বুধবার   ০৮ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

সদরে নির্বাচন না হলে লাভ কার?

সৈয়দ রিফাত

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৪  

 

# গুঞ্জন আছে, শামীম ওসমানের সদিচ্ছা ও আগ্রহ না থাকায় সদর উপজেলার নির্বাচনী জটিলতা কাটছে না।

 

সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে আছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন। কবে নাগাদ এ জটিলতার অবসান হবে তা জানে না কেউই। যদিও ২২ এপ্রিল উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল, হয়েছেও তাই। তবে, এ বিষয়ে নতুন কোন তথ্য দিতে পারেননি সদর উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী থেকে শুরু করে খোদ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও!

 

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, নির্বাচনের শুনানি প্রসঙ্গে সবাই সবটা জানার পরেও ইচ্ছেকৃত মুখ বন্ধ করে রেখেছেন। বিশেষ করে, চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী এমন কেউই এই বিষয়ে কোন কথা বলবে না। কেননা, সদরে নির্বাচনে হচ্ছে না এমন ইঙ্গিত অনেক আগেই পেয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী।

 

এদিকে, নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে অনুমান করা যাচ্ছে, আগামী জুন নাগাদ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

 

অপরদিকে সূত্রের খবর অনুযায়ী, সংশোধিত তারিখ অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ২৯ মে ও ৫ জুন চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এরমধ্যে, নারায়ণগঞ্জে ৮ মে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ২১ মে রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

সূত্রানুযায়ী, সীমানা সংক্রান্ত মামলার জটিলকার কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় নির্বাচন নেই। তবে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে শুরু হলেও শেষতক নির্বাচন হবে কি না তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না দায়িত্বশীলরা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলায় নির্বাচনের পথ সুগম না হওয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। কেননা, বিগত সময়ে তিনি একাধিকবার নির্বাচন প্রসঙ্গে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করলেও শেষতক কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গুঞ্জন আছে, শামীম ওসমানের সদিচ্ছা ও আগ্রহ না থাকায় সদর উপজেলার নির্বাচনী জটিলতা কাটছে না।

 

তথ্যানুসারে, সর্বশেষ ২০০৯ সালের জানুয়ারিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ সময় বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হলে সদর উপজেলার কিছু অংশ সিটি কর্পোরেশনে চলে যায়।

 

এদিকে, সদর উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠন হওয়ায় ওই সব এলাকা বাদ দিয়ে উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ (২০০৯ সনের ৩০ জুন সংশোধিত) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সদর উপজেলা পুনর্গঠন করে। ২০১৪ সালের ৪ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়।

 

এ গেজেট অনুযায়ী কয়েকটি এলাকা বাদ দিয়ে উপজেলার নতুন সীমানা নির্ধারণ হওয়ায় উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়। যার পিটিশন নং- ৩০৮৯। এ রিট করেন ফতুল্লা চৌধুরী বাড়ির মৃত সুলনার বক্স চৌধুরীর ছেলে মো. আসাদউদ্দিন চৌধুরী, পশ্চিম মাসদাইরের মৃত মতিউর রহমানের চেলে বজলুর রহমান ও কাশিপুর উত্তর গোয়ালবন্দের হেলাউদ্দিন মুন্সীর ছেলে মো. হামিম মুন্সী। 

 

অপরদিকে, রিট আবেদনকারী প্রত্যেকেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের লোক হিসেবে পরিচিত। আর তাদের করা সীমানা সংক্রান্ত এই মামলার অজুহাতে নির্বাচন না হওয়ায় দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ উপজেলার চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন তিনি।

 

জানা গেছে, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস বিএনপি নেতা হলেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আস্থাভাজন। সভা, সমাবেশসহ বিভিন্ন আয়োজনে শামীম ওসমানের পাশেই দেখা যায় আজাদ বিশ্বাসকে। তাদের সম্পর্কের বিষয়ে রীতিমতো তিক্ত হয়ে উঠেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরাও।

 

তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ইসদাইর বাংলা ভবনে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন আয়োজিত এক সভায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করেই উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে চেয়ারম্যানদের নিয়ে বসবো। সদর উপজেলা নির্বাচন হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী থাকবে। সেটা আমিই ঠিক করে দিবো। কাজ করতে এসেছি। যাকে যে জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে হয় সে সেই জায়গাতেই প্রতিষ্ঠত হয়ে যাবে। কখন হবে সেটা সময়ই বলে দিবে।

 

এমপি শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের পর তৎকালীন সময়ে বহুল কাঙ্ক্ষিত সদর উপজেলার নির্বাচন হওয়ার জোড়ালো সম্ভাবনা দেখা যায়। তার বলয়ের মধ্যে পরিচিত অনেক নেতাই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য তৎপর ছিলেন। তবে, শেষতক শামীম ওসমানের কথার বাস্তবায়ন হয়নি। এখন সারাদেশে উপজেলা নির্বাচন হলেও তালিকায় নেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নাম।

 

এমতাবস্থায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাসের সাথে তার ঘনিষ্ঠতার কারণেই এমপি শামীম ওসমান উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আর কাজ করেননি। কেননা, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই সংসদ সদস্যর সদিচ্ছা থাকলে অনেক আগেই মামলা জটিলতা শেষ করে সদরে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব ছিল।

 

তার উপর সদরে চেয়ারম্যান পদে যারা নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা সকলেই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। তারা হলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু এবং সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজিমউদ্দিন। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর