শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪   বৈশাখ ২০ ১৪৩১

মাওলানা আউয়ালের মতলববাজি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৪  

 

একটি মামলার ঘটনাকে পূঁজি করে নারায়ণগঞ্জে ফের স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে উগ্রপন্থি রাজনৈতিক দলের তকমা পাওয়া হেফাজতে ইসলাম। ওলামা পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ও ডিআইটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল যাচ্ছেতাই ভাষায় মেয়র আইভীর চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন। এক পর্যায়ে আইভীর লাশ ফেলে দেয়ারও হুমকি দেন।

 

অনেক বাধাবিপত্তি ডিঙ্গিয়ে মেয়র আইভীর গড়া শেখ রাসেল পার্ককে মিনি পতিতালয় আখ্যা দিয়ে তিনি এটি উচ্ছেদ করারও হুমকি দেন। মেয়র আইভী বিদেশে থাকায় মাওলানা আউয়ালের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আইভীপন্থি কয়েকজন নেতাও কড়া ভাষায় মাওলানার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ভবিষ্যতের জন্য তাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।  

 

প্রশ্ন ওঠেছে, বিচারাধীন মামলা নিয়ে একজন আলেমের এরকম হিংসাত্মক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান কতোটুকু যুক্তি সঙ্গত? দেশের প্রচলিত আইনকে অবজ্ঞা করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ-এ কথাটাও কি তিনি ভুলে গেছেন! তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রকাশ্য হুমকি ২০১৩ সালের ৫মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সরকার উচ্ছেদের সমাবেশের কথাকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

 

বোদ্ধামহলের মতে, ৫মে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশ আওয়ামী লীগের মসনদকেই টলিয়ে দেয়ার মতো অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলো। হেফাজতের সহিংস তান্ডবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ক্ষমতাসীন সরকারকে উদ্ধার করতে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় আবির্ভূত হয় ‘সাউন্ড গ্রেনেড’। টিয়ার সেল আর সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দে মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানেই হেফাজতের কয়েক লাখ নেতা-কর্মী শাপলা চত্বর ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সরকার।

 

এরপর ২০২১ সালের ২৮ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। হরতাল সফল করতে নারায়ণগঞ্জের হেফাজতে ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ও সাইনবোর্ড এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বড় বড় গাছের গুঁড়ি, টায়ার, বাঁশ, কাঠ, চৌকি, বেঞ্চ ইত্যাদি দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।

 

রাস্তায় বিভিন্ন আসবাবে আগুন ধরিয়ে পৈচাশিকভাবে লাফালাফি করে নেতা-কর্মীরা। পুলিশের সাথে সামনা সামনি ঢিল ছোঁড়াছুড়ির যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সড়কের আশপাশ এলাকায় ভাংচুরের তান্ডব চালায়। কিছুকিছু এলাকায় হেফাজত নেতা-কর্মীদের ভয়াবহ তান্ডবের কাছে পুলিশকে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে দেখা গেছে।  

 

নারায়ণগঞ্জের হেফাজত নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়ালের হিংসাত্মক বক্তব্য নতুন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। মেয়র আইভীকে হুমকি প্রদানের মধ্য দিয়ে তিনি খোদ সরকারকেই প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছেন। ডিআইটি মসজিদকে নিজ দলের আস্তানা বানাতেও  কারো তোয়াক্কা করছেন না মাওলানা আউয়াল। যে কারণে তিনি বলতে সাহস পাচ্ছেন, ‘মসজিদ ভাঙতে আসলে লাশ পড়বে।’ তিনি কেনো এ কথা বলছেন, তার কারণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মেয়র আইভী কি কখনো বলেছেন যে, তিনি ডিআইটি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলবেন! আগবাড়িয়ে এসব কথা বলার উদ্দেশ্যটাও বেশ স্পষ্ট। নিজেরা কুকর্ম করলেও যেন কেউ তাদেরকে সন্দেহ করতে না পারে! এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর