শনিবার   ০৪ মে ২০২৪   বৈশাখ ২১ ১৪৩১

২৯০ বছরের পুরানো ঐতিহ্যের জিউর আখড়ার মন্দিরের বৈশাখী মেলা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৪  


বৈশাখ মাস শুরু। আজ বৈশাখের ৬ষ্ঠ তম দিন। নানা মানুষের সমাগমে মুখরিত এখন নারায়ণগঞ্জের নন্দিপাড়া এলাকার অবস্থিত মন্দির রাজা লক্ষ্মী-নারায়ণ জিউড় আখড়ার প্রাঙ্গণ। প্রতিবছরের মত এবারো মাসব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

 

 

পহেলা বৈশাখের দশ থেকে বারো দিন আগেই শুরু হয়েছিলো এ বৈশাখী মেলার প্রস্ততি। তারপর পহেলা বৈশাখের দিন থেকেই দেওভোগ রাজালক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া প্রাঙ্গনে মাসব্যাপী এই মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

 


 প্রাচ্যের ড্যান্ডি নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে এ বৈশাখী মেলার ইতিহাস। জানা যায়, প্রায় আনুমানিক ২শ ৯০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে শ্রী শ্রী রাজালক্ষ্মী নারায়ণ জিউর মন্দির যা বর্তমানে  শ্রী শ্রী রাজালক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া নামে পরিচিত। বৈশাখ মাসের শুরু দিনে নতুন বছর উপলক্ষ্যে মন্দিরের মেলার প্রাঙ্গন ভরে উঠেছে হরেক রকমের দোকানে।

 

 

মেলায় ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ে নাগর দোলা ও ম্যাজিক বোর্ড। পাশেই বসানো হয়েছে নিমকি, মুড়ি,মুড়কি ভাজাসহ নানা ধরনের তেলে ভাজার দোকান। ভেতরে রয়েছে নানান খেলনার ও গৃহস্থালী তৈজসপত্রের দোকান। গত এক সপ্তাহ যাবৎ সাজানো এই মেলার প্রাঙ্গনে বাড়তে থাকে নানা জাত,ধর্ম,বর্ণ আর ধনী-গরীব সর্বস্তরের মানুষের সমাগম। বিশেষ করে গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনের (শুক্রবার) মানুষের ঢল নামে সেখানে।

 


বৈশাখের পুরো মাসজুড়েই মিলনমেলায় পরিণত হয় পুরো মেলা প্রাঙ্গন। জেলার বিভিন্ন উপজেলা এমনকি পার্শ্ববর্তী ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা থেকেও দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে এই মেলায়।

 


শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য এখানে বসানো হয় নাগরদোলা,চরকি। এছাড়া বিভিন্ন খেলনার দোকানে হরহামেশাই ভিড় লেগে থাকে শিশুদের। গৃহস্থালী সামগ্রী কিনতে মেলায় আসেন মহিলারা। নিমকি, পিটি, মুড়ি, মুড়কিসহ বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার সামগ্রীর দোকানে বসেছে মেলাতে। সেখানেও দেখা যায় মানুষের ভীড়।

 


গতকাল (শুক্রবার) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জিউড় আখড়ার প্রাঙ্গন জুড়ে চলছে বৈশাখী মেলা নানা মানুষের সমাগম। মেলায় ঢুকতেই চোখে পরে নাগর দোলা আর নৌকা রাইড।

 

 

রয়েছে মুড়ি, মুড়কি, মিঠাই, নিমকি, সন্দেশসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের দোকান। এছাড়া রয়েছে শিশুদের খেলনা, মেয়েদের কসমেটিকস ,গৃহস্থালী সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। প্রায় ৩০টি দোকান নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের দেওভোগ আখড়ার মেলা।

 


কিন্তু এ ঐতিহ্যবাহী মেলার মূলত কবে থেকে শুরু হয়েছে এর ইতিহাস সম্পর্কে ধারনা নেই মন্দিরের কতৃপক্ষ কারোই। এমনটাই জানালেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

 


তারা জানান, এ মেলা আজ থেকে শুরু হয় নাই। আমাগো বাপ-দাদার আমল থাইকাই  নাকি আমাগো বাপ-দাদারা ও তাগো ছোটবেলায় এ মেলা দেখছে। আমরাও এখন দেখতাছি। তাহলেই বুঝেন কতদিন আগে থেকে এ মেলা শুরু হইছে।

 

 

আসলে এ মেলা কত আগ থেকে শুরু হইছে এটা সঠিকভাবে বলার মত বর্তমানে কেউই আর জীবিত নাই। তবে আমাদের বাপ দাদাগো কাছ থাইকা শুনছি মূলত এ নারায়ণগঞ্জ প্রতিষ্ঠিতই হইছে এ শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ- মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে।

 


স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, একসময় দেওভোগ আখড়ায় মাসব্যাপী মেলা চলতো কয়েক কি.মি. এলাকাজুড়ে। এখন এ মেলার পরিসর অনেকটা ছোট হয়ে গেছে কিন্তু তবুও প্রতিবছর নববর্ষকে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে আরো উৎসবমুখর করে তোলে এ বৈশাখী মেলা। স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রীতে মেলা পূর্ণ হয়ে উঠে।

 

 

টাকা নিয়ে মানুষ মেলায় ছুটতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে। তারা আরো বলেন, একসময় খাট-পালং, হাড়ি-পাতিল, দা-বটি, মাছ ধরার জাল থেকে শুরু করে সংসারের ও ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় সবকিছুই পাওয়া যেতো মেলায়।

 

 

তবে অনেকে মনে করেন, এখানে মেলা আরো আগে থেকেই বসতো। দেওভোগে মন্দির বেশ পুরনো। তবে সেই ঐতিহ্য এখন আর নেই। তবে বৈশাখী মেলার ঐতিহ্যেটা এখনও রয়েছে। প্রতি বছরই এখানে মেলার আয়োজন থাকে।    এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর