সোমবার   ০৬ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

বড় রাজুর শেল্টারে সাল্লু-হীরা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪  

 

ফতুল্লার কাশিপুর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী হীরা, বড় রাজু, সাল্লু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় ছিনতাই, নিরীহ মানুষকে হয়রানি, চাঁদাবাজি এমনকি হত্যা মামলাসহ অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে। এলাকার মানুষ এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই মামলা-হামলার শিকার হতে হয়। আর এ কারণে কেউই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। সাল্লু ও হীরা ফতুল্লা মডেল থানার চিহ্নিত সন্ত্রাসী।

 

থানায় ঢুকলেই চিহ্নিত আসামীদের বোর্ডে বড় করে তাদের ছবি পরিলক্ষিত হয়। দু’জনের মধ্যে হীরা ও বড় রাজু ইট, সিমেন্ট বালুর ব্যবসা করেন। তবে, পুরো ২নং ওয়ার্ডে যত বাড়িঘর নির্মাণ হয় তার প্রত্যেকটির সকল ইমারত সামগ্রী ক্রয় করতে হয় হীরা ও বড় রাজুর কাছ থেকে। অন্যথায়, মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয় তাদের। আর তা না দিলে তার লোকজন দিয়ে বাড়িঘরে হামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় রয়েছে অন্তত ডজন খানেক মামলা।

 

কে এই বড় রাজু?

এক সময় গার্মেন্টসের কাটিং ম্যান এর চাকরী করে সংসার চালাতেন আহমেদ হোসেন রাজু ওরফে বড় রাজু। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতিতে নাম লেখান তিনি। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদে অল্প দিনেই বিশাল অর্থবৈভবের মালিক বনে যান তিনি। ভাতিজা আফজালকে দিয়ে এলাকায় গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। থানা আওয়ামী লীগের ওই প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙিয়ে ফতুল্লা আদর্শনগর, প্রধান বাড়ি ও নূর মসজিদ এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করেন। ভাতিজা আফজালের গ্রুপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতেন চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও কন্ট্রাকসন ব্যবসা। এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি করতে হলে এই বাহিনীকে দিতে হয় চাঁদা। এমনকি ইমারত সামগ্রী নিতে হয় রাজুর দোকান থেকে। নয়তো ওই বাড়িওয়ালার উপর করা হতো অমানবিক অত্যাচার। কাশিপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে পঞ্চায়েত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় পর আহমেদ রাজুর প্রভাব আরও বেড়ে যায়। মূলত এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৪ মামলার আসামী আফজালকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।

 

কে এই সন্ত্রাসী সাল্লু-হীরা?

২০০৯ সালের দিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা শুরু করে দুই সহোদর ভাই সাল্লু ও হীরা। পরবর্তীতে দিনে দিনে বেপরোয়া হতে থাকে তারা। মানুষের উপর অত্যাচার, ছিনতাই, মাদকসহ তাদের দু’জনের নামে ফতুল্লা মডেল থানায় লিপিবদ্ধ হয় অন্তত ২৫টি মামলা। সাল্লু ও হীরা ফতুল্লা মডেল থানার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। থানায় ঢুকলেই চিহ্নিত আসামীদের বোর্ডে বড় করে তাদের ছবি পরিলক্ষিত হয়। দু’জনের মধ্যে হীরা ইট, সিমেন্ট বালুর ব্যবসা করেন। তবে, পুরো ২নং ওয়ার্ডে যত বাড়িঘর নির্মাণ হয় তার প্রত্যেকটির সকল ইমারত সামগ্রী ক্রয় করতে হয় হীরার কাছ থেকে। অন্যথায়, মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয় হীরাকে। আর তা না দিলে তার লোকজন দিয়ে বাড়িঘরে হামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে সে। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় রয়েছে অন্তত ডজন খানেক মামলা। সাল্লু ও তার বাহিনী আফজাল হত্যাকান্ডের পর কিছুদিন চুপ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাল্লুর নেতৃত্বে অন্তত ১৫ থেকে ২০ সদস্যের একটি কিশোরগ্যাং গ্রুপ প্রকাশ্যে মাদক বেচাবিক্রি করে বেড়ায়। দিনের আলোয় প্রকাশ্যে এলাকায় না আসলেও আড়াল থেকে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করে সাল্লু নিজেই।

 

সূত্র বলছে, সন্ত্রাসী সাল্লুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় ১৪টির-ও বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যু থেকে শুরু করে হত্যা মামলাও আছে। এতো অপকর্মের পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একেবারেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে সন্ত্রাসী সাল্লু ও তার বাহিনীর লোকজন।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মানুষের উপর এতো এতো অত্যাচার করার পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রহস্যজনক কারণে এই বাহিনীর কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। অথচ, সন্ত্রাসী সাল্লু ও হীরা ও তার বাহিনী এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত। এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে অযথাই হামলার শিকার হতে হয়। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ওই বাহিনীর অত্যাচারের শিকার হয়।

 

এ সকল অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে আলাউদ্দিন হীরাকে মুঠোফোন করা হলে যুগের চিন্তাকে বলেন, কারা এই সকল অভিযোগ দিছে? এ সময় অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে তিনি বলেন, যারা এই সকল অভিযোগ দিছে ওগো পাইলে আমি দেখমু ওরা কারা?

 

এ ব্যাপারে আহমেদ হোসেন রাজু ওরফে বড় রাজুর কাছে জানতে চাইলে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, আমার নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অপকর্ম করে তবে এর দায় আমার উপর বর্তায় না। আমি অত্যন্ত সাধারণভাবে জীবন যাপন করি। অন্যের দায় আমি নিতে যাবো কেন? 

 

সচেতন নাগরিকরা বলছে, অনতিবিলম্বে সন্ত্রাসী সাল্লু, হীরা ও বড় রাজুসহ তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জরুরী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কেননা, কোন বিষয়ে যদি কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যেতে চায় তাহলে সে কোনভাবেই আর ওই এলাকায় বসবাস করতে পারবে না। তারা খুবই ভয়ংকর। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সাধারণ মানুষ। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর