সোমবার   ০৬ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, অধিকাংশই শিশু

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৩  


কয়েকদিনের তীব্র গরমের কারণে নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নারায়ণগঞ্জ শহরের জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) ভর্তি হচ্ছেন। গত ১০ দিনের ব্যবধানে প্রায় সহস্রাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। 

 

 

চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র গরম, জলবায়ু পরিবর্তন, ওয়াসার দূষিত পানি এবং বাইরের খাবার খাওয়ার কারণেই লোকজন ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে নার্সদের এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। 

 

 

সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ১০টি বেডে সবসময় রোগী ভর্তি থাকছে। কখনো কখনো বাইরে রাখা অতিরিক্ত বেডেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। দায়িত্বে থাকা নার্সরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না।

 

 

তবে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অবস্থা গুরুতর না হলে একটি স্যালাইন পুশ করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শহরের হাজীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সজল বলেন, হঠাৎ করেই আমার বাচ্চার পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। এতে সে দুর্বল হয়ে পড়েছে। পরে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখানে একটি স্যালাইন দিয়েছে। 

 

 

ইসদাইর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, সকাল থেকেই আমার স্ত্রীর ঘনঘন বমি হচ্ছিল। দুপুরে সে অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়। একপর্যায়ে দেখি বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। পরে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ডাক্তাররা তাকে স্যালাইন দিয়েছে। দেখি স্যালাইন পুশ করার পর কী হয়। 

 

 

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র সাব নার্স মেরী রিমি দিও বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১১৫ জন করে ডায়রিয়া রোগী আসছে। দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের ধারণা, গরম কিংবা পানির সমস্যার কারণে রোগীরা ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের আগে থেকেই রোগী বাড়ছিল। কিন্তু ঈদের পর থেকে একটু বেশি পরিমাণে বাড়তে শুরু করেছে। 

 

 

সুলতানা নামে আরেক নার্স বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা কয়েকজন নার্স ছিলাম। অনেকেই বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ফোন করে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, গরমের কারণেই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। 

 

 

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রতি বছরের মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাসে গরম বেশি থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে থাকে। তাছাড়া এখন জলবায়ু পরিবর্তন, দূষিত পানি এবং বাইরের খাবারও ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। তিনি বলেন, এই সময়ে দেহের ভেতরে থাকা সুপ্ত জীবাণু নতুন করে জেগে ওঠে। গত কয়েকদিন ধরেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমি মনে করি, এই সময়ে সবারই উচিত ডায়রিয়া রোগ এড়াতে ভালো পানি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা। 

 

 

তবে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা কম। এখন প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। সারাবছর এরকমই থাকে। এই সংখ্যাটা আহামরি কিছু না। 

 

 

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান বলেন, ডায়রিয়ার চাপ একটু বেশি। আবহাওয়া এবং ঈদের ছুটির কারণে মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়েছে। এতে খাওয়া দাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

 

 

দিনে ৭০ থেকে ১০০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আসছে। কেউ কেউ একটু সুস্থ হয়ে চলে যাচ্ছে। পরে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের ভর্তি রাখা হচ্ছে। আর যাদের ছেড়ে দেওয়ার মতো তাদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।  এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর