কিছু দেখি না। এই জায়গায় যখন দিনের বেলায় অসামাজিক কাজ হতো, মাদকের বিস্তার ছিল, তখন এই বক-ধার্মিকদের বিরোধীতা দেখা যায় নাই। এর আগেও তারা ধর্ম-রক্ষার নামে নারায়ণগঞ্জে গোলযোগ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিল। এখনো ওরা ওদের সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নাই। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ওরা নতুন করে লাফালাফি শুরু করেছে বলে ধারণা করছি।

 

এদিকে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ মানুষ এই আউয়াল আর ফেরদৌসের উপর চরম ভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তারা মনে করেন ফেরদৌস গং ধর্মের নামে নানা সময়েই লম্ফঝম্ফ করে এসেছে, এখনো করছে। কিন্তু ওরা যে ধর্মকে পুজি করে কিছু ব্যক্তিকে হাত করে এসব করছে এটা এখন জানে নারায়ণগঞ্জের সবাই। নারায়ণগঞ্জ শহর এবং আপপাশের এলাকায় বাস করেন অন্তত ১০ লাখ মানুষ। তাদের মাঝে সর্বোচ্চ ২/৩ শ মানুষ ওদের অনুসারী। এদেরকে জড়ো করেই ওরা নানা সময়ে নানা রকম মিশন নিয়ে মাঠে নামে।

 

ফলে শহরের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন ধর্ম ব্যবসায়ী এই চক্র নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা কিসিমের অপকর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু যখনই প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে তৎপর হয়েছে তখনই ওরা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। অতএব আরো আগে থেকেই এরা একটি চিহ্নিত অপশক্তি হিসাবে নগরবাসীর মাঝে চিহ্নিত হয়ে আছে। এদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং র‌্যাব-১১ অধিনায়ক সজাগ থাকবেন বলে নগরবাসী আশা করছেন। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর