শনিবার   ০৪ মে ২০২৪   বৈশাখ ২১ ১৪৩১

প্রফুল্ল আজাদ-নাজিম

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৪  

 

# জলাবদ্ধতা থেকে সহসা মুক্তি পাচ্ছে না ফতুল্লাবাসী

 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা কিছু এলাকা ছাড়া বেশির ভাগ এলাকাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সভায় গিয়ে সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, তিনি ফতুল্লাকে নতুন বউয়ের মত করে সাজাতে চান। কিন্তু দলের মাঝে গুঞ্জন রয়েছে তিনি যা বলেন তা করেন না। এছাড়া ফতুল্লাবাসী স্বাধীনতার পর থেকে পানি বন্দি হয়ে থাকেন। এখানকার কিছু কিছু এলাকা রয়েছে যা সারাবছর পানির তলানীতে থাকে।

 

তবে নির্বাচন আসলেই ফতুল্লাবাসী কখনো শুনতে পান এই এলাকাকে নতুন বউয়ের মত করে সাজানো হবে, আবার কখনো বলেন এখানে পানির ব্যবস্থা না নেয়া হলে এই এলাকার এমপি নিজে পানিতে নামবেন। এত কিছুর পরেও সদর উপজেলার ফতুল্লার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ সদর উপজেলার নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। এতে করে ফতুল্লার মানুষ আরও উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে। একই সাথে নির্বাচন না হওয়ায় এখানকার মানুষ হতাশ।

 

তারপরেও যখন মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হয় তখন মানুষ কিছুটা আশার আলো দেখতে পেলেও সবশেষ তাতেও হতাশ হতে হয়। কেননা আগামী ৮ মে সদর উপজেলার ভোট গ্রহনের জন্য তফসিল ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সদর উপজেলা নিয়ে মামলা পুনরায় আপিল ডিভিশনে ২২ এপ্রিল শুনানি থাকায় গত ৯ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে সদর উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

 

এদিকে সর্বশেষ ২০০৯ সনে জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচন হয়। তখন বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। একই সাথে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ নেতা নাজিম উদ্দিন, সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হলে ফতুল্লার থানার মহিলা আ.লীগ নেত্রী ফাতেমা মনির। কিন্তু দীর্ঘদিন পর সদর উপজেলা মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরেও তা পুনরায় আবার আপিল ডিভিশনে শুনানির জন্য আবেদন করা হয়।

 

অভিযোগ রয়েছে, এখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ইন্ধনে সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাস নির্বাচন বন্ধের জন্য পায়তারা করেছেন। তাকে পিছন থেকে এক খেলারাম ইন্ধন দিচ্ছে বলে মনে করেন ফতুল্লাবাসী। তাই রাজনৈতিক মহল বলছে এই উপজেলা নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন উৎফুল্ল মেজাজে রয়েছেন।

 

অপরদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সদর উপজেলার ফতুল্লাকে নিয়ে বলেন, আমি আমাদের এলাকা ফতুল্লাকে নতুন বউয়ের মতো সাজাতে চাই। এর আগেও সাংসদ শামীম ওসমান তার নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লা সহ পুরো নারায়ণগঞ্জকে নতুন বউয়ের মত সাজাতে চান বলে মন্তব্য করেছেন।

 

এছাড়া ২০১৮ সনের নির্বাচনের ভোট গ্রহনের আগে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় প্রচারনায় গিয়ে বলেছেন, নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রতিটি এলাকায় পঞ্চায়েত কমিটির ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তার এই কথা কোনটাই বাস্তবায়ন হয় নাই। এমনকি সদর উপজেলা নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগেই তিনি বলেন এখানে নির্বাচন হবে না।

 

স্থানীয়রা জানান, ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে রাস্তা-ঘাট তলিয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এমনকি অনেকের বাসা-বাড়ি-রান্নাঘর পানিতে তলিয়ে থাকে। বিশেষ করে একটু বৃষ্টি আসলেই ফতুল্লার মানুষকে পানি পাড়িয়ে ঘর থেকে কর্মস্থলে যেতে হয়। জলাবদ্ধতার পানির সঙ্গে শিল্প-কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত পানি মিশে একাকার। দুর্গন্ধযুক্ত এ গরম পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় এলাকাবাসীকে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষকে।

 

জানা যায়, ফতুল্লার দাপা ঋষিবাড়ি, নন্দলালপুর, লালপুরের বিভিন্ন এলাকায় বছর জুড়েই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই এলাকার পানিবন্দি মানুষকে নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোন ভাবনা নেই। তার মাঝে আবার ৫ বছর পর নির্বাচন আসলেও সদর উপজেলা নির্বাচন দীর্ঘদিন যাবৎ আটকে থাকায় এখানকার মানুষ আরও বেশি উন্নয়নের মুখ দেখছে না।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যেখানে সদর উপজেলা নির্বাচনের তফসিল হওয়ার পরেও সেখানকার নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায় তাহলে মানুষ উন্নয়নের মুখ দেখবে কিভাবে। তাছাড়া এখানকার নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে যারা রয়েছে তারাই আবার বহাল থাকছে। কেননা নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধির পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু সদর উপজেলায় যারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন তারা দীর্ঘদিন থাকায় এখানকার মানুষ উন্নয়ন দেখছে না। আর এতে করে এখানকার জনপ্রতিনিধিরা উৎফুল্ল ভাবে রয়েছেন। এমনকি তাদের চেয়ার হারানোর তেমন কোন ভয় নেই। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর