রোববার   ০৫ মে ২০২৪   বৈশাখ ২২ ১৪৩১

কাঁচপুর থেকে মেঘনা অরক্ষিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

সোনারগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২৪  


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলাকা এখন পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে ট্রাফিক আইন না মেনে তিন চাকার নিষিদ্ধ যান চালকরা মাসোহারায় পুলিশ নিয়ন্ত্রন করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবাধে চালাচ্ছে ইজিবাইক, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, নসিমন ও বটবটিসহ বিভিন্ন যান।

 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে মেঘনা পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষের চলাচল। মহাসড়কে নিয়ন্ত্রনহীন ও নিষিদ্ধ তিন চাকার এসব যান ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবাধে চলাচলের ফলে কয়েক দিন পর পর ঘটছে মারাত্বক সব দূর্ঘটনা।

 

 

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিগত এক বছরে কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত সড়ক দূর্ঘটনায় ২৪ জনের প্রানহানির ঘটনা ঘটেছে। মারাত্বক ভাবে আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ।

 

 

সর্বশেষ চলতি মাসের ২০ এপ্রিল শনিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওডালা এলাকায় যাত্রীবাহি বাস চাপায় সুরেস ডাকুয়া (৩৫) ও লোকেশ ডাকুয়া (৯) নামে বাবা ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এসময় মারাত্বভাবে আহত হয়েছে সুরেস ডাকুয়ার স্ত্রী নিপু রায় (৩০)। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিপু রায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 


সরেজমিন গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কের কাঁচপুর, মদনপুর, কেওডালা, দড়িকান্দি, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ও মেঘনা সেতু পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে অবস্থান করে দেখা যায় পুরো সড়ক অরক্ষিত। এমহাসড়কে ইজিবাইক, অটোরিকশা, নসিমন ও বটবটিসহ উল্টোপথে চলছে বিভিন্ন যানবাহন। মানা হচ্ছে না কোনো ধরনের ট্রাফিক আইন।

 

 

সড়কে অবস্থানরত ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে নিয়োজিত কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের সামনেই দিনভর উল্টোপথে চলাচল করছে ফিটনেসবিহীন ও সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ যান। হরহামেসা উল্টোপথে তিন চাকার যান চলাচলের কারনে কাঁচপুর থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত প্রায় সময় ঘটছে দূর্ঘটনা।

 

 

এছাড়া মহাসড়কের মদনপুর এলাকায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড়ে আসা পন্যবাহী ট্রাক ও বন্দরগামী অনেক যানবাহন মদনপুর-জয়দেবপুর (ঢাকা বাইপাস) সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করে।

 

 

উল্টোপথে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচলের কারণে অনেক সময় সড়কের দুপাশে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সামনেই সড়কের ওপর রীতিমত স্ট্যান্ড বানিয়ে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন চলাচল করছে। সড়কে উল্টোপথে নিষিদ্ধ যান চলাচলের কারণে প্রায় প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হয়।

 


হাইওয়ে পুলিশের একজন সদস্য জানান, মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল কোনো ভাবেই বন্ধ রাখা যাচ্ছেনা। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতাকর্মী ও কতিপয় অসাধু ব্যক্তি হয়তো চাঁদা নিয়ে মহাসড়কে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন চলাচল করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এছাড়া মানুষ সচেতন না হওয়ায় মহাসড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইজিবাইক ও অটোরিকশায় চলাচল করায় প্রায় সময় ঘটছে মারাত্বক সব দূর্ঘটনা।

 


সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী মোটরযান শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক কবির হোসেন জানান, মহাসড়কের কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার অটোরিকশা, ইজিবাইক ও বটবটি চলাচল করে। শুনেছি পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন চালকরা মহাসড়ক ব্যবহার করার সুযোগ পায়।

 


ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সেনমার্টিন পরিবহনের চালক মোক্তার হোসেন বলেন, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম মহাসড়কে কিভাবে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করে তা সবাই ভালো করেই জানে। মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত দূর্ঘটনার প্রধান কারণ এসব নিষিদ্ধ যানবাহন। এসব যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রনহীন ও বেশির ভাগ সময়েই উল্টোপথে চলাচল করায় মারাত্বক সব দূর্ঘটনা এসড়কে ঘটে।

 

 
হাইওয়ে থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলাকায় গত এক বছরে ৪৪ টি সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৪ জনের প্রানহানি ও অঙ্গহানীসহ অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

 


কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রেজাউল হক জানান, মাসোহারা দিয়ে মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল করে তথ্যটি সঠিক নয়। যদি কোন ব্যক্তি হাইওয়ে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করে সুনিদিষ্ট তথ্য পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

 

এছাড়া যানজট নিরসন ও দূর্ঘটনা প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন টহলরত রয়েছে যাতে করে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল না করতে পারে। তার পরেও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিষিদ্ধ কিছু যান হয়তো চলাচল করে। আমরা এসব নিষিদ্ধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।    এন. হুসেইন রনী  /জেসি