শুক্রবার   ১০ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৭ ১৪৩১

নেতৃত্ব বদল নিয়ে কী ভাবছে না.গঞ্জ বিএনপি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৪  

 

# আমি যতদূর জানি এটা পুরোটাই গুজব : গিয়াসউদ্দিন

# তাদের সম্মতিতে পরিবর্তন হলে আমরাও একমত : এড. সাখাওয়াত

# দলের স্বার্থে ভালো হলে সিদ্ধান্ত মেনে নেবো : এড. টিপু

 

বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল কোন মন্তব্য না করলেও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপির নেতৃত্ব বদল নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে খবর রটেছে।

 

বিএনপির বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, বিএনপির নেতৃত্বের পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের বিষয়টি চূড়ান্ত করতেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার কাছে গিয়েছিলেন।

 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, দুটি বিষয় নিয়ে তাদের আলাপ হতে পারে। প্রথমত, দীর্ঘদিন ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের মহাসচিব পদ ছাড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

 

সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এসে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি দলের মহাসচিব পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। অন্য কাউকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য তিনি বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মহাসচিব পদ ছাড়ার পিছনে দুটি কারণ উল্লেখ করা হচ্ছে। প্রথমত, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, হার্টের সমস্যা সহ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি পূর্ণ সময় দলের নেতৃত্ব পালন করার মতো অবস্থায় নেই।

 

দ্বিতীয়ত, তার স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার স্ত্রীকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। এই কারণেও তিনি বিএনপির মহাসচিবের পদ ছেড়ে একজন সাধারণ কর্মীর মতো দায়িত্ব পালন করতে চান। তবে সেসময় বেগম খালেদা জিয়া তাকে অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

বিভিন্ন সূত্র বলছে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকেও একই রকম আগ্রহ বা একই রকম বক্তব্য দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব। কিন্তু তারেক জিয়াও তাকে এ ব্যাপারে কোন ইতিবাচক সম্মতি দেননি বলেই জানা গেছে।

 

এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিএনপির ওপর এক ধরনের চাপ এসেছে যে, তারা যেন বিএনপির নেতৃত্ব পরিবর্তন করে। দেশের বাইরে থাকে বা দণ্ডিত কোন ব্যক্তি বিএনপির নেতৃত্বে থাকুক এটি পশ্চিমা দেশগুলো চায় না।

 

বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে এখন যারা নেতৃত্বে আছেন তারা কোন ইতিবাচক সাড়া দিতে পারেন না। আর একারণেই কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা দেশে রাজনীতি করছেন, তাদের মধ্যে থেকে আপাতত কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।

 

বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়া যেন আপাতত উপদেষ্টা বা আলঙ্কারিক পদে থাকেন। এটি নিয়ে বিএনপিতে এখন ভালোই আলোচনা চলছে।

গত বুধবার বিএনপির একজন নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ডিবিসি টেলিভিশনের রাজকাহনে স্বীকার করেছেন যে, এ নিয়ে বিএনপিতে আলাপ আলোচনা চলছে, যেন বেগম জিয়া বা তারেক জিয়ার বাইরে তারা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে সেটি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।

 

বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে যে, এই বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্যই বেগম জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলামকে ডেকে নিয়েছিলেন। তিনি আপাতত বিএনপির নেতৃত্বে থাকতে চান না।

 

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া যেহেতু লন্ডনে অবস্থান করছেন তিনিও বিএনপির নির্বাহী নেতৃত্বে থাকুক এটি বেগম জিয়া এখন চান না। আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার বিষয়টি নিয়ে বেগম জিয়া ভাবছেন বলে গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জানানো হয়েছে।

 

তবে এ ব্যাপারে তারেকের কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। তারেকের সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না যে, আসলে শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হবেন কিনা।

 

তবে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, যদি শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান না হতে পারেন তাহলে তিনি মহাসচিব পদেও থাকবেন না।

 

এ সকল ঘটনা প্রবাহের বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পদে আপাতত ভিন্ন কাউকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি নানা পত্র পত্রিকায় লেখা হলেও আমি যতদূর জানি এটা পুরোটাই গুজব। এটার কোন ভিত্তি নেই। তবে অতীতের মতোই বিএনপির হাইকমান্ডের নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিটি জেলা মহানগরে যত শুন্য পদ রয়েছে সেগুলো পূর্ণ করা হবে এমন আলোচনা হচ্ছে। যারা আন্দোলনে যথাযথভাবে ভূমিকা পালন করেনি তাদের অনেককেই কমিটিচ্যুত করে সেখানে ত্যাগীদের বসানো হবে। এটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, এটা চলমান।’

 

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান যুুগের চিন্তাকে বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এই দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যাতে রাজপথে নেতৃত্ব দিতে না পারেন সে কারণে তাকে মামলা দিয়ে রাজনীতি থেকে পেছনে রাখা হয়েছে। অপরদিকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও একইভাবে মামলা দিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করতে বাইরে রেখেছে। আমরা এই দুইজনের নেতৃত্বেই সুসংগঠিত। এই সময়ে যদি তাদের সম্মতিতে অন্য কাউকে নেতৃত্ব তুলে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তবে আমরা সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও একমত।’

 

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘জিয়া পরিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা। একসময় জিয়াউর রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তীতে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে তাদের সন্তান তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা তাদের নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ হতে বদ্ধ পরিকর। এই সময়ে যদি আপাতকালীন সময়ে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয় দলের ভালো স্বার্থে, এখানে যদি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সম্মতি থাকে, তবে আমরা সেই সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করি।’ এস. এ/জেসি 

এই বিভাগের আরো খবর