রোববার   ০৫ মে ২০২৪   বৈশাখ ২১ ১৪৩১

স্ত্রীর যৌতুক মামলায় কুপোকাত মাকসুদ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪  

 

আসন্ন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় আনারস মার্কা নিয়ে মগ্ন আছেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিতর্কিত জাতীয় পার্টির নেতা মাকসুদ হোসেন। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হতে বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন দিক বেছে নিয়েছে এই রাজাকারপুত্র মাকসুদ।

 

এছাড়া ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রথম দশ দিনের মাথায়ই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কিনে প্রায় তিনকোটি টাকার মতো খরচ করে ফেলেছেন। এ ছাড়া ও তার বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কিনার অভিযোগ আসে। সে মতে মাকসুদ হোসেন এর নির্বাচনী আচরণ বিধির প্রতি তোয়াক্কা করছেন না তিনি।

 

যা নিয়ে বন্দর জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইলেও সেদিকে কোন কান দিয়েই নির্বাচনী প্রচারণায় মগ্ন রয়েছেন। তিনি কিন্তু এবার এই বিতর্কিত নেতার বিরুদ্ধে তার স্ত্রী সুলতানা বেগমের দায়েরকৃত একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় টনক নড়ার মতো কান্ডস্থাপন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে বিভিন্ন দুনীতির কর্মকান্ডকে ঘিরে দূর্নীতিদমন কমিশনে আরেকটি মামলা হওয়ার আশঙ্কা শোনা যাচ্ছে।

 

এদিকে বন্দরের সুধিমহল বলছে, মাকসুদ নির্বাচনকে ঘিরে নানা নাটকীয়তা ও চতুরতা করেছে তা হলো উনি চিন্তা করেছেন তার বিরুদ্ধে ডজন-ডজন অভিযোগ রয়েছে সেই ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচন নিয়ে মাকসুদের কোন সমস্যা হয় যার কারণে তিনি ব্যাক আপ হিসেবে উনার বিতর্কিত-সন্ত্রাসী ছেলে মাহমুদুল ইসলাম শুভকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন।

 

এদিকে মাকসুদ হোসেনের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত এবং যিনি বিভিন্ন সময় তার নিয়ম-অনিয়মে মাথার ছাতা হয় তাকে রক্ষা করতেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান ও এখন এই মাকসুদের পক্ষে মাঠে নেই। কিন্তু মাকসুদ তার সাথে থাকা বিভিন্ন নেতাকর্মীদের আশ্বাস দিয়ে আসছেন আমাকে সেলিম ভাই দাঁড় করিয়েছেন আমি তার প্রার্থী। সামনে এই এমপির পরিচয়ে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডসহ স্ত্রীর দায়েরকৃত নারী-নির্যাতন মামলায় ও সামনে আসতে যাওয়া আরো ঝড় অতিক্রম করে এই রাজাকার পুত্র মাকসুদ নির্বাচন করে কতটুকু জয়লাভ হতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।

 

এদিকে মাকসুদের স্ত্রী সুলতানা বেগমের দায়েরকৃত মামলার এজাহারে ঘটনার বর্ণনা থেকে জানা যায়, গত রবিবার (২১ এপ্রিল) মাকসুদ চেয়ারম্যান কয়েকজন বন্ধুদের সাথে নিয়ে রাত ১১ টায় এই মামলার বাদীনি ও তার স্ত্রী সুলতানা বেগমের পিত্রালয়ে আসে এবং ২০২২ সালের করা একটি যৌতুক মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ সময় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কথা কাটাকাটি হয়।

 

চেয়ারম্যান মাকসুদ তার স্ত্রীকে বলেন, ওয়ারিসি সম্পত্তি এখন বিক্রয় না করিলে পরে আর ওয়ারিস নেওয়া যাইবে না, তাই সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া মাকসুদ চেয়ারম্যানের হাতে দিলে তা ভাল ব্যবসায় কাজে লাগাবো এবং তাকে (এই মামলার বাদীনিকে) তুলে নিয়ে পূর্ণ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাখিবেন ইত্যাদি বলে ফুসলাতে থাকে। এর সাথে পূর্বের যৌতুকের মামলাটি তুলে ফেললেই সুলতানা বেগম ও তাদের কন্যাকে নিয়ে সংসার করবেন বলে আশ্বাস দেন।

 

এ সময় মামলা তুলে নেয়ার জন্য বুঝিয়ে ব্যর্থ হয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেন মাকসুদ চেয়ারম্যান। যৌতুক মামলা তুলে না নিলে খুন করে ফেলবেন বলে স্ত্রীর দিকে তেড়ে আসেন তিনি। এ ঘটনায় তাদের মেয়ে শ্রাবন্তী বাধা দিলে লাথি দিয়ে সড়িয়ে দেন এবং স্ত্রীকে মারপিট শুরু করেন। মাকসুদ চেয়ারম্যান তার স্ত্রীকে হত্যার উদ্দ্যেশে গলায় পাড়া দিয়ে ধরলে আবারও মা’কে বাঁচাতে আসেন তাদের মেয়ে শ্রাবন্তী। পরবর্তীতে ২ জনকেই প্রহার করে এবং ‘যৌতুক দিবি না আবার মামলা করবি, মেরে মাটিতে পুতে ফেলবো’ বলে হুমকি প্রদান করেন মাকসুদ চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় মাকসুদ চেয়ারম্যান তার স্ত্রী ও ৪ কন্যা সন্তানকে নির্যাতন করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

এর আগে গত ৩০ মার্চ বন্দরের ধামগড়ে অনুষ্ঠিত একটি মত বিনিময় সভায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সেলিম ওসমান, সরাসরি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদকে রাজাকার বলেন। আর নির্বাচন নিয়ে তার টাকা উড়ানোর ঘটনা বর্ননা দিয়ে শেষ পর্যন্ত বলে যান। আমি নিষেধ করলাম, আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিন্তু আপনাকে আমার মৃত্যু হলেও ছাড়বে না।

 

সেলিম ওসমানের এমন জ্বালাময়ী বক্তব্যকে পা ঠেলে দিয়ে তাকে বন্দরের মানুষের চোখে ছোট করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবার তিনি একের পর এক ঝড়ের কবলে পরছেন। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, মাকসুদ চেয়ারম্যান তার ছেলে শুভ'র গুন্ডাবাহিনীকে ব্যবহারসহ অঢেল টাকা খরচ করে ও শেষ পর্যন্ত উপজেলার চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসতে মরিহা হয়ে আছেন বিতর্কিত রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেন। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর