শনিবার   ০৪ মে ২০২৪   বৈশাখ ২০ ১৪৩১

‘এইভাবেই চলতাছে জীবন’

সৈয়দ রিফাত

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৪  

 

# আজ শনিবার সর্ব্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রী তাপমাত্রা রেকর্ড হতে পারে নারায়ণগঞ্জে, বলছে আবহাওয়া অফিস

 

‘এই গরমে মানুষ ছায়ার নীচেও দাঁড়াইয়া থাকতে পারতাছে না’। ‘আর আমাগো এই রোদ মাথায় নিয়া প্রতিদিন কাজ করা লাগতাছে’। ‘একটু পরপর পানি খাই আর মাথায় ঢালি’। ‘কাজ না করলে ঘরের মানুষ খাইবো কি’? ‘এই চিন্তা কইরা রোদের তাপ গায়ে মাখাই না’। ‘সবচেয়ে বড় কথা সারাদিন এতো পরিশ্রম কইরা রাইতে বাসায় গিয়া আবার দেখি কারেন্ট নাই‘। ‘এইভাবেই চলতাছে জীবন’। তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে এভাবেই এ প্রতিবেদককে নিজের দুঃখের কথাগুলো বলছিলেন রিকশাচালক হামিদ মিয়া।

 

এদিকে, এবারের ভিন্নমাত্রার গরমে চরম বিপর্যস্ত নারায়ণগঞ্জবাসী। একদিকে প্রচন্ড তাপদাহ অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে হাসফাস করছে সাধারণ মানুষ। বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকায় ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের তাপ তীব্র থেকে আরও তীব্র হচ্ছে। বলা চলে, আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে রোদ। এতে করে খেটে খাওয়া মানুষেরা পরছেন চরম বিপাকে। বিশেষ করে, দুপুরের পর আগুন ঝড়া রোদের তেজে বাইরে বের হওয়াই যেনো মুশকিল হয়ে পরেছে। এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি সারাদিন প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

 

অপরদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল নারায়ণগঞ্জে সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেই তাপমাত্রা আজ শনিবার বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৪১ ডিগ্রীতে, বলছে আবহাওয়া অফিস। একইভাবে আগামী দশদিন ৩৮, ৩৯ আর ৪০ ডিগ্রীর মধ্যেই থাকতে পারে তাপমাত্রা। ফলে, বলাই যায় আগামীতে তাপমাত্রার পরিমাণ আরও বাড়তে চলেছে। মূলত, সকাল থেকেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। একটানা বিকেল পর্যন্ত বয়ে চলা এই আবহাওয়ায় জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ প্রয়োজন ব্যাতিত কেউ রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে না। আর সব থেকে বেশি বিপাকে পরেছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা।

 

ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার নেছার বলেন, আমি একটি সিগারেট কোম্পানিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করি। প্রতিনিয়ত আমাকে সড়কে থাকতে হয়। কিন্তু এই গরমে আর পেরে উঠছি না। এমন গরমে কাজ করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

 

চাষাঢ়ায় শরবত বিক্রেতা ইমদাদুল মিয়া বলেন, প্রচন্ড গরমের কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় শরবতের চাহিদা অনেক বেড়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাবিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এতোই গরম যে, দাঁড়িয়ে থেকে শরবত বিক্রি করাও এখন দায় হয়ে পরেছে। উপায় নেই, পেট চালাতে হলে এই গরম উপেক্ষা করেই আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

 

এদিকে, গরম বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীদের ভিড়। ৩শ’ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালে কিছুটা কম থাকলেও ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তাই গরমে সুস্থ থাকতে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়া, বেশি বেশি পানি পান করাসহ সুতি কাপড় পরার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, তীব্র গরমের কারণেই মূলত নারায়ণগঞ্জের হাসপাতাল গুলোতে জ্বর, হিটস্ট্রোক, সর্দি, টাইফয়েড ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গরম বাড়ার সাথে সাথে আরও রোগী বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

 

অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে ১শ’ শয্যা বিশিষ্ট ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে। এখানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গত কয়েকদিন ধরে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও রোগী আসছে। যার মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। প্রচন্ড গরমের কারণে রমজান মাসের শেষ দিকে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে যা এখনো চলমান।

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন এএফএম মশিউর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালে আশঙ্কাজনক হারে রোগী ভর্তি হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ১৮০ থেকে ২শ’ রোগী আসছে প্রতিনিয়ত। আমার বেডগুলো এখনো খালি আছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ আছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

 

গরমে সুস্থ থাকতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, পাতলা কাপড় পরিধান করতে হবে। বাইরে যেনো একটু কম বের হয়। সাধারণ ডায়রিয়া হলে যেনো স্যালাইন খায়। গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। খাবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। যদি এমন হয় বমি হচ্ছে বা ডায়রিয়ার অন্য কোন সিন্টম দেখা দিয়েছে তাহলে তারা যেনো দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর