শনিবার   ০৪ মে ২০২৪   বৈশাখ ২১ ১৪৩১

তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ কাশিপুরবাসী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৪  

 

# যারা অভিযোগ করেছে তাদের আমি দেখে নিবো : সন্ত্রাসী হীরা
# খোঁজ নিয়ে দেখছি, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে : ওসি ফতুল্লা

 

ফতুল্লার কাশিপুর এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন ওরফে সাল্লু, আলাউদ্দিন হীরা, আহমেদ হোসেন রাজু ওরফে বড় রাজু ও তাদের বিশাল কিশোর গ্যাং বাহিনীর অপকর্ম যেনো থামছেই না! এলাকায় কেউ ভবন নির্মাণ করতে চাইলে হীরা ও বড় রাজুর কাছ থেকে ইট-বালু-সিমেন্ট নিতে হয়।

 

অন্যথায়, তাদের বাড়ি ঘরে সাল্লু ও তার লালিত কিশোরগ্যাং সদস্যদের দিয়ে সশস্ত্র হামলা করানো হয়। এছাড়াও ঐ এলাকায় কেউ বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে চাইলে মালিকদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করে হীরা-রাজু ও তার বাহিনী। মোদ্দাকথায়, এলাকার মানুষ এদের অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে।

 

এতোকিছুর পরেও রহস্যজনক কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হীরা, বড় রাজু, সাল্লু ও তাদের পালিত কিশোরগ্যাংদের গ্রেপ্তার করছে না। যদিও পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগীদের কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, সন্ত্রাসী হীরা, বড় রাজু, সাল্লু ও তাদের বাহিনী এতোটাই ভয়ঙ্কর যে এ সকল বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে সে আর এলাকায় থাকতে পারে না।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ত্রাসী হীরা, বড় রাজু, সাল্লু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় ছিনতাই, নিরীহ মানুষকে হয়রানি, চাঁদাবাজি এমনকি হত্যা মামলাসহ অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে। এলাকার মানুষ এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই মামলা-হামলার শিকার হতে হয়। আর এ কারণে কেউই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। সাল্লু ও হীরা ফতুল্লা মডেল থানার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। থানায় ঢুকলেই চিহ্নিত আসামীদের বোর্ডে বড় করে তাদের ছবি পরিলক্ষিত হয়।

 

দু’জনের মধ্যে হীরা ও বড় রাজু ইট, সিমেন্ট বালুর ব্যবসা করেন। তবে, পুরো ২নং ওয়ার্ডে যতো বাড়িঘর নির্মাণ হয় তার প্রত্যেকটির সকল ইমারত সামগ্রী ক্রয় করতে হয় হীরা ও বড় রাজুর কাছ থেকে। অন্যথায়, মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয় তাদের। আর তা না দিলে তার লোকজন দিয়ে বাড়িঘরে হামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় রয়েছে অন্তত ডজন খানেক মামলা।

 

এদিকে, সাল্লু ও তার বাহিনী আফজাল হত্যাকান্ডের পর কিছুদিন চুপ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাল্লুর নেতৃত্বে অন্তত ১৫ থেকে ২০ সদস্যের একটি কিশোরগ্যাং গ্রুপ প্রকাশ্যে মাদক বেচাবিক্রি করে বেড়ায়। দিনের আলোয় প্রকাশ্যে এলাকায় না আসলেও আড়াল থেকে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করে সাল্লু নিজেই।

 

সূত্র বলছে, সন্ত্রাসী সাল্লুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় ১৪টির-ও বেশি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যু থেকে শুরু করে হত্যা মামলাও আছে। এতো অপকর্মের পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একেবারেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে সন্ত্রাসী সাল্লু ও তার বাহিনীর লোকজন।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মানুষের উপর এতো এতো অত্যাচার করার পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রহস্যজনক কারণে এই বাহিনীর কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। অথচ, সন্ত্রাসী সাল্লু ও হীরা ও তার বাহিনী এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত। এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে অযথাই হামলার শিকার হতে হয়। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ওই বাহিনীর অত্যাচারের শিকার হয়।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ বলেন, কাশিপুর ইউনিয়নের ভোলাইল শান্তিনগর, আলীপাড়া, চর নরসিংপুর, মরা খালপার ও চিতাশাল এলাকায় গড়ে তুলেছে বিশাল মাদকের সাম্রাজ্য। সন্ত্রাসী হীরা ও বড় রাজু ইট-বালু-সিমেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি পরিচালনা করে বিশাল কিশোর গ্যাং বাহিনী। এলাকায় কেউ বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে চাইলে রাজু ও হীরার কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় না করলে তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা দেয়। এই বাহিনী এতোটাই ভয়ঙ্কর যে এলাকার মানুষ তাকে কিছু বলার সাহস রাখে না। ভুলেও যদি কেউ প্রতিবাদ করে তাহলে তার উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীদের কিশোর গ্যাং বাহিনী।

 

ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, সম্প্রতি এই বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। বর্তমানে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, তার অত্যাচার, হিংস্রতা ও নির্যাতনের ভয়ে সংক্ষুব্ধ জণগন কথা বলার এবং প্রতিকার চাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি করা এখন তার দৈনন্দিন বিষয়। একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হয়ে ফের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করে তারা।

 

এর আগেও একাধিকবার সন্ত্রাসী হীরা, বড় রাজু ও সাল্লু বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবিতেও এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে মানববন্ধন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদনও করেছিল সচেতন এলাকাবাসী। তারপরেও কিছুতেই যেনো কিছু হচ্ছে না।

 

এ সকল অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে আলাউদ্দিন হীরাকে মুঠোফোন করা হলে যুগের চিন্তাকে বলেন, কারা এই সকল অভিযোগ দিছে? এ সময় অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে তিনি বলেন, যারা এই সকল অভিযোগ দিছে ওগো পাইলে আমি দেখমু ওরা কারা? 

 

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়াকে অবগত করলে ভুক্তভোগীদের উদ্দেশ্যে ইমারত সামগ্রী নিতে কে বা কারা চাপ প্রয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এমন কিছু হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর