বুধবার   ০৮ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

বাইক বিক্রি করে ১০০ পরিবারকে সাহায্য করলো ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২০  

বিশেষ প্রতিনিধি : ভাল নেই আড়াইহাজারের তাঁতী পরিবারগুলো। তাঁতের কারিগরদের খোঁজ নেয়না কেউ। ঘরে ঘরে হাহাকার। এলাকায় হাঁটাচলা করার সময় বিভিন্ন বাড়ি থেকে শিশুদের কান্নার শব্দ কানে আসে।

বিত্তবান মানুষগুলো যেন কানে তুলো গুজে নিয়েছেন। গরীবের হাহাকার ওদের মনে দাগ কাটেনা। নিজেরা ঘরে খাদ্যদ্রব্য মজুদে ব্যস্ত। এই চরম দুঃসময়ে নিজের যৎসামান্য টাকা নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেন কলেজ ছাত্র সিয়াম আহমেদ (২১)। 

১০০ দরিদ্র মানুষের জন্য ৬ দিনের খাবারের আয়োজন করেছে এই মেধাবী ও প্রকৃত জনদরদী ছাত্রনেতা। হাতে নগদ টাকা ছিলনা। তাই বিক্রি করে দিয়েছেন পছন্দের বাইকটি ( ইয়ামাহা-এফজেড )। 

মোটর সাইকেল বিক্রির ৮০ হাজার টাকা নিয়ে সিয়াম দরিদ্রদের পাশে দাঁিড়য়ে সমাজের বিত্তবানদের দেখিয়ে দিলেন ধন নয়-মানুষের জন্য কিছু  করার জন্য থাকা চাই মন মানসিকতা।  

সিয়ামের এই সামান্য উদ্যোগ আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচরুখী গ্রামে সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে। বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় উপজেলা জুড়ে আলোচিত হচ্ছে।
 
জানাগেছে, সিয়াম আহমেদ পাঁচরুখী বেগম আনোয়ারা ডিগ্রী কলেজ এর ফাইনাল বর্ষের ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।  সে পাঁচরুখীর আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে। করোনা মহামারীতে পাঁচরুখী গ্রামের তাঁতী পরিবারগুলোতে চলছে হাহাকার। 

কাজ নেই। সবাই ঘরবন্দি। ঘরে খাবার নেই। এমন দৃশ্য সিয়ামের বিবেককে দংশন করে বার বার। হাতে যা কিছু ছিল তাই নিয়ে মাঠে নামে সে। ১০০ দরিদ্র পরিবারের জন্য ৬ দিনের খাবারের আয়োজন করে সিয়াম। 

এই কাজ করতে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেই বিক্রি করে দেন পছন্দের বাইকটি। মোটর সাইকেল বিক্রির টাকা থেকে সে কিছু গরীব শিক্ষার্থীকেও সহায়তা করেছেন। 

সিয়াম অবশ্য এই সহায়তা দানের বিষয়টি প্রচার করতে চান না। বিষয়টি  ফেসবুকে ভাইরাল হলে খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। 
 
সাতগ্রাম ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি জানান, সিয়াম আমাদের সবার চোখ খুলে দিল। দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা আমরা বললেও সময়মত অনেকেই চোখ বুঝে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। ঘুণেধরা সমাজে সিয়াম এর মহানুভবতা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
 
পাঁচরুখী বাজারের কয়েকজন দোকানদার জানান, আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সচ্ছল। আবার গরিব মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এই জররুী অবস্থায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীটিও অভাবে পড়েছে। সবার কাজকর্ম, অফিস-আদালত বন্ধ। 

যারা সরকারি চাকুরে তাদের বেতন-ভাতা নিয়মিত হবে। কিন্তু বেসরকারি চাকুরেদের অবস্থা হল দিনমজুরের মত। কাজ নেইতো বেতনও নাই। অতএব সকলকেই সাহায্য করা উচিৎ। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা উচিৎ। 

যে যার ভোট ব্যাংক ঠিক রাখতে কৌশলে ত্রাণ দেয়। এটা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে সকলকে শিক্ষা দিয়ে দিলেন ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম হোসেন।
 
পাঁচরুখী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এই গ্রামে বিত্তবান মানুষের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু এখনো হতদরিদ্রদের জন্য কেহ কিছুই করেনি। পাওয়ার লুম কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় তাঁতী পরিবারগুলো পড়েছে দুর্যোগে। 

তারা কর্মহীন হয়ে এখন ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরে যা সামান্য কিছু ছিল ফুরিয়ে গেছে। খাবার জুটছেনা। ঘরে ঘরে হাহাকার। 

ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামের মতো সবারই উচিৎ দরিদ্র মানুষগুলোকে সাহায্য করা। নইলে করোনার আগেই মানুষ মারা পড়বে ক্ষুধার জ¦ালায়। সবার ঘরেই ত্রাণ পৌঁছানো দরকার।
 

এই বিভাগের আরো খবর