সোমবার   ০৬ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

রূপগঞ্জে প্রতিবন্ধীদের আশার আলো অনির্বাণ

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩  



জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো কিংবা দূর্ঘটনা জনিত প্রতিবন্ধিদের চিকিৎসা ও শিক্ষার সুব্যবস্থা নেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায়। ফলে ১৬ হাজার প্রতিবন্ধি ও তার পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন চরম বিপাকে। তারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন  শিশুদের চিকিৎসা ও শিক্ষাদান করাতে পারছেন না সরকারী স্কুল না থাকায়।

 

 

তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনিবার্ণ চাইল্ড কেয়ার এন্ড রিহ্যাবিলিটি সেন্টার নামে উপজেলায় দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠলেও সরকারী ও বিত্তশালীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সংকট ও টানাপোড়ান নিয়ে তাদের যাত্রা। যেখানে ১৬ হাজারের অধিক প্রতিবন্দিদের হতাশা একমাত্র সম্বল।
 

 

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানায় যায়,  জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের মাঝে রয়েছে অটিজম আক্রান্ত, সেরিব্রাল পালসি, এএমসি, প্যারালাইসিসসহ নানা অজানা দূরারোগ্য। যার বেশির ভাগেরই স্থায়ী সমাধানের কোন চিকিৎসা আবিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞানিরা। সমাজে এ ধরনের শিশুদের বলা হয় প্রতিবন্ধি।

 

 

কারো হাত অচল, শরীরের একপাশ অবস, কেউ চোখে দেখে না , কেউ কথা বলে না , কানে শুনে না। কেউ বা হাতে কাজ করতে পারে না, কেউ হাটাচলায় ব্যর্থ। কিন্তু তাদের বেঁচে থাকার অধিকার অন্য সুস্থ্য ও স্বাভাবিক প্রাণীর মতোই। এসব শিশুদের জন্য রাজধানী ও বিভাগী পর্যায় দুএকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসালয় থাকলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায় রয়েছে অভাব।

 

 

ফলে প্রতিবন্ধি শিশু ও তার অভিভাবকরা থাকেন দুশ্চিন্তায়। প্রতিবন্ধি শিশু আফরিন । বয়স তার ৭ বছর। অন্য স্বাভাবিক শিশুর মতো কথা বলতে পারে না সে। কিন্তু কি যেন বলার চেষ্টা তার। হাতে বই নিয়ে চোখের পানি ফেলছে সে। কি সমস্যা তার জানতে চাইলে তার মামা জহির ইসলাম বলেন, তার অন্য ভাই বোনের মতো সে পড়তে চায়।

 

 

কিন্তু সে কথা বলতে ও হাটাচলা করতে পারে না। অন্য ভাই বোন যখন স্কুলে যায়, সে বাড়ি থেকে যাওয়া আসার দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলে। অপর প্রতিবন্ধি দেখভাল করার কাজে নিয়োজিত শিক্ষক যুবায়ের বলেন, আমরা অনির্বাণ চাইল্ড কেয়ার স্কুলের শিশুদের শিক্ষাদান করছি ঠিকই। তবে অভিভাবকরা সচেতন নয়।

 

 

তারা ঠিকমত স্কুলে আনতে চায় না। নানা অভাব দেখায়। তাদের কর্মব্যস্ত সময়টা বিশেষ চাহিদা সমম্পন্নদের দিতে পারে না। ফলে এ ধরনের বাচ্চারা শিক্ষা বঞ্চিত হয়। আমাদের প্রচেষ্টা থাকে ওই ধরনের পরিবারকে তাদের শিশুদের স্কুলমুখী করার।    

 

 

সরকারীভাবে উপজেলা পর্যায়ে কোন প্রতিষ্ঠান না থাকলেও রূপগঞ্জের ১৬ হাজার প্রতিবন্ধির সংখ্যা ও তাদের পরিচয় সংগ্রহ করেছেন অনির্বাণ ডিজেবল চাইল্ড কেয়ার। তাদের মাঝে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের  শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে গড়ে তুলেছেন রিহ্যাবিলিটি সেন্টারও। সারাও পেয়েছেন বেশ। কথা হয় এর প্রতিষ্ঠাতা সোহেল রানার সঙ্গে।

 

 

তিনি বলেন, সরকারী সাহায্য সহযোগীতা শুধুমাত্র প্রতিবন্ধিরা মাসিক ভাতা হিসেবে কিছু  পায়।  তবে সবাই নয়। আর শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনরূপ সহায়তা নাই। ফলে এ ধরনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুড়ানো।  

 

 

কারণ শিশুদের যাতায়াতে নেই যানবাহন, থেরাপিষ্টদের সম্মানি ভাতা কিংবা শিক্ষকদের নেই পৃষ্টপোষকতা। কেবল নিজ উদ্যোগে চলছে এমন একাধিক প্রতিষ্ঠান। যা থেকে সুবিধা পাচ্ছে না বিশেষ চাহিদা সম্পন্নরা।

 


থেরাপিস্ট হাসিনা হাফিজ বলেন, সোহেল রানা তার প্রয়াত  পূত্রের স্মৃতি রক্ষায় অনির্বাণ চাইল্ড গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিউদ্যোগে। কিন্তু রূপগঞ্জ উপজেলার মোট প্রতিবন্ধির সংখ্যা ১৬ হাজার। যেখানে এ প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট নয়। তাই আরও অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হয়।

 

 

তাদের জেনে রাখা ভালো নিয়মিত পরিচর্যায় ও থেরাপি গ্রহণ করলে অনেক প্রতিবন্ধি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। যা একজন প্রতিবন্ধি যতদিন বাঁচবেন সুন্দর করে বাঁচবেন। এ পরিবেশ তৈরী করে দিতে সমাজকে ভাবতে হবে।

 

 

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রিয়াজউদ্দিন বলেন, আমার কার্যালয়ে প্রতিবন্ধি নিবন্ধিতের সংখ্যা ৬ হাজার। ১৬ হাজার বলা হলেও তারা এ বিভাগে যোগাযোগ করেনি। তবে অনেকেই পাচ্ছেন সরকারী ভাতা।

 

 

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ শাহজাহান ভুইয়া বলেন, উপজেলা পরিষদ থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের মাঝে মাঝে সরকারীভাবে দেয়া হয় বরাদ্দ। অনির্বাণকে দেয়া হয়েছে জমি ও টিনশেড ঘর ।

 

 

কিন্তু শিক্ষক ও থেরাপিস্টদের জন্য নেই কোন প্রকার সহায়তা। এসব সংকট কাটাতে কাজ করছে সরকার।গত রবিবারও অনির্বাণ স্কুলের মাধ্যমে ২জন প্রতিবন্ধিকে হুইল চেয়ার দেয়া হয়েছে।  

 

 

এসব বিষয়ে সচেতন মহল মনে করেন, সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনের গতি পাল্টে একটি দূর্ঘটনার পর  শারীরিক বিকলাঙ্গ কিংবা মানষিক রোগের শিকার হয় বহু মানুষ।

 

 

আবার জন্মগতভাবেও বহু শিশু জন্মায় নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে। প্রতিবন্ধকতায়ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিরাপদ  পরিবেশ রক্ষা সময়ের দাবী। প্রয়োজন সরকারী ও বেসরকারী সমন্বিত উদ্যোগ। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর